এ পরিচয়টাই মূলত মিজানুর রহমান মিনুকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তারকা খ্যাতি এনে দেয়। এক সময় ঢাকায় মেয়র মোহাম্মদ হানিফ, সাদেক হোসেন খোকা এবং চট্টগ্রামের মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে রাজশাহীর মেয়র হিসেবে মিজানুর রহমান মিনুর নামও উচ্চারিত হতো।
মাত্র ৩৩ বছর বয়সে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়ে ‘ইয়াংগেস্ট মেয়র অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ খেতাব পান মিজানুর রহমান মিনু। ২০০৪ সালে তিনি মেয়র থাকাকালে ‘লন্ডন স্কুল অব ইকোননোমিকস’ রাজশাহী শহরকে ‘হ্যাপি সিটি অব দ্য ওয়ার্ল্ড’ অ্যাওয়ার্ড দেয়।
তারপরও রাজশাহী সিটি করপোরেশনের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য আওয়ামী লীগের সাবেক মেয়র এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের নাম যতো জোরেসোরে উচ্চারিত হয়, মিজানুর রহমান মিনুর নাম ততোটা উচ্চারিত হয় না।
কিন্তু কেন? মিজানুর রহমান মিনুর দাবি- উন্নয়নের যে চিত্র এখন দৃশ্যমান, এর বেশিরভাগ প্রকল্পই তার আমলে নেওয়া। আর কাজগুলো শেষ হয় খায়রুজ্জামান লিটনের আমলে! সে কারণেই রাজশাহী সিটি করপোরেশন আধুনিকায়নের ক্রেডিট পুরোটাই যায় লিটনের থলিতে! উপেক্ষিত থাকে মিনুর অবদান।
এসব নিয়ে শনিবার (১২ আগস্ট) রাজশাহীর পদ্মা আবাসিক এলাকার নিজ বাসায় খোলা-মেলা কথা বলেন মিজানুর রহমান মিনু।
তিনি বলেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ড্রেনেজ মাস্টার প্ল্যান আমার আমলে করা। আজ দুই ঘণ্টার বৃষ্টিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগর পানিতে তলিয়ে যায়। রাজশাহী মহানগর দুই দিনের বৃষ্টিতেও ডুববে না। সেভাবেই এ শহরটাকে আমি গড়ে তুলেছি।
এ ছাড়া প্রশস্ত রাস্তা, বাইপাস রাস্তা, সিটি রাস্তা, রাজশাহী রেলগেট থেকে পুরনো সিটি সংযোগ রাস্তা, রাজশাহী রেল স্টেশনে নতুন ভবন, নগর সবুজায়ন, টরন্টোর আদলে নগর ভবন নির্মাণ, জিয়া শিশুপার্কসহ প্রায় ১৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমার আমলে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
রাজশাহী মহানগরের আধুনিকায়ন তার আমলেই হয়েছে উল্লেখ করে সাবেক এ মেয়র বলেন, মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী এখানে আমরাই প্রথম আবাসিক এলাকা গড়ে তুলি। রাজশাহী প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ডায়াবেটিক হাসপাতাল, মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, নার্সিং কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আমরাই প্রতিষ্ঠা করেছি।
রাজশাহী সদরের বর্তমান সংসদ সদস্যকে ব্যর্থ আখ্যা দিয়ে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা এমন একজন সংসদ সদস্য পেয়েছি যিনি গত ৯ বছরে কিছু করে দেখাতে পারেননি। গতকাল একটা স্কুলের দোতলা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের সময় বলছেন আমরা যৌথভাবে আগামীতে রাজশাহীকে আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তুলব। তাহলে এ ৯ বছর তারা কী করেছেন?
সেদিন দেখলাম একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম মহানগরের জন্য ৬ হাজার ৯শ’ কোটি টাকার ৯টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। অথচ রাজশাহীর ভাগে শূন্য।
রাজশাহীর বর্তমান মেয়রকে কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে মিনু বলেন, প্রথম দুই বছর জেলে রাখা হয়েছে। পরের দুই বছর বরখাস্ত করা হয়েছে। এই জেলে রাখা ও কাজ করতে না দেওয়ায় তার প্রতি মানুষের প্রচণ্ড মায়া-মমতা জন্ম নিয়েছে। ফলে গতবার যেভাবে তিনি বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছেন, এবারও বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হবেন।
খায়রুজ্জামান লিটনের আমলে সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন সম্পর্কে মিনু বলেন, লিটন যখন মেয়র ছিলেন, তখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিল। অ্যাডভান্টেজ তো পাবেনই। আমি যখন মেয়র ছিলাম, আমার দল দুই টার্মে ক্ষমতায় ছিল। এক টার্মে আওয়ামী লীগ ছিল। আমার দলের দুই টার্মে রাজশাহীর যে উন্নয়ন হয়েছে সেটাকে বলা হয় রাজশাহী উন্নয়নের স্বর্ণযুগ। আমাদের কিছু প্রকল্প লিটনের সময় শেষ হয়েছে।
যেমন ড্রেনেজ প্রকল্প, বিভিন্ন রাস্তার প্রকল্প, বিভিন্ন পার্কের প্রকল্প। এগুলো আমার সময়ে নেওয়া। আমাদের সময় এগুলোর অর্থ বরাদ্দ হয়েছে। ধরুন যমুনা ব্রিজ। এটা খালেদা জিয়ার আমালে সৃষ্টি। আওয়ামী লীগের আমলে উদ্বোধন করে তাদের নেতার নামে ব্রিজটার নাম দিয়েছে। তাই বলে কি জনগণ কখনো বিশ্বাস করবে এটা আওয়ামী লীগের অবদান?
রাজশাহীকে এ পর্যায়ে নিয়ে আসার পেছনে সব অবদান বিএনপি এবং খালেদা জিয়ার- এমন দাবি করে মিনু বলেন- ১৯৯৫ সালে রাজশাহী একটা অন্ধকার, দুর্গন্ধযুক্ত শহর ছিল। পরবর্তীতে আমাদের কর্ম প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে এ শহরকে বাসযোগ্য করা হয়। এই মুহূর্তে রাজশাহী শহর বাংলাদেশের সব চেয়ে আধুনিক শহর।
তিনি বলেন, আমাদের অনেক প্রকল্প ছিল, যেগুলো খায়রুজ্জামান লিটনের আমলে সম্পন্ন হয়। যেমন- সিটি বিউটিফিকেশন, ড্রেনেজ প্রকল্প। তবে লিটনের আমলে রাণীবাজার থেকে সাগরতলা পযর্ন্ত সড়ক ও শহীদ এইচ এম কামরুজ্জামান পার্কটি নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি ২৮টা পার্ক, পদ্মার পাড়ে বাঁধ নির্মাণ ও সৌন্দর্য বর্ধন, শহরে লাইটিং ও বিউটিফিকেশন আমার সময়ে করা। এ ছাড়া রেল স্টেশন, সিটি ভবন, ১৭টা কবরস্থান, একটা শ্মশান ও ১৮টি ঈদের মাঠ আমার আমলেই নির্মাণ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০১৭
এজেড/জেডএম