ঢাকা, রবিবার, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

বিএনপি

গ্রেফতার-হামলায় আহতদের তালিকা দিলেন রিজভী

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৩৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৮
গ্রেফতার-হামলায় আহতদের তালিকা দিলেন রিজভী রুহুল কবির রিজভী।

ঢাকা: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সারাদেশে বিএনপি ও বিরোধী দলের শত শত নেতাকর্মীকে গণগ্রেফতার ও হামলা করে আহত করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

শনিবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন। লিখিত বক্তৃতায় তিনি সারাদেশে গ্রেফতার ও হামলার বিবরণ তুলে ধরেন।

  

রিজভী বলেন, টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা বিএনপির গ্রেফতারকৃতরা হলেন-পৌর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক হাফেজ খায়রুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির সদস্য আব্দুর হাই, হেলাল, ঠান্ডুফকির, সাখাওয়াত হোসেন, যুবদল নেতা হাফিজুর রহান, মঞ্জু সিদ্দিকী, ছাত্রদল নেতা পাপ্পু, শিমুল সরকার, হেলাল প্রমুখ।

গোপালপুর পৌর এলাকা থেকে বিএনপির ৪ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নেত্রকোনা-২ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী ডা. আনোয়ারুল হকের বাসায় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও বাড়ির লোকজনকে মারধর করে আহত করে। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নাবিলা ডায়াগনস্টিক সেন্টারেও ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। পরে পুলিশ এসে ২০/২৫ জনকে গ্রেফতার করে।

নোয়াখালী সদর থানায় প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারীসহ ৩৬৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে বাকশালী পুলিশ। শহর যুবদল যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ হোসেন, শহর যুবদল যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন সুমন, পৌর ছাত্রদল নেতা মো. অপুকে এবং সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হিরো ও প্রথম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফকে শনিবার পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

মৌলভীবাজার-৪ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী হাজী মুজিবর রহমান শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) গণসংযোগ শেষে ফেরার পথে তাদের ওপর হামলা চালিয়ে শ্রীমঙ্গল থানাধীন মির্জাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. সুফি মিয়া, উপজেলা বিএনপি নেতা মো. মছদ্দর আলী, আহাদ মিয়া মেম্বর, যুবদল নেতা মোসাব্বির মিয়া, আতা মিয়াকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ভালুকায় পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে বিএনপির নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা চালাচ্ছে। যশোর-৬ এ বিএনপি নেতা হাফিজুর রহমান, যুবদল নেতা আকরাম হোসেন, বিএনপি নেতা গফুর, বিল্লালকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মামুনুর রশীদ মামুনকে শুক্রবার রাতে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নেত্রকোনায় প্রার্থীর বাসায় বিএনপির নেতাকর্মীরা উপস্থিত হলে পুলিশ বাড়ি ঘেরাও করে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করে নিয়ে যায়।

ঢাকা-১২ এ ধানের শীষের প্রার্থী মো. সাইফুল ইসলাম নীরবের পক্ষে মহিলা দলের নেত্রী রুনু বেগম, লাবনী, চম্পা, বিথি, ঝরনা, রিয়া, আনোয়ারা, রাশেদা, মাকসুদা বিভিন্ন ওয়ার্ডে গণসংযোগকালে ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং লিফলেট ছিনিয়ে নেয় ও তাদের আটকিয়ে রাখে।

সাতক্ষীরা-১ এর প্রার্থী হাবিবুল ইসলাম হাবিব গণসংযোগকালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। এতে প্রার্থী নিজেসহ ২৫ জন আহত হয়। এদের মধ্যে উপজেলা বিএনপি সভাপতি বজলুর রহমান, জেলা বিএনরি সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফ চেয়াম্যান, বিএনপি নেতা তকদির হোসেন রুবেল, হাফিজুল ইসলামের অবস্থা এখন আশঙ্কাজনক। নাটোর জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শহীদুল ইসলাম বাচ্চুসহ সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়।

ফেনী-২ সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়ন জাসাসের সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন সোহাগ এবং ফরহাদনগর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মো. মাহবুবুল আলম মাবু এবং ছাত্রদল নেতা মো. আজাদকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিএনপি প্রার্থী আব্দুল খালেক শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরু করেন। শুরুতেই করিতোলা ফেরিঘাট পার হওয়ার পরেই ছাত্রলীগের ক্যাডার মনিরের নেতৃত্বে প্রার্থীর গাড়ি বহরে হামলায় উপজেলা কৃষক দলের সভাপতি সহ ৩/৪ জন আহত হয়। হামলায় একাধিক গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। হরিণাকুণ্ডু উপজেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম ধানের শীষের প্রার্থীর বাড়ি থেকে বের হয়ে ফেরার পথে স্থানীয় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা কুপিয়ে জখম করে। ফলসি ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আজিম উদ্দিনকে একইসময়ে হামলা চালিয়ে আহত করে ও তার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। জুমার নামাজের পরে ২০ দলীয় জোটের মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলা নেতা লুৎফুর রহমান আজাদীকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

কুমিল্লা-৮ মহেশপুর ইউনিয়নের হরিপুর বাজারে চিকরদা ইউনিয়নে মুকুন্দপুর বাজার, শিলমুড়ি বাজার, অম্বদিয়া বাজারে ধানের শীষের প্রার্থী জাকারিয়া তাহের ও সমর্থকদের ওপর একাধিকবার হামলা করা হয়েছে। কুমিল্লা-৩ বিকেল ৫টার দিকে মুরাদনগর থানার সামনে ধানের শীষের প্রার্থীর প্রচারণার সময় প্রার্থী মজিবুল হকের গাড়ি বহরে পিচ্চি কামাল ও তার ভাই হাবিবের নেতৃত্বে হামলা হয়।

