খালেদা বলেছেন, আদালত রায় দেওয়ার বহু আগে থেকেই শাসক মহল চিৎকার করে বলে বেড়াচ্ছে, আমার জেল হবে। যেন বিচারক নন, ক্ষমতাসীনরাই রায় ঠিক করে দিচ্ছে।
বুধবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপাসন তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা বলেন। বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায়কে সামনে রেখে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হয়েছে।
খালেদা অভিযোগ করেন, উন্নয়নের নামে শোষণ, বঞ্চনা, লুটপাট ও অত্যাচারের এক দুঃসহ দুঃশাসন জনগণের বুকের ওপর চেপে বসেছে। এই স্বৈরশাসন জনগণকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। তারা মানুষকে আজ ভাতে মারছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মানুষের কাজের সংস্থান নেই।
‘উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয় ৫-১০ গুণ বাড়িয়ে এরা লুটের রাজত্ব কায়েম করেছে। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের নামে বিদ্যুৎ খাতকে বানিয়েছে হরিলুটের কারখানা। শেয়ার বাজার এরা লুটে খেয়েছে। অর্থ লোপাট করে ব্যাংকগুলো করে ফেলেছে দেউলিয়া। হাজার হাজার কোটি টাকার তছরুপকে এরা ‘সামান্য ক্ষতি’ বলে উপহাস করছে। বিদেশে পাচার করছে হাজার হাজার কোটি টাকা। সুইস ব্যাংকে এরা পাচার করা অর্থের পাহাড় গড়েছে। যারা এই দুর্নীতি করছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত হয় না, তদন্ত হলেও সেই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় না। দোষীদের গ্রেফতার করা হয় না। বিচার হয় না। ’
সরকার অন্যায়-অবিচার ও শোষণ-বঞ্চনা-লুণ্ঠনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন খালেদা। তিনি বলেন, সরকার এমন আচরণ করছে যেন বিএনপি নির্মূল করাই তাদের প্রধান কাজ।
বিএনপি প্রধান বলেন, দলীয়করণ, ভীতিপ্রদর্শন ও নানা অপকৌশলের মাধ্যমে দেশের বিচার ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। দেশের সব প্রথা-প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে। দেশে ন্যায়বিচার নেই। ইনসাফ নেই। জনগণের কোনো নিরাপত্তা নেই। কথা বলার অধিকার নেই, গণতন্ত্র নেই, মানুষের ভোটের অধিকার নেই। সত্যিকারের সংসদ নেই। তথাকথিত সংসদে নেই প্রকৃত বিরোধী দল। শাসকদের কোথাও কোনো জবাবদিহি নেই।
‘দশ টাকা দরে চাল খাওয়াবার ওয়াদাকে ভয়াবহ ভাঁওতাবাজি হিসাবে প্রমাণ করে মোটা চালের কেজি এখন পঞ্চাশ টাকা। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে প্রতিটি নিত্যপণ্যের দাম। ’
দলীয়করণ ও অন্যান্য হীনপন্থায় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়েছে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, এই দুঃসহ অবস্থা থেকে দেশের মানুষ মুক্তি চায়। আজকের দুঃশাসনের হাত অনেক নিরাপরাধ মানুষের রক্তে রঞ্জিত। এই রক্তপিপাসু শাসকদের কবল থেকে গণতন্ত্রকে মুক্ত করা সহজসাধ্য কাজ নয়। কিন্তু আমরা হার মানিনি। জনগণ পরাজিত হবে না। দুঃশাসন একদিন থাকবে না। কিন্তু যে কলঙ্কের ইতিহাস তারা রচনা করছে, সেই কলঙ্কের ছাপ চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।
সরকারকে ‘বিনাভোটের’ আখ্যা দিয়ে বিএনপি প্রধান বলেন, তারা যতই হুংকার দিক, তাদের কোনো নৈতিক সাহস ও মনোবল নেই। কোনো গণভিত্তি নেই। পেশীশক্তি, সন্ত্রাস ও রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলোকে জনগণের বিরুদ্ধে অপব্যবহার করে তারা টিকে আছে।
সরকার বিগত নির্বাচনের মতো এবারও নির্বাচন করতে চায় উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, তারা সুষ্ঠু নির্বাচন তারা চায় না। তাদের কথা, ক্ষমতায় থেকে এবং সংসদ বহাল রেখেই নির্বাচন করবে তারা। যেন মানুষ ভোট দিতে না পারে এবং কারচুপির মাধ্যমে ফলাফল পাল্টে দেওয়া যায়। এই প্রহসন তারা একবার করেছে। আবারও করতে চায়। সেই উদ্দেশ্যেই তারা আমাদের নির্যাতন ও হামলা-মামলা ও বন্দি করে তটস্থ রেখে সরকারি খরচে এক বছর আগে থেকেই নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ প্রহসন নয়, সত্যিকারের নির্বাচন চায়। তেমন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলন করছি বলেই আজ আমাদের ওপর এতো জুলুম-নির্যাতন, এতো মিথ্যা মামলা।
দুদকের দায়ের করা দুর্নীতির মামলাটিকে ‘মিথ্যা’ আখ্যা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এই রায়কে কেন্দ্র করে শাসক মহল আমাদের চেয়ে বেশি অস্থির ও ভীত হয়ে পড়েছে। তারা জনচলাচলের অধিকার, প্রতিবাদের অধিকার সভা-মিছিলের সাংবিধানিক অধিকার, প্রশাসনিক নির্দেশে বন্ধ করা হচ্ছে। ভিত্তিহীন ও মিথ্যা মামলার বিরুদ্ধে জনগণের প্রতিবাদের ভয়ে ভীত হয়ে এ হীন পথ খুঁজে নিয়েছে সরকার। সারাদেশে তারা বিভীষিকা ও ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। জনগণের প্রতিবাদের সম্ভাবনাকে তারা এতোটাই ভয় পায়!
বিএনপি প্রধান তার বক্তব্যে সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেন, আওয়ামী লীগেও অনেকে আছেন যারা গণতন্ত্র ও জনগণের অধিকারে বিশ্বাস করেন এবং ভবিষ্যৎ পরিণতির কথা ভাবেন। তাদের প্রতিও আমার একই আহ্বান রইলো। আমরা সংঘাত, হানাহানি, নৈরাজ্য চাই না। শান্তি চাই। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। এখনো আমরা আশা করে বসে আছি, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৭, ২০১৮
এমএসি/এএম/ এইচএ/