রোববার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। সমাবেশের আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।
খালেদা জিয়া বলেন, দেশে কোনো প্রতিষ্ঠান ঠিকভাবে চলছে না। সবাই দেখেছে, কিভাবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলার কারণে প্রধান বিচারপতিকে (সুরেন্দ্র কুমার সিনহা) সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সরকারের অপকর্ম প্রকাশ করেছিলেন, তিনি ১৫৪ জন অনির্বাচিত সংসদ সদস্যের বিষয়ে একটি পর্যবেক্ষণ দিয়েছিলেন। সংসদকে অকার্যকর ঘোষণা করেছিলেন। সেজন্য তাকে দেশ থেকে বিদেশে পাঠানো হয়েছে। তিনি পদত্যাগপত্র দেননি। কিন্তু জোর করে তার পদত্যাগপত্র নেওয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধাদের ভয় পায় দাবি করে বিএনপি প্রধান বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের কথা শুনলেই তাদের মাথা খারাপ হয়ে যায়। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের ভয় পায়। আজকে মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ করতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তারা মুখে শুধু মুক্তিযুদ্ধ-মুক্তিযুদ্ধ করে। অথচ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ করতে দেয় না। এই যে মুক্তিযোদ্ধারা, এরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। এদের প্রত্যেককে সম্মান করা উচিত।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীমকে বঙ্গভবনের দাওয়াতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি অভিযোগ করে খালেদা বলেন, মেজর জেনারেল ইব্রাহীম একজন রণাঙ্গণের মুক্তিযোদ্ধা। তাকে বঙ্গভবনে দাওয়াত দেওয়ার পরও সেখানে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। ১৬ ডিসেম্বর আর ২৬ মার্চের অনুষ্ঠানে আমরা দাওয়াত পাই না। এই হলো মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের আচরণ।
স্বাধীনতার সুফল কেবল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের লোকজন ভোগ করছে অভিযোগ করে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, কাউকে কথা বলতে দেওয়া হয় না। সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হয় না। এর নাম কি গণতন্ত্র? এটাই কি স্বাধীনতার সুফল। আসলে স্বাধীনতার সুফল কেবল আওয়ামী লীগ ও তাদের লোকজন ভোগ করছে। তারা লুটপাট করছে। তারা নিজেরা সভা-সমাবেশ করে ভোট চাইছে। কিন্তু অন্যদের তা করতে দিচ্ছে না। এভাবে তো চলতে পারে না।
খালেদা জিয়া বলেন, স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে আওয়ামী লীগ সব সময় মিথ্যাচার করে। তারা সত্য গোপন করতে চায়। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এটা সবাই জানে। এমনকি বাংলাদেশের বাইরের সবাইও জানে। আমাদের দেশ এমনিতেই স্বাধীন হয়ে যায়নি। অনেক রক্ত দিতে হয়েছে। অনেক মা-বোনের সম্ভ্রমহানি হয়েছে।
পাকিস্তানিরা গণতন্ত্র কেড়ে নিয়েছিল বলেই তাদের সঙ্গে যুদ্ধ হয়েছিল উল্লেখ করে বিএনপি প্রধান বলেন, আজকে একই অবস্থা বিরাজ করছে দেশে। জনগণ ভোট দিতে পারে না। তাদের ভোট দিতে দেওয়া হয় না। আওয়ামী লীগ ও তাদের অনুসারী দল ছাড়া দেশে আর যত রাজনৈতিক দল আছে, তারা সবাই অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। সেজন্য দরকার একটি নিরপেক্ষ সরকার। (প্রধানমন্ত্রী) শেখ হাসিনার অধীনে কখনো নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। জনগণ ভোট দিতে পারবে না। তারা শুধু সংবিধান সংবিধান করে। সংবিধান তো তারা লঙ্ঘণ করেছে। ১৫৪ জন অনির্বাচিতদের দিয়ে সংসদ চালাচ্ছে, এটাই তো সংবিধান লঙ্ঘন। তারা বলে নির্বাচিত সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না। তাহলে তারাও তো অনির্বাচিত, তাদের অধীনে কিভাবে নির্বাচন হবে?
