বিএনপির কূটনৈতিক কোরের সদস্য ও বিদেশ নীতির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
বারাক ওবামা সরকারের শেষের দিকে গত বছর বাংলাদেশ সফরে আসেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি।
সূত্রমতে, বর্তমান সংবিধানের আলোকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়ার বিষয়ে জন কেরির পরামর্শ চায় বিএনপি। এরই প্রেক্ষিতে জন কেরি সাফ জানিয়ে দেন- যে কোনো মূল্যে বিএনপিকে নির্বাচনে যেতে হবে।
এ ক্ষেত্রে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচনের সময় প্রশাসনের নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করার ব্যাপারে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে সঙ্গে নিয়ে সরকারকে বোঝানোর চেষ্টা করবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
সম্প্রতি খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার গুলশান কাযালয়ে দীর্ঘ বৈঠক করেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া স্টিফেন ব্লুম বার্নিকাট। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দেখা করে চলমান রাজনৈতিক পরিবেশ অনুধাবন করা একজন রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমার দায়িত্ব। এ জন্যই খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করলাম।
কূটনৈতিক সূত্রমতে, সাংবাদিকদের সামনে এমন বক্তব্য দিলেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে বার্নিকাটের মূল এজেন্ডা ছিলো আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ধারা অব্যহত রাখা এবং সংসদে জনপ্রনিধিত্ব বাড়াতে কোনো শর্ত ও অযুহাত ছাড়াই আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে বিএনপিকে প্রস্তুতি নিতে বলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত।
এ ছাড়া ব্রিটিশ পার্লামেন্ট, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও কানাডিয়ান পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদলসহ সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে আসা বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার প্রতিনিধিরা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় বিএনপিকে একই বার্তা দিয়ে গেছে।
তবে বিএনপির কূটনৈতিক কোরের সূত্রমতে, বাংলাদেশে আসা বিদেশি প্রতিনিধি দলের প্রধান এজেন্ডা থাকে বাংলাদেশের মানবাধিকার ও পোশাক খাতের শ্রমিক অধিকারের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় সাধারণত এ দু’টি বিষয় নিয়েই কথা বলেন ব্রিটিশ পার্লামেন্ট, কানাডিয়ান পার্লামেন্ট ও ইউরোপিয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। রাজনীতির বিষয় নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে রাজনৈতিক আলোচনা তুললে আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পরামর্শ দেন বিদেশি ‘বন্ধুরা’।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউরোপিয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে খালেদা জিয়ার বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. আসাদুজ্জামান রিপন বাংলানিউজকে বলেন, বিদেশিদের সঙ্গে বৈঠকে মুখ্য বিষয় থাকে বাংলাদেশের হিউম্যান রাইটস, লেবার ল ও গার্মেন্টস শিল্পের লেবার রাইটস। রাজনৈতিক আলোচনা খুব একটা হয় না।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ইউরোপিয় ইউনিয়ন, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদল বা কানাডিয়ান পার্লামেন্টের প্রতিনিধিদল খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠককালে হিউম্যান রাইটস ও লেবার ল’কে প্রাধান্য দিলেও বিএনপির বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও আরব বিশ্বের দেশগুলো নির্বাচনকেই প্রধান এজেন্ডা হিসেব নেয়।
বিএনপির অস্তিত্ব রক্ষা এবং বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে সুসংহত করতে এসব দেশের প্রতিনিধি ও কূটনীতিকরা আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চায়। ক্ষমতায় যাওয়ার চেয়ে এই মুহূর্তে বিএনপিকে সংসদে পাঠানোই বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর মূল লক্ষ্য।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলানিউজকে বলেন, গণতন্ত্রের স্বার্থেই বন্ধু রাষ্ট্রগুলো চায় বিএনপি নির্বাচনে যাক। আমরাও নির্বাচনে যেতে চাই। কিন্তু সেই পরিবেশ সরকারকেই তৈরি করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১, ২০১৭
এজেড/জেডএম