ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

‘আসল’ বিএনপির ‘নকল’ নেতা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১২ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৭
‘আসল’ বিএনপির ‘নকল’ নেতা কামরুল হাসান নাসিম। ফাইল ফটো

ঢাকা: ‘দেশে নেতৃত্ব’র সংকট চলছে। এই মুহূর্তে প্রয়োজন যোগ্য নেতৃত্ব। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছেন না। সবাই আছেন যার যার চিন্তায়। জাতীয় নেতারা হয়ে গেছেন আত্মকেন্দ্রিক। স্বদেশ চিন্তা ও জাতির মুক্তি নিয়ে-তাদের কোনো ভাবনা নেই।’

২০১৩ সালের শুরুর দিকে চোখে পড়ে রাজধানীর অলি-গলির দেওয়ালে সাঁটানো পোস্টারে এমন হামবড়া টাইপের বক্তব্য! সঙ্গে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের ছবি!

পাশের একটা বক্স ফাঁকা। সেটির ভেতরে প্রশ্নবোধক চিহ্ন।

অর্থাৎ মহান নেতা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু ও জিয়াউর রহমানের পর কে হচ্ছেন এ ভূ-খণ্ডের নেতা বা ত্রাতা।

এই নেতা বা ত্রাতার আত্মপ্রকাশ ঘটতে বেশি দেরি হলো না। পোস্টারের নির্দিষ্ট জায়গায় মহান তিন নেতার ছবির চেয়ে বড় আকৃতির একটি ছবি। প্রায় চার বছর আগে দেখা ওই ছবিটিকে এই মুহূর্তে হুবহু বর্ণনায় বাঁধা মুশকিল! তবে নামটি এখনো ঠিক ঠিক মনে আছে-‘কামরুল হাসান নাসিম’!

কোথা থেকে এলেন তিনি? ২০১১ অথবা ২০১২ সাল হবে! ঢাকার মহানগর নাট্যমঞ্চে ‘গড়বো বাংলাদেশ’র একটি অনুষ্ঠানেও তাকে একবার দেখা গিয়েছিলো। বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমানের সহধর্মিনী শাহেদা ওবায়েদের সংগঠন ‘গড়বো বাংলাদেশ’র কামরুল হাসান নাসিম ছিলেন একজন উদ্যোক্তা।

কিন্তু রাজনীতি চর্চার মাঠে যেসব ভুইফোঁড় সংগঠন ‘দোকান’ নামে পরিচিতি পেয়েছে সেরকম একটি সংগঠন ‘গড়বো বাংলাদেশ’র একজন উদ্যোক্তা হঠাৎ করে জাতির ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হলেন? মহান নেতাদের ছবির পাশে একটি বক্স শূন্য রেখে সেটি পূরণ করার জন্য নিজেকেই সর্বাধিক যোগ্য নেতা মনে করলেন!

হতেই পারে! সব সম্ভবের দেশে ঢাকার দেওয়ালে কয়েকটা পোস্টার সাঁটিয়ে যে কেউ হয়ে যেতে পারেন ভাসানী বা বঙ্গবন্ধু মাপের স্বঘোষিত নেতা। সুতরাং অখ্যাত একজন কামরুল ইসলাম নাসিম দুয়েকটি প্রোগ্রামে বক্তব্য দিয়ে, দেওয়ালে কিছু পোস্টার ট‍াঙিয়ে রাতারাতি নেতা হয়ে যাবেন-তাতে বাঁধা কোথায়?

