ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

দুর্নীতি যেন প্রকাশ না পায়, সেজন্য ৩২ ধারা: রিজভী

পলিটিক্যাল ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৮
দুর্নীতি যেন প্রকাশ না পায়, সেজন্য ৩২ ধারা: রিজভী

ঢাকা: সরকারের দুর্নীতি যেন কেউ প্রকাশ করতে না পারে, সেজন্যই নতুন ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ।

মঙ্গলবার (৩০ জানুয়ারি) রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী এ অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, বহুল আলোচিত নিপীড়নমূলক আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭-সহ পাঁচটি ধারা বিলুপ্ত করে সোমবার (২৯ জানুয়ারি) ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’র খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা।

যা আরও একটি কালো আইন হিসেবে ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।  

আইনটি পাস হলে মানুষের বাকস্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বলে কিছুই থাকবে না দাবি করে রিজভী বলেন, সরকারের দুর্নীতি যেন প্রকাশ না পায় বা কেউ প্রকাশ করতে না পারে, সেজন্যই এ আইনটি করা হয়েছে। অনুমোদন পাওয়া আইনের খসড়ায় কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ সংক্রান্ত ৩২ ধারায় সাংবাদিকরা হয়রানির শিকার হবেন।

খসড়ায় জাতির পিতা, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা, প্রচারণা এসবে মদদ দেওয়ার শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, তাহলে তো মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কোনো গবেষণা বা কথাও বলা যাবে না। আওয়ামী লীগ বা সরকারের লোকজন যা বলবে, তা-ই হবে ইতিহাস। সত্যিকার ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা করে বা এ বিষয়ে কেউ মতামত দিলে তিনি অপরাধী হয়ে যাবেন। মূলত মানুষের সব স্বাধীনতাকে হরণ করতেই এ আইনটি করা হয়েছে।

রিজভী উল্লেখ করেন, অনুমোদন পাওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ‘কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ’ সংক্রান্ত ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ব্যক্তি বেআইনি প্রবেশের মাধ্যমে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থার কোনো ধরনের গোপনীয় বা অতি গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করেন বা সংরক্ষণে সহায়তা করেন, তাহলে কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ বলে গণ্য হবে। এজন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির শাস্তি অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হবে। আর এই অপরাধ যদি একই ব্যক্তি দ্বিতীয়বার করেন বা বারবার করেন, তাহলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করা হলেও প্রস্তাবিত আইনের ৩২ ধারায় হয়রানিমূলক দাবি করে রিজভী বলেন, এ ধারার আওতায় গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে নতুন করে নিপীড়ন ও হয়রানির শিকার হতে হবে। এ আইনে বাকস্বাধীনতাকে অপরাধে পরিণত করা হয়েছে। গণতন্ত্রকামীরাই ক্রিমিনাল হিসেবে অভিহিত হবে। ফিরে যাওয়া হবে মধ্যযুগের অন্ধকারে। এ সম্পর্কে কোনো বিরূপ মন্তব্য করা যাবে না, প্রশ্ন করা যাবে না, সমালোচনা করলে সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড হবে।  

‘যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে ১৭৯১ সালে তারা বলেছিল, সংসদ বাকস্বাধীনতা খর্ব করে কোনো আইন পাস করতে পারবে না। ওটা হল গণতন্ত্র। এটা পনের শ’, ষোল শ’ এবং সতের শ’ সালে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানির বড় বড় রাজারা করতেন। তারা তখন আইন করতেন রাজার ব্যাপারে, তাদের পুত্র, কন্যা, তাদের ড্রেস ও মুকুটের ব্যাপারে- কোনো বিরূপ মন্তব্য করলে শূলে চড়ানো হবে। হাজার হাজার লোককে মধ্যযুগে শূলে চড়ানো হয়েছে। মধ্যযুগ আর গণতন্ত্রের পার্থক্য হল- গণতন্ত্রে সবাই কথা বলতে পারবে। ’

রিজভী নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংসদে পাস করা থেকে বিরত থাকার জোর দাবি জানানোর পাশাপাশি এ আইন প্রণয়নের উদ্যোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।

বিএনপির এ মুখপাত্র নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে বলেন, নির্বাচন কমিশন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী আইন সংস্কারের কাজ নাকি প্রায় চূড়ান্ত করে ফেলেছে। সশস্ত্র বাহিনীকে আইন শৃঙ্খলার বাহিনীর সংজ্ঞায় না রাখা, বিতর্কিত ইভিএম, ডিভিএম ছাড়া আরও কিছু বিতর্কিত বিষয় আরপিওতে রাখা হচ্ছে। রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকদের সুপারিশ আমলে না নিয়ে কমিশন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রদর্শিত পথে হেঁটে যাচ্ছে। সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মতামতকে উপেক্ষা করে নির্বাচন কমিশন যে আইন করতে উদ্যোগী হয়েছে তা নিঃসন্দেহে সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের অন্তরায় হবে।  

বিএনপির পক্ষ থেকে রিজভী নির্বাচন কমিশনকে ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পরিপন্থি’ এই আইন প্রণয়নের উদ্যোগ থেকে সরে আসার জোরালো আহ্বান জানান।

এছাড়া, গাজীপুর ও ফেনীতে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রতিবাদও জানান তিনি। একইসঙ্গে সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলা জাসাসের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সুলতান আহমেদ গত ২৮ জানুযারি ‘গুম’ হয়েছেন দাবি করে তার খোঁজ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৮
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।