গত দুই সপ্তাহে কেবলমাত্র খুলনা মহানগর বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ১১ মামলায় আসামি করা হয়েছে প্রায় দেড় হাজার নেতাকর্মীকে।
খুলনার রাজপথে তেমন রাজনৈতিক উত্তাপ না থাকলেও মামলা ও আসামির সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
বিএনপির অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ পুরোদমে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছে। অপরদিকে বিএনপিকে নির্বাচনের মাঠ থেকে দূরে রাখতে ‘মিথ্যা, গায়েবি ও ভৌতিক’ মামলা দেওয়া হচ্ছে। কোনো কারণ কিংবা ঘটনা ঘটা ছাড়াই অযথা মিথ্যা মামলা দায়ের করে, নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুলিশ তল্লাশি অভিযান, হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও গ্রেফতার করছে।
খুলনা মহানগরীর থানাগুলোতে আগের মামলা দায়েরের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন ও স্মারকলিপি প্রদান করার পরেও নতুন করে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা দায়ের করায় মহানগর বিএনপি বিস্ময় ও হতাশা প্রকাশ করেছে।
তবে পুলিশের দাবি, সরকারবিরোধী কাজ, পুলিশের কাজে বাধা-হামলা, ভাঙচুরের দায়ে এসব মামলা করা হচ্ছে। নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছে বা কঠিন ধারায় নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে- বিএনপির এমন অভিযোগ সত্য নয়।
থানা সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (৪ অক্টোবর) এক রাতে মহানগরীর সদর, সোনাডাঙ্গা, খালিশপুর, দৌলতপুর ও খানজাহান আলী থানায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতাসহ প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, পুলিশের কাজে বাধা ও হামলা, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলার ষড়যন্ত্রসহ বিভিন্ন অভিযোগে পুলিশ বাদী হয়ে এসব মামলা করেছে।
মহানগরীর ৫টি থানা ও এজাহার থেকে জানা গেছে, মহানগরীর সদর থানায় দায়ের করা মামলার বাদী উপ-পরিদর্শক (এসআই) দেলোয়ার হোসেন। তিনি এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ‘৪ অক্টোবর বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটে পিকচার প্যালেস মোড়ে আসামিরা একত্রিত হইয়া বিক্ষোভ, ইজিবাইক ভাঙচুর, পুলিশের কাজে বাধা ও পুলিশের ওপর হামলা করেছেন। ’
এ মামলায় মহানগর যুবদলের সভাপতি মাহাবুব হাসান পিয়ারু, ২১ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি নাজির উদ্দিন আহমেদ নান্নু, সাধারণ সম্পাদক মোল্লা ফরিদ আহমেদ, মহানগর বিএনপির সহ প্রকাশনা সম্পাদক হাসানুর রশিদ মিরাজ, সদর থানা শ্রমিক দলের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম শফিসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ৪০/৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গত ৩ অক্টোবর রাত ৯টা ৪০মিনিটের সোনাডাঙ্গা থানা এলাকার একটি কেপিআই এলাকা ধ্বংসের চেষ্টা ও সহায়তায় অভিযোগে ১৬ জনের রিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলার বাদী সোনাডাঙ্গা থানার এসআই রণজিত কুমার বিশ্বাস।
এ মামলায় মহানগর যুবদলের সাবেক সভাপতি শফিকুল আলম তুহিন, বর্তমান সভাপতি মাহাবুব হাসান পিয়ারু, ছাত্রদলের মহানগর সভাপতি শরিফুল ইসলাম বাবু, সোনাডাঙ্গা থানার সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদসহ ১৬ জনের নাম রয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি আরও ১৫০ জন।
দৌলতপুর থানায় দায়ের করা মামলার বাদী আসাদুজ্জামান নূর। এ মামলায় মহানগর বিএনপির ১ম যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, দৌলতপুর থানা সভাপতি শেখ মুশাররফ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল হক নান্নু, সাংগঠনিক সম্পাদক সাজ্জাদ আহসান তোতন, বিএল কলেজ ছাত্রদল সভাপতি রিয়াজ শাহেদসহ ২৯ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে আরও ১৪০/১৫০ জনকে।
৪ অক্টোবর বিকেল সাড়ে ৫টায় দৌলতপুর শশীভুষণ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে মারামারি, যানবাহন ভাঙচুরের চেষ্টা এবং বাধা দিতে গেলে পুলিশের ওপর হামলা করেছেন আসামিরা। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
মহানগরীর খানজাহান আলী থানায় দায়ের করা মামলার বাদী এসআই বিধান চন্দ্র সানা। এ মামলা ২০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ৬০/৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ৪ অক্টোবর বিকেল ৫টা ২৫ মিনিটে ফুলবাড়িগেট সোহাগ কাউন্টারের সামনে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে মিছিল করে গাড়ি ভাঙচুর ও পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে।
মহানগরীর খালিশপুর থানায় দায়ের করা মামলার বাদী এসআই হাতিম আলী। ৮/৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪০/৫০জন বিএনপি নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জু বাংলানিউজকে বলেন, খুলনা জেলা ও মহানগরে ২১টি গায়েবি মামলা করে প্রায় তিন হাজারের মতো নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
মঞ্জু বলেন, সরকার বিএনপিকে দমন করতে হাতিয়ার হিসেবে মিথ্যা মামলাকে বেছে নিয়েছে। এসব মামলার উদ্দেশ্য এখন স্পষ্ট। বিএনপি যেন নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্য একের পর এক মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে।
তিনি অবিলম্বে সব মামলা প্রত্যাহার ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি দাবি করেন।
খুলনা জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট এসএম শফিকুল আলম মনা বাংলানিউজকে বলেন, এক মাস ধরে প্রতিদিনই খুলনার ৯ থানায় গায়েবি মামলা হচ্ছে। এর মধ্যে কয়রায় ৩টি, দাকোপে ২টা, বটিয়াঘাটায় ৩টি, ডুমুরিয়ায় ৪টি, দিঘলিয়ায় ২টি, লবণচরা থানায় ১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় হাজার আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আছে আরও ২ হাজার।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচন ও আন্দোলনকে সামনে রেখেই এসব গায়েবি মামলা করছে পুলিশ। এর সঙ্গে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীর সম্পৃক্ততা নেই। কেবল নেতা-কর্মীদের হয়রানি করার লক্ষ্যে এসব মামলা করা হচ্ছে।
মহানগর বিএনপির ১ম যুগ্ম-সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, কেবলমাত্র ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ৬ অক্টোবর খুলনা মহানগরীতে ১১টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে সদর থানায় ৩টি, সোনাডাঙ্গায় ২টি, খালিশপুরে ২টি, দৌলতপুরে ২টি, খানজাহান আলী ১টি, লবনচরায় ১টি মামলা হয়েছে। নামে-বেনামে এসব মামলার আসামি প্রায় দেড় হাজার।
তিনি বলেন, সরকার তো নির্বাচনের কথা বলছে। অথচ নির্বাচনের প্রার্থীদের জনপ্রিয়তা জরিপের জন্য বিএনপির পাঠানো টিমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের চোখ বেঁধে সারা শহরে ঘুরিয়ে নাশকতার ষড়যন্ত্রের মামলায় করা হয়েছে।
বিএনপিকে নির্বাচনের মাঠ থেকে দূরে রাখতে মিথ্যা, গায়েবী ও ভৌতিক মামলা হচ্ছে- এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনর সোনালী সেন বাংলানিউজকে বলেন, এ কথা ঠিক নয়। ঘটনা ঘটছে বলেই তো মামলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ০৮৫২ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৭, ২০১৮
এমআরএম/এসএইচ