কাহিনী এখানেই শেষ নয়। অনির্দিষ্টকালের অবরোধ ঘোষণা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি গুলশান কার্য়ালয়ে অবস্থান নেন। এর চারদিন পর ৯ জানুয়ারি নিজেকে ‘আসল’ বিএনপির উদ্যোক্তা দাবি করে বিএনপি পুনর্গঠনের ঘোষণা দেন কামরুল হাসান নাসিম। হুংকার দেন নয়াপল্টন কার্যালয় দখলের!কামরুল হাসান নাসিম।  ফাইল ফটো

এর পর ২০১৫ সালের ২৬ নভেম্বর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জাতীয়তাবাদী জনতার নিম্ন আদালত বসান। প্রতীকী সেই আদালতে নিজে অবতীর্ণ হন বাদীর ভূমিকায়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ২ জানুয়ারি, ১৭ জানুয়ারি, ১৭ মে এবং ৫ সেপ্টেম্বর মোট চারবার দলীয় বিপ্লবের মহড়া চালান কামরুল হাসান নাসিম।

সর্বশেষ মহড়ার ডাক দিয়েছেন বুধবার (১৭ মে)। এদিন পল্টন, মতিঝিল ও শাহবাগ থানায় হরতাল পালন করবেন কামরুল হাসান নাসিমের অনুসারিরা। এটিকে তিনি দলের আখেরি মহড়া হিসেবে দেখছেন।  

আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা প্রয়োজন। ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে গত আড়াই বছরে অসংখ্যবার নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখল করতে গেছেন কামরুল ইসলাম নাসিমের অনুসারিরা। কিন্তু প্রতিবারই ধাওয়া খেয়ে ফিরে এসেছেন তারা। কারো কারো কপালে জুটেছে উত্তম-মাধ্যম। পরম সৌভাগ্যবান কামরুল ইসলাম নাসিম একবারও উত্তম-মাধ্যম খান নি!

কে এই কামরুল হাসান নাসিম? নিজের লেখা একটা বইয়ের ফ্ল্যাপে নিজেকে সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তি হিসেবে দাবি করলেও কামরুল হাসান নাসিম সম্পর্কে কোথাও তেমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। বইয়ের ফ্ল্যাপে নিজেকে একাধারে ঊচ্চ মার্গের লেখক, কবি, কলামিস্ট, সাহিত্যিক, নির্মাতা, দার্শনিক এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির প্রশ্নে বিপ্লবী সত্ত্বা হিসেবে পরিচয় দেওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি।

নিজেই বলেছেন, ‘আমার অঙ্গন এখন মোট সতেরোটি। তার মধ্যে সাহিত্য সত্ত্বা সব চেয়ে শক্তিশালী। আমার প্রকাশিতব্য উপন্যাস’র গ্রহণযোগ্য আয়ুকাল দুই শত বছরের মতো হবে’।

অবশ্য এই ‘শক্তিধর’ লেখকের একমাত্র বই ‘নেতৃত্ব’র প্রকাশক গত অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এ প্রতিবেদককে আক্ষেপ করে বলেছিলেন-জীবনে যত ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তার মধ্যে কামরুল হাসান নাসিম’র ‘নেতৃত্ব’ বই প্রকাশ অন্যতম।

বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকে কামরুল হাসান নাসিম সম্পর্কে শুধু এতটুকু জানা যায়- ১৯৭৭ সালে যশোর জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি ‘জননেতা.কম’ নামে একটা অনলাইন নিউজপোর্টাল চালাচ্ছেন। সেই সুবাদে নিজেকে সাংবাদিক পরিচয় দিতেও গর্ববোধ করেন তিনি। থাকেন রাজধানীর বারিধারা ডিওএইচএস-এ।

তবে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, স্বঘোষিত এই দার্শনিক, কবি, কলামিস্ট, ঊচ্চ মার্গের লেখক, বিপ্লবী সত্ত্বা কামরুল হাসান নাসিম একটা এনজিও’র সঙ্গেও যুক্ত আছেন। সেখান থেকে আসে তার অর্থের যোগান। যেটি দিয়ে তিনি মাঝে মধ্যেই ‘দলীয় বিপ্লবের’ মহড়া দেন। ফাইভস্টার মানের হোটেলে আয়োজন করেন নিজের বইয়ের প্রকাশনা উৎসব।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৫০ ঘণ্টা, মে ১৬, ২০১৭
এজেড/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।