বিএনপির কর্মসূচি থেকে শুরু করে নেতাদের চালচলনেও তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। গত ৫ মাসে খালেদা জিয়াকে কারামুক্ত করতে তেমন কোনো কঠোর কোনো কর্মসূচিও চোখে পড়েনি।
সর্বশেষ গত ৯ জুলাই মহানগর নাট্যমঞ্চে প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতেও লোকসমাগম তেমন একটা লক্ষ্য করা যায়নি। সিনিয়র নেতাদের কার্যকলাপে মনে হয় তারা অনেক ফুরফুরে মেজাজেই আছেন। খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় রমজান মাস কিংবা ঈদ কোনোটাতেই প্রভাব পড়েনি নেতাদের কাজে-কর্মে।
বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা এখন রাস্তাঘাটে, চায়ের টেবিলের আলোচনায় এ ধরনের কথাই বলছেন।
সূত্র জানায়, শুধু মিডিয়ার সামনে বক্তৃতা দেওয়ার সময় খালেদা জিয়ার মুক্তি চান নেতারা। একে অপরের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেন। একজন অপরজনকে বলেন, ঘরে বসে আন্দোলন করলে হবে না। রাস্তায় নামতে হবে। কেউ আবার কঠোর কর্মসূচির কথা বলেন। কিন্তু কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা কে, কখন, কিভাবে দেবেন সে বিষয়ে কেউ কিছু বলেন না।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে নির্বাহী কমিটির সদস্যরাও বক্তৃতা বিবৃতিতে বলেন আইনি লড়াইয়ে নেত্রীকে মুক্ত করা যাবে না। নেত্রীর মুক্তির জন্য কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে। কিন্তু সেই কঠোর কর্মসূচি কী, কখন ঘোষণা হবে সেটা কেউ জানেন না।
স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ গত ৫ মাসে বিভিন্ন কর্মসূচিতে বলেছেন সরকার খালেদা জিয়াকে বেশিদিন আটকে রাখতে পারবে না। আইনের মাধ্যমে তিনি শিগগিরই বের হয়ে আসবেন। আবার তিনিই বলেছেন, তাকে মুক্ত করতে হলে রাজপথে কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে। আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। উপযুক্ত সময়ে কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বলেছেন, খালেদা জিয়াকে এই সরকার মুক্তি দেবে না। আইনি লড়াইয়ে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা যাবে না। তাকে মুক্ত করতে হলে কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে।
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ঘর থেকে বাইরে বের হতে হবে। ঘরের মধ্যে সভা-সমাবেশ করলে কোনো লাভ হবে না। মানুষের কাছে যেতে হবে। কিন্তু মানুষের কাছে কে কিভাবে যাবে তার কোনো নির্দেশনা নেই তার বক্তৃতায়।
নেতাদের এসব বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করেছেন বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, সিনিয়র নেতারা আন্দোলন কর্মসূচির পক্ষে কেউ নেই। তাদের দেখে মনে হয় সবাই ভালো আছেন। সুতরাং আন্দোলনও হবে না, খালেদা জিয়াও মুক্তি পাবেন না। আওয়ামী লীগ সরকার আবারও একতরফা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসবে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেন, বৃহস্পতিবার (১২ জুলাই) সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে মানবাধিকার নিয়ে কূটনীতিকদের দাওয়াত দিয়ে যে গোলটেবিল করা হলো, সেখানে খালেদা জিয়ার বিষয়ে কঠোর কোনো বক্তব্য ছিল না। দু’একজন নেতা বক্তৃতার মধ্যে খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়টি উচ্চারণ করলেও প্রামাণ্য চিত্রে খালেদা জিয়ার মামলা বা তার জেল জীবন নিয়ে কোনো কিছু দেখানো হয়নি।
গত রমজানে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একটি ইফতার মাহফিলে যোগ দিয়ে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছিলেন, নেত্রীর মাধ্যমে যাদের গাড়ি বাড়ি হয়েছে। সুনাম হয়েছে, মন্ত্রী হয়েছেন এমপি হয়েছেন। তাদের কি নেত্রীর জন্য মোটেও দরদ হয় না। তাকে জেলে রেখে ঈদ করেন, কেনাকাটা করেন, এতে কি মোটেও গায়ে বাধে না?
গয়েশ্বরের সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে নেতাদের চাল-চলন দেখে মোটেই বোঝা যাবে না, যে তাদের নেত্রীর কারাবাসের ৫ মাস ইতোমধ্যেই শেষ। আদৌ তিনি কারাগার থেকে ছাড়া পাবেন কী না তারও কোনো গ্যারান্টি নেই। একের পর এক যেভাবে তাকে মামলার জালে জড়িয়ে ফেলা হচ্ছে তাতে তার মুক্তি এখন সুদূর পরাহত।
প্রতীকী অনশনে আশানুরূপ জনসমাগম হয়নি স্বীকার করে ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, অনুমতি পাওয়া না পাওয়া ও পুলিশী হয়রানির কারণেই সেখানে উপস্থিতি কম ছিল।
তবে নেত্রী জেলে নেতাদের আচরণে এমনটি মনে হয় না এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আব্দুস সালাম বলেন, আমরা নেত্রীর জন্য জীবন দিতে রাজি আছি। শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও নেত্রীর মুক্তির আন্দোলন চালিয়ে যাব। তবে আমরা পুলিশী নির্যাতনে জর্জরিত এ বিষয়টিও মনে রাখতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৫৪৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৪, ২০১৮
এমএইচ/এসএইচ/