ঢাকা, সোমবার, ২২ আশ্বিন ১৪৩১, ০৭ অক্টোবর ২০২৪, ০৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

বিএনপি

নাইকো মামলার শুনানি ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত মুলতবি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩১ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৮
নাইকো মামলার শুনানি ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত মুলতবি

ঢাকা: নাইকো দুর্নীতি মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি আগামী বুধবার (১৪ নভেম্বর) পর্যন্ত মুলতবি করেছেন আদালত।

বুধবার (৮ নভেম্বর) পুরান ঢাকার পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতে অভিযোগ গঠনের আংশিক শুনানি হওয়ার পর বিচারক মাহমুদুল কবীর এ আদেশ দেন।

পরে খালেদা জিয়ার আইনজীবী আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া বলেন, আজকে হঠাৎ করে খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে কারাগারে আনা হয়েছে।

...আমরা আবেদন করেছিলাম, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যগত অবস্থা জানার জন্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও মির্জা ফখরুল ইসলামগীরসহ ৩০ মিনিট খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলতে। আদালত সেটাও মঞ্জুর করেননি। অথচ খালেদা জিয়া আদালতে অসুস্থাবস্থায় এসেছেন। তার গাড়ি থেকে নামতে অনেক কষ্ট হয়েছে। কাশতে কাশতে তিনি আদালতে ঢুকেছেন। তারপর অসুস্থ অবস্থায়ই তিনি সোয়া ১টা পর্যন্ত আদালতে ছিলেন।

‘খালেদা জিয়া আদালতের কাছে মামলার ধারাবাহিকতা রাখতে বলেছেন। আপনারা জানেন, এটা হলো ২০ নম্বর মামলা। আরেকটা মামলা ছিল ১৯ নম্বর। ওই মামলায় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসামি ছিলেন। খালেদা জিয়া হলেন ২০ নম্বর মামলার আসামি। তিনি ধারাবাহিকতা রক্ষা করেছেন। খালেদা জিয়া ১৪-৬-২০০১’র পরে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর করেন নাই। ১৪-৬-২০০১ তারিখে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চুক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। ’ 

সানাউল্লাহ মিয়া জানান, তিনি (খালেদা জিয়া) বলেছেন, ‘আমি যদি এই ধারাবাহিকতা রক্ষা না করি, তাহলে দোষ হবে’। তিনি সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই নাইকোর কাজকর্ম পরিচালনা করেছেন। তিনি কোন অন্যায় কাজ করেননি। ‘আর আমি যদি আসামি থাকি তাহলে আগের মামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন থাকবেন না?’ সে প্রশ্ন আদালতে করেছেন খালেদা জিয়া।

মামলার বাদী দুদকের প্রসিকিউটর মোশারফ হোসেন কাজল বলেন,  আমার দেখা মতে তাকে (খালেদা জিয়া) আমি সুস্থ ও উৎফুল্ল দেখেছি। আজকে তার উপস্থিতিতেই এই বিলম্বিত নাইকো মামলার শুনানি হয়েছে। এই মামলায় সর্বমোট ১১ জন আসামি রয়েছে। এই ১১ জনের মধ্যে ৯ জনের যুক্তিতর্ক পর্ব শেষ হয়েছে। আর দু’জনের যুক্তিতর্ক বাকি আছে। একজন হলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আরেকজন খালেদা জিয়া। আমরা ভেবেছিলাম আজকেই যুক্তিতর্ক শেষ হয়ে যাবে। আদালত কোনো চার্জ গঠন করবেন, বা ডিসচার্জ করবেন অথবা আদালত কোনো আদেশ দেবেন। কিন্তু ব্যারিস্টার মওদুদ দীর্ঘদিন ধরে এই মামলা ব্যক্তিগত কারণে বারবার পিছিয়ে দিচ্ছেন। আজকেও তিনি তাই করেছেন। তার বয়স হয়েছে বা তিনি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না এই গ্রাউন্ডে তিনি সময় নিয়েছেন। আদালত তা মঞ্জুর করেছেন। আগামী বুধবার আদালত শুনানির দিন ধার্য করেছেন। আমরা আশা করছি ওই দিনই কোনো চার্জ গঠিত হবে। এই মামলার পক্ষে আমরা রয়েছি এবং বিপক্ষে তারা রয়েছে।  

দুদকের আইনজীবী জানান, খালেদা আজকে আদালতে বলেছেন যে, ‘আমরা আগের সরকারের ধারাবাহিকতায় কাজ করেছি’। কিন্তু আগের সরকারের করে যাওয়া কাজের বৈধতা দেখার শক্তি ও সাহস তার ছিল। আগের সরকার কোনো কাজ করে গেলে পরবর্তী সরকার এসে সেটা করবে এমন কোনো যুক্তি কখনো টেকে না। আগের সরকার চুক্তি স্বাক্ষর করার জন্য যে নিয়ম ধার্য করেছিলেন সেখানে দেশের স্বার্থ দেখার নিয়ম ছিল। এখন এই ক্ষেত্রে খালেদা জিয়া সেই মোতাবেক করেননি বলেই তার বিরুদ্ধে মামলাটি হয়েছে।

এর আগে, বেলা ১১টা ২০ মিনিটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি প্রধানকে সেখান থেকে বের করে কালো রঙের একটি গাড়িতে করে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ১১টা ৩৫ মিনিটের দিকে কারাগারে ঢোকে খালেদাকে বহনকারী গাড়িটি। বেলা পৌনে ১২টার দিকে কারাগারে স্থাপিত আদালতে তোলা হয় খালেদা জিয়াকে।

নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচার এর আগে বকশীবাজার আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থপিত আদালতে হতো। তবে বৃহস্পতিবার আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি শুরু হওয়ার আগে বুধবার (৭ নভেম্বর) কারাগার ভবনে ঢাকার ৯ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের অস্থায়ী এজলাস বসানোর আদেশ জারি হয়।

খালেদা ছাড়াও নাইকো দুর্নীতি মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক আইনমন্ত্রী ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন, সাবেক সচিব মো. শফিউর রহমান, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সচিব খন্দকার শহীদুল ইসলাম, সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন, ঢাকা ক্লাবের সাবেক সভাপতি সেলিম ভূঁইয়া, সাবেক মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী, বাপেক্সের সাবেক মহাব্যবস্থাপক মীর ময়নুল হক, ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ও নাইকো’র দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট কাশেম শরীফ।

কানাডার কোম্পানি নাইকোর সঙ্গে অস্বচ্ছ চুক্তির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতিসাধন ও দুর্নীতির অভিযোগে খালেদা জিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে দুদকের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন।

২০০৮ সালের ৫ মে এ মামলায় খালেদা জিয়াসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক এস এম সাহেদুর রহমান। অভিযোগপত্রে প্রায় ১৩ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার রাষ্ট্রীয় ক্ষতির অভিযোগ আনা হয়।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছর সাজা হওয়ার পর খালেদা জিয়াকে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। সেখান থেকে গত ৬ অক্টোবর চিকিৎসার জন্য বিএসএমএমইউতে আনা হয় সাবেক এ প্রধানমন্ত্রীকে। এরমধ্যে আবার চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২৯ অক্টোবর খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এতোদিন বিএনপি প্রধান হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৮/আপডেট ১৫১৩ ঘণ্টা
ইএস/এজেডএস/এমএএম/এইচএ/

** নাইকো মামলার শুনানিতে আদালতে খালেদা
** হাসপাতাল থেকে কারাগারে নেওয়া হলো খালেদাকে
** হাসপাতাল থেকে কারাগারে নেওয়া হচ্ছে খালেদা জিয়াকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।