একইসঙ্গে দলীয় প্রধানকে কারাগার থেকে বের করতে না পারলে আগামী নির্বাচনে কোন পথে হাঁটবে তা নিয়েও অনেকটা চিন্তিত দলটি।
বিএনপি নেতাকর্মীরা বলছেন, তাদের ধারণা ছিল যে সরকার খালেদা জিয়াকে কারাগারে নিয়ে নেতাকর্মীদের সহিংস আন্দোলনে উস্কে দেবে।
খালেদা জিয়ার কারামুক্তির দাবিতে রাজধানীসহ সারাদেশে দলটির কয়েক দফায় ডাকা কর্মসূচিতে প্রশাসন সহযোগিতা করলেও সম্প্রতি কিছু কর্মসূচিতে বাধা দেয়ার অভিযোগ ওঠে দলের পক্ষ থেকে। এছাড়া রাজধানীর সৌহরাওয়ার্দী উদ্যানে দুই দফা জনসভার অনুমতি চেয়েও সাড়া পাননি তারা। আসছে ১৯ মার্চ আবারো জনসভার অনুমতি চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। যার অনুমতি রোববার (১৮ মার্চ) পর্যন্তও মেলেনি।
বিএনপিকে চাপে রাখতেই সরকার তাদের কর্মসূচিতে বাধা দেয় বলেও মন্তব্য করে আসছেন দলটির একাধিক সিনিয়র নেতা। তারা দাবি করে বলেন, সরকারের পায়ের নিচে মাটি সরে গেছে। জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে সরকার। এজন্য তারা আবার একতরফা ভাবে ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের পাঁয়তারা করছে।
একইসঙ্গে খালেদা জিয়ার জামিন প্রক্রিয়া বিলম্বিত করা হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে বিএনপি নেতারা বলছেন, যে মামলায় সপ্তাহ খানেকের মধ্যে জামিন নিয়ে নেত্রীর বের হয়ে আসার কথা, তা দীর্ঘসূত্রী হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, সরকার আদালতের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ করছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় পাঁচ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারা ভোগ করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এ মামলায় জামিন প্রক্রিয়া চলমান। এরই মধ্যে কুমিল্লার অপেক্ষমাণ মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে তাকে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে নড়াইলে মানহানিসহ ঢাকা সিএমএম আদালতের আরো দু’টি মামলা চলমান। এদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট্র মামলায় চলতি মাসের ২৮ তারিখ হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক।
এছাড়া বড় পুকুরিয়া কয়লা খনি, গেটকো, নাইকো, কুমিল্লা, নড়াইলের মামলাসহ প্রায় তিন ডজন মামলার আসামি খালেদা জিয়া। এমন পরিস্থিতিতে মামলা মোকাবেলা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণের চিন্তা কল্পনাপ্রসূত বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এরই মধ্যে আগামী জুলাই মাসে ছয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে নির্বাচন কমিশনার (ইসি)। সেই নির্বাচনে অংশ নিতে এরই মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। একইসঙ্গে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সরকারের অধীনে হলে নিজেদের করণীয় কী হবে সে অংকও কষছেন দলটির নীতিনির্ধরকেরা।
দলের একটি অংশ মনে করছে, খালেদা জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিলে সেই নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হবে না। এমনকি, তারা দলের মূল স্রোত থেকে ছিটকে পড়বেন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে দলের নিবন্ধন বাতিল হতে পারে এমন চিন্তা থেকে অপর অংশের নেতাকর্মীরা নির্বাচনে যাওয়াকে যুক্তিযুক্ত মনে করছেন। যদিও সেই নির্বাচন হোক খালেদা জিয়াকে সঙ্গে নিয়ে, কিংবা তাকে ছাড়া। তারা আরও মনে করছেন, নির্বাচনে না গেলে দলের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। এমতাবস্থায় আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ জরুরি।
বিএনপি নেতারা মনে করছেন, তাদের সামনে এখন দু’টি চ্যালেঞ্জ, যে করেই হোক দলীয় প্রধানকে কারাগার থেকে মুক্ত করা এবং আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে নানা প্রতিকূলতার মোকাবেলা করে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামা। এটি যেহেতু তাদের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই জনগণের পূর্ণ সমর্থন নিয়ে আগামী নির্বাচনে জয় লাভ করে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করাই টার্গেট বিএনপির।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সরকার চেয়ারপারসনকে কারাগারে রেখে একতরফা নির্বাচনের পাঁয়তারা করছে। আমরা আইনি লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রীকে মুক্ত করে আনবো এবং তাকে নিয়েই আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে।
খালেদা জিয়াকে বাইরে রেখে কোনো নির্বাচন হলে সে নির্বাচনে বিএনপি যাবে না জানিয়ে দলের আরেক নীতিনির্ধারক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার যদি খালেদা জিয়াকে বাদ দিয়ে নির্বাচনের পরিকল্পনা করে থাকে, তা কখনো সম্ভব হবে না, হতে দেওয়া হবে না। তাকে মুক্তি দিয়ে তবেই নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকারের মনোভাব হলো, বিএনপি নেতাকর্মীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করতে না দিলে তারা উত্তেজিত হবেন এবং তার সুযোগ নেবে সরকার। কিন্তু এমনটা হবে না। নেতাকর্মীদের বলি, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নাও। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের মধ্য দিয়েই আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো।
বাংলাদেশ সময়: ০৪৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১৯, ২০১৮
এএম/এসআই