২০১৬ সালের এই দিনে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। হান্নান শাহ ১৯৪১ সালের ১১ অক্টোবর গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার ঘাগটিয়া গ্রামের মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
মৃত্যুবাষিকী বিষয়ে হান্নান শাহ’র বড় ছেলে শাহ রেজাউল হান্নান জানান, পারিবারিকভাবে আমরা কাপাসিয়ার ঘাগটিয়া গ্রামের বাড়িতে বৃহস্পতিবার সকালে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করেছি। এছাড়া দলীয়ভাবে সকাল সাড়ে ১০টায় নয়াপল্টন অফিসে মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
হান্নান শাহর পিএ ইউনুস বাবুল বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে ঘাগটিয়ায় হান্নান শাহর কবর জিয়ারত ও কোরআন খানির আয়োজন করা হয়েছে।
হান্নান শাহ ১৯৫৬ সালে ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাস এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে অন্য বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি। ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশে ফিরে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৮৩ সালে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে থাকাকালীন এরশাদ সরকার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে বাধ্যতামূলক তাকে অবসর প্রদান করে। অবসরের পর এরশাদ সরকারের সময়ে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছিলেন হান্নান শাহ। পরে তাকে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব পদে বদলি করা হয়। স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তিনি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন।
বিএনপিতে যোগদানের শুরুতে তিনি ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) হিসেবে ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। একই সময়ে তিনি গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ১৯৯৩ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত বিএনপি চেয়াপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সালে পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হলে তাকে বিএনপির সর্বোচ্চ ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য করা হয়। ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে তার এই পদ বহাল ছিল।
তিনি ১৯৯১ সালে ও ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে গাজীপুর-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এছাড়া তিনি ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকারের পাটমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
হান্নান শাহ ২০০৮ সালে বহুল আলোচিত ফখরুদ্দিন-মঈন উদ্দিনের সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে গণতন্ত্র বিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম মুখ খোলেন। তিনি ১/১১ সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফের আলোচনায় আসেন। হান্নান শাহ মাইনাস টু ফর্মুলার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে সে সময় বার বার কারা নির্যাতিত হন। জিয়া পরিবারের বিশস্ত কর্মী হিসেবে তিনি বার বার বিএনপির পাশে দাঁড়ান।
১৯৮১ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামে কতিপয় বিপদগামী সেনা কর্মকর্তার হাতে শহীদ হলে তিনি জিয়াউর রহমানের মরদেহ ঢাকায় এনে পরিবারের হাতে বুঝিয়ে দেন। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে তিনি খালেদা জিয়ার পাশে থেকে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। সে সময়ও তাকে বার বার কারাবরণ করতে হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১০০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮
এমএইচ/এএটি