ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ চাইছে ‘সংবিধান’ অনুযায়ী সংসদ বহাল রেখে নির্বাচন করতে।
অপরদিকে, আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি বরাবরই দাবি জানিয়ে আসছে, বিলুপ্ত হওয়া তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে এনে সহায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন পরিচালনা করতে।
আগামী নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে। প্রধান এই দুটি দল নিজেদের অবস্থানে অনড়। কেউ কাউকে এোকচুল ছাড় দিতে রাজি নয়।
সরকার তার অবস্থান পরিবর্তন না করলে বিএনপি কি করবে? ২০১৪ সালের মতোই কি নির্বাচন বয়কট ও বানচালের যুদ্ধংদেহী চেষ্টায় নামবে?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির একাধিক নেতা বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, এখনো পর্যন্ত দলটি তৃণমূল নেতাকর্মীদের সংঘবদ্ধ করতেই বেশি জোর দিচ্ছে। একইসঙ্গে দেশের জনগণকে আগামী দিনের আন্দোলনে সম্পৃক্তকরণে কাজ করছে দলটি। কারণ, জনগণই সকল শক্তির উৎস। মানে তারা জনগণকে সংগঠিত করে সরকারকে দাবি মানায় বাধ্য করার দিকেই যাবে তারা। এজন্য তারা ব্যাপক আন্দোলনে নামার চিন্তাভাবনা করছে। তবে এখনো প্রকাশ্যে ঝেড়ে কাশতে বা স্পষ্ট করে কিছু বলতে নারাজ তারা।
বিএনপি নেতারা বলছেন, আগামী দিনে বিএনপির কর্মসূচি কি হবে তা সময়মতো জানানো হবে। বিএনপি এখনো সংলাপের পথেই হাঁটছে। সরকার যদি তার অনড় অবস্থান থেকে সরে না আসে, তাহলে জনগণের মনোভাব বুঝে আগামী দিনের কর্মসূচি নির্ধরণ করবে বিএনপি। ‘অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা’—এ নীতিতে প্রয়োজনে আন্দোলনেরও ডাক দেবে। তবে সে আন্দোলন কেমন হবে তা নিয়ে বিএনপির নেতৃত্ব পর্যায়ে বিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা হলেও স্পষ্ট কোনো পদক্ষেপের ছক এখনো আঁটা হয়নি। দলটির নেতাদের সূত্রে এমন ধারণাই পাওয়া গেছে।
তারা জানিয়েছেন, আগামী নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মামলা কোন পর্যায়ে পৌঁছে সেটঁও তাদের দেখার বিষয়। এর উপরও নির্ভর করছে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কেমন হবে। নির্বাচনের প্রস্তুতির পাশাপাশি খালেদা জিয়ার মামলার প্রসঙ্গটিসহ সরকারের সর্বশেষ অবস্থান---এরকম অনেক কিছুর ওপরই নির্ভর করবে বিএনপির পদক্ষেপ কেমন হবে। তবে জনগণক সম্পৃক্ত করে আন্দোলনের প্রস্তুতির কথাটি তারা সক্রিয়ভাবে মাথায় রেখেছে।
বিএনপির ভাষায়, তারা একমাত্র ‘জনগণের ওপর ভরসা’ করলেও বিএনপিকে নিয়ে দেশের জনগণ কিন্তু আছে দোলাচলে।
‘আসলেই কি বিএনপি পারবে দাবি আদায় করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে?—এই প্রশ্ন প্রায় সবার মনে। দলটির পক্ষ থেকে প্রয়োজনে আন্দোলনের কথা বলা হলেও দেশের জনগণ বিএনপির বিগত আন্দোলন দেখে ফেলেছে। আর তাদের আন্দোলনের চেহারাও সুখকর নয়। রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বন্দ্বের ফলে সৃষ্ট আন্দোলনে আবারও কি পেট্রোল বোমার বলি হবে সাধারণ জনগণ? নাকি সুষ্ঠু স্বাভাবিক নির্বাচন হবে! এ নিয়ে জনমনে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন ও উদ্বেগ।
এদিকে পরস্পরবিরোধী দ্বন্দ্বের কারণে ভাঙন ধরেছে বিএনপির অন্যতম শরিক লেবার পার্টি ও জমিয়তে ইসলাম দলে।
অপরদিকে, জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ও শীর্ষ নেতাদের দন্ডের পর অনেকটা আত্মোগোপনে রয়েছে জোটের শরিক দলের বড় নেতারা। যুদ্ধাপরাধী ইস্যুতে তাদেরকে বিএনপি এড়িয়ে চলছে বলেও নানান কথা বাজারে চালু আছে।
সম্প্রতি বর্তমান আওয়ামী সরকারের চার বছরপূর্তিতে এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনকালীন সরকার গঠিত হবে’।
প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্যে পরিপেক্ষিতে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ বক্তব্যে জাতি হতাশ হয়েছে।
এসময় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে দেশ ও জনগণের স্বার্থে সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিদ্যমান সংকট নিরসনের আহবান জানান।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকেওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সংলাপের দরজা চিরদিনের জন্য বন্ধ করতে চাই না, আমরা একটা রাজনৈতিক দল। প্রয়োজনে সংলাপ হতে পারে, তবে আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংলাপের প্রয়োজনীয়তা দেখছি না’।
এসব বক্তব্যের মধ্যে সরকারের স্বৈরাচারী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে বলে মনে করছেন বিএনপি একাধিক সিনিয়র নেতা।
সরকার সংকট তৈরি করেছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে হবে তা তো আর সরকার আর বিএনপির একার বিষয় নয়, এটা বাংলাদেশের জনগনের ব্যাপার। নির্বাচন হতে হবে সকলের ইচ্ছায়। সকলের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা করে সকলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বিএনপি আর আওয়ামী লীগ কে কি চায় এটা তো তা নয়। নিরপেক্ষ নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা। আর চলমান যে সংকট তাতো আওয়ামী লীগ সরকারই তৈরি করছে। আর সেই সংকট তাদেরকেই মোকাবেলা করতে হবে। বিএনপিকে নয়।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপি একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। সরকার চাইলেই তো আর আরেকটা ৫ জানুয়ারির নির্বাচন করতে পারে না। জনগণকে উপেক্ষা করে তারা যদি তা করতে চায়, তো করে দেখুক। দেশের জনগণ তা মেনে নেবে না।
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৩, ২০১৮
এএম/জেএম