সরকারের বিরুদ্ধে ‘একটার পর একটা অপকর্ম’র অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, তারা খুন-গুম করছে। সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। তাদের লক্ষ্য একটাই, সেটা হলো বাকশাল কায়েম করা। এর বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাকে গুম করা হয়। তারা অনেক লোককে ধরে নিয়ে গেছে। তারা যখন আবার ফিরে আসে, তখন ভয়ে কোনো কথা বলে না। তাদের এমনভাবে ভয় দিয়ে দেওয়া হয়, যেন কিছু না বলে।
সচিবালয়ে রাতের অন্ধকারে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে দাবি করে বিএনপি প্রধান বলেন, পুলিশেও সেরকম করা হয়েছে। পুলিশের মধ্যে সিনিয়র-জুনিয়র মানা হয় না। তাদের লোকদের পদোন্নতি দেওয়া হয়। যারা ভাল অফিসার, তাদের ভাল পোস্টিং দেওয়া হয় না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণ দিশেহারা দাবি করে খালেদা জিয়া বলেন, চালের কেজি তো দশ টাকা থাকার কথা ছিল। কিন্তু এখন চালের কেজি ৭০ টাকা। এর চেয়েও বেশি আছে। ডাল ১০০ টাকার ওপরে। পেঁয়াজ ১২০ টাকা। কোনো মানুষের কিছু কিনে খাওয়ার উপায় নেই। ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। কেন এই অবস্থা? কারা এজন্য দায়ী? আওয়ামী লীগের লোকেরাই দায়ী। এই সরকারই দায়ী। ঘাটে-ঘাটে আওয়ামী লীগের লোকদের টাকা দিতে হয়। ফলে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়। এদিকে সরকারের কোনো নজর নাই। শুধু গালাগালি দেয়। চুরি করে তারা, আর দোষ দেয় আমাদের। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে, আবার প্রতিবেশী দেশ ভারতও আশ্রয় দিয়ে সাহায্য করেছে। তাদেরও ধন্যবাদ জানাই আশ্রয় দেয়ার জন্য। আমরা চাই সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে থাকতে, দেশের উন্নতি করতে। কোনো ভেদাভেদ রাখতে চাই না। জনগণের ওপর ছেড়ে দিতে চাই। তারা যাকে সম্মান জানাবে তারাই দেশের দায়িত্বে আসবে। আমরা বলেছি আপনারা যদি এতো ভাল কাজ করে থাকেন, তাহলে জনগণের ওপর ছেড়ে দেন। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি তো আপনারাই করেছিলেন। ’৯৬ সালে আমরা অল্প ব্যবধানে হেরেছিলাম। আমরা সেই নির্বাচন মেনে নিয়েছিলাম। ’৯৬ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পর জনগণ তাদের চিনতে পেরেছিল। তাই ২০০১ সালে আমরা দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে সরকার গঠন করেছিলাম।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাত। অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদ, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, অ্যাডভোকেট আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক কর্নেল (অব.) জয়নাল আবেদিন প্রমুখ।
এর আগে, বিকেল সাড়ে ৪টায় মহানগর নাট্যমঞ্চের সমাবেশস্থলে এসে উপস্থিত হন খালেদা জিয়া। এসময় দলীয় নেতাকর্মীরা স্লোগান দিয়ে তাকে স্বাগত জানান।
দুপুরের পর থেকেই মহানগর নাট্যমঞ্চ এলাকায় আসতে থাকেন দলীয় নেতাকর্মীরা। তবে সমাবেশ হয় নাট্যমঞ্চের ভেতরে। বাইরেও কয়েক হাজার নেতাকর্মী জড়ো হন। এটি মুক্তিযোদ্ধাদের সমাবেশ হলেও উপস্থিতি বেশি দেখা যায় বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৭
এমএইচ/এইচএ
** স্বাধীনতার সুফল কেবল আ’লীগের লোকেরা ভোগ করছে
** মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে খালেদা