প্রায় তিন মাস হতে চললো তার কারাবাস। এরই মধ্যে দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তার শারিরীক অবস্থা ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে।
খালেদা জিয়ার কারাবাস কতোটা দীর্ঘ হবে তা বলা কঠিন। আগামী ৮ মে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ দুদকের আপিল শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। তারপরেই বোঝা যাবে তিনি মুক্তি পাবেন কি না।
কারাগারে খালেদা জিয়ার সময় কিভাবে কাটে এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীসহ সবার কৌতূহল রয়েছে। বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, ডিভিশনপ্রাপ্ত কয়েদি হিসেবে কারাগারে আছেন তিনি। জেলকোড অনুযায়ী সকল সুবিধাও পাচ্ছেন। তার দীর্ঘদিনের গৃহকর্মী ফাতেমা তার সঙ্গেই কারাগারে আছেন।
সূত্র জানায়, কারাগারের খাবার খুব একটা খান না খালেদা জিয়া। যদিও কারাগারের ভেতরেই তার জন্য রান্না হয়। তারপরও বাইরে থেকে তাকে তার পছন্দের খাবারও এনে দেয়া হয়। ঘুম থেকে উঠে সকালের নাশতা হিসেবে রুটি ও সবজি খান তিনি। সকালের নাস্তা করার পরে পত্রিকা পড়েন।
এরপর গোসল করেন, পরে জোহরের নামাজ পড়েন। জোহরের নামাজ শেষে তিনি মাঝে মাঝে অজিফা পড়েন। কখনো তিনি ডে-কেয়ার সেন্টারের বারান্দায় পায়চারিও করেন। দুপুরের খাবার খান বিকেল চারটা থেকে সাড়ে চারটার দিকে। সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পর বিটিভি দেখেন। এরপর রাতের খাবার খান। খাবার শেষে আবার কিছু সময় টিভি দেখেন।
খালেদা জিয়ার তত্ত্বাবধানের জন্য ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে গৃহকর্মী ফাতেমা তার সঙ্গে আছেন। তিনি দিনে কর্তব্যরত নারী-কারারক্ষীর কাছে থাকেন। ডাকা হলে তিনি খালেদা জিয়াকে ওষুধ দেওয়াসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দেন। রাতে ঘুমান খালেদা জিয়ার পাশের কক্ষে। খালেদা জিয়ার সেবায় কারাগারের ভেতরে সার্বক্ষণিক একজন নারী ফার্মাসিস্ট, প্রয়োজন হলে একজন চিকিৎসক থাকেন।
নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় খালেদা জিয়ার কক্ষ ঘিরে একজন নারী উপ-কারাধ্যক্ষের নেতৃত্বে সার্বক্ষণিক চারজন নারী কারারক্ষী থাকেন। কারাগারের বাইরে আছেনএকজন উপকারাধ্যক্ষের নেতৃত্বে একদল কারারক্ষী।
কারাগার সূত্রে জানা গেছে, খালেদা জিয়া শান্ত ও চুপচাপ থাকেন। কারা কর্মকর্তাদের কাছে তিনি কোনো চাহিদার কথা জানান না।
এদিকে কারাকর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়া সুস্থ আছেন বললেও বিএনপি নেতারা বলছেন তার শারিরীক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক খারাপ হয়েছে। যদিও গত ৭ মার্চ দলের নেতারা তার সঙ্গে সাক্ষাতের পর বলেছিলেন খালেদা জিয়ার মনোবল শক্ত আছে। তিনি দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন। কিন্তু এরপর দিন যত গড়াচ্ছে, বিএনপির অভিযোগ ততই বাড়ছে।
সর্বশেষ দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ২৮ এপ্রিল বিকেলে কারাগারে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে এসে দাবি করেন খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তিনি খালেদা জিয়াকে দ্রুত তার (খালেদার) পছন্দের চিকিৎসকের মাধ্যমে চিকিৎসা নেয়ার সুযোগ দেয়ার দাবি জানান। এছাড়া দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রায়ই ব্রিফিংয়ে দলীয় নেত্রীর অসুস্থতার কথা জানিয়ে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবি জানাচ্ছেন।
এর আগে খালেদা জিয়া ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি রাজনীতিতে যোগ দেয়ার পর মোট চারবার গ্রেফতার হন। এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর, ১৯৮৪ সালের৩ মে, ১৯৮৭ সালের ১১ নভেম্বর তিন দফায় গ্রেফতার হন তিনি।
সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতার করে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় স্থাপিত বিশেষ সাব জেলে আটক করে রাখা হয় তাকে। সাবজেলে ৩৭২ দিন কাটানোর পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি জামিনে মুক্তি পান।
বাংলাদেশ সময়: ০০২১ ঘণ্টা, মে ১, ২০১৮
এমএইচ/জেএম