ঢাকা-২ কেরানীগঞ্জ মডেল থানার রুহিতপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ মোকসেদ ও কামরাঙ্গীরচর থানা মৎস্যজীবী দলের সভাপতির ছেলে ও তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারকে ছাত্রলীগের সহযোগিতায় গ্রেফতার ও চাঁদপুর-১ প্রচারণার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত দু’শতাধিক নেতাকর্মীকে বিনা কারণে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

নোয়াখালী-২ সমীর মুন্সির হাটবাজার থেকে ২০ দলীয় জোট নেতা ডা. মাইন উদ্দিনকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে ও ৮ নং বীজবাগ ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবুলকালামকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। নোয়াখালী-৪ শহর যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহেদ, যুবনেতা আনোয়ার হোসেন ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা অপুকে বিনা কারণে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নোয়াখালী-৬, ধানের শীষের প্রার্থী হরনী কান্দী ইউনিয়নে অবরুদ্ধ আছেন। যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। পটুয়াখালী-৪ রাঙ্গাবালী উপজেলার ছাত্রদলের সদস্য মো. মলিনসহ গত দু'দিনে ৩৩ জন নেতাকর্মী ও সমর্থককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বাগেরহাট-১ মোল্লারহাটে ধানের শীষের নির্বাচনী প্রচারণার সময় আওয়ামী লীগের শেখ হেলালের গুন্ডা বাহিনী ধানের শীষের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মাসুদ রানা ও যুবদল নেতা শেখ দেলোয়ার হোসেনসহ অসংখ্য নেতাকর্মীদের ওপর অতির্কিত হামলা করে। বাগেরহাট-২ স্থানীয় আওয়ামী সন্ত্রাসীরা বাগেরহাট বিএনপি কার্যালয় থেকে ধানের শীষের পোস্টার লিফলেট লুট করে নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দেওয়ায় বিএনপি কর্মী মাসুদ শেখকে তার মোটরসাইকেলসহ অপহরণ করেন। তার সন্ধান এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

নরসিংদী-৪ পুলিশ বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছে এবং বেলাব উপজেলা যুবদল সভাপতি জাহাঙ্গীর ও রিপন মাস্টারসহ আটজন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মনোহরদী থানার শুকুন্দি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাতেন ও বিএনপি নেতা বাছেদ মেম্বারকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ।

বরিশাল-১ গণসংযোগের সময়ে গৌরনদী সরীকল বাজারে আওয়ামী লীগ অ্যাডভোকেট রহমান নামে একজন বিএনপি নেতাকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। ঝালকাঠি-২ ধানের শীষের প্রার্থী জেবা আমিন খানের গণসংযোগে নলছিটি সদরে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীদের হামলায় বিএনপির ১৫ জনের বেশি নেতাকর্মী আহত ও ২টি গাড়ি ভাঙচুর করে।

রংপুর-৬ কাবিলপুর ইউনিয়ন লালদীঘির মেলা অফিস ভাঙচুর করে ৩৭ জনের নাম ও অজ্ঞাতপরিচয় দু’শতাধিক নেতাকর্মীদের নামে উল্টা মামলা করে।

রাজবাড়ী-২ জেলা যুবদলের সহ সাধারণ সম্পাদক সফিউল্লাহ, পাংসা ছাত্রদলের সভাপতি শেখ রাকিব, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম খোকন, পাংশা উপজেলা বিএনপির সদস্য ধীরাজ শেখ, জেলা যুবদলের যুগ্ম সম্পাদক মুক্তার হোসেন, সাওরাইল ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জুলমত বিশ্বাস, যুবদল নেতা আনিস মোল্লা, সাওরাইল ইউনিয়ন বিএনপি’র সহসভাপতি আক্কাস মোল্লা, যুবদল নেতা আলাউদ্দিনসহ ১৫ জনের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

চট্টগ্রাম-৪ ভাটিয়ারী বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরনবী চৌধুরী, যুবনেতা শাহাদাত, মো. জাবেদ, মোনসুরসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে বিনা কারণে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রাঙামাটি লংগদু উপজেলায় ৭০ জনকে আসামি করে গায়েবি মামলা করে বাকশালি পুলিশ।  চট্টগ্রাম-১০ ডবল মুরিং থানায় ১৩২ জনের নামে গায়েবি মামলা এবং কুষ্টিয়া-১ বোয়ালিয়া ইউনিয়ন বিএনপি যুগ্ম সম্পাদক আনিসুর রহমানসহ তিন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

খাগড়াছড়ি দিঘীনালার বেতছড়ীতে ছালাম মেম্বরের দোকান-বাড়িতে হামলা করে লুটপাট করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এবং উল্টা তাদের ৭৫ জনকে আসামি করে মামলা এবং তিনজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

নির্বাচনী প্রচারণায় ধানের শীষের প্রার্থী, বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় আমি তীব্র নিন্দা, ধিক্কার ও প্রতিবাদ জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বরেন, বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনসহ বিরোধীদলীয় গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির জোর দাবি করছি।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৮
এমএইচ/এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।