সোমবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের এ কথা বলেন। ‘সংসদ অধিবেশনে যোগ দিতে মির্জা ফখরুলকে সংসদ আমন্ত্রণ জানিয়ে ফোন করবেন কি-না’- এমন একটি প্রশ্নের উত্তরে কথা বলেন সেতুমন্ত্রী।
ওবায়দুল কাদের বলেন, মির্জা ফখরুল কারও দয়ায় নির্বাচিত হননি। তিনি তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তাই সংসদে গিয়ে অধিবেশনে যোগ দেওয়া তার অধিকার। তিনি সংসদে না গেলে নিজেকে বঞ্চিত করবেন। ভোটারদের বঞ্চিত করবেন। এটা গণতান্ত্রিক চর্চার বিরুদ্ধাচরণ। আর বিএনপি সেক্রেটারি যদি বলেন পক্ষপাতমূলক নির্বাচন হয়েছে। তাহলে তিনি কি পক্ষপাতমূলকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন? তিনি কিভাবে নির্বাচিত হলেন? তিনি কারও দয়ায় নির্বাচিত হয়নি। এটা তার অধিকার। তাকে ফোন করে আনতে হবে কেন?
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিক গণফোরামের দুই এমপির শপথ নেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ঐক্যফ্রন্টের দুই এমপির শপথ নেওয়ার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। এটাকে আমি ইতিবাচক হিসেবে নিচ্ছি। এটাতো ভালো। তারা সংসদে এলে অবশ্যই আমরা স্বাগত জানাবো। আমরা চাই তারা আলোচনা করবেন। বিতর্কে অংশ নেবেন। তারা যতোই সমালোচনা করবেন ততোই গণতন্ত্র শক্তিশালী হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে ‘শুভেচ্ছা বিনিময় ও চা-চক্রে’ বিএনপিকে আমন্ত্রণ জানালেও তারা যাবে না জানিয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কাদের বলেন, ২ ফেব্রুয়ারি ঐক্যফ্রন্টসহ ৭৫টি দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তারা কেন আসবেন না এটা তাদের ব্যাপার। তবে তারা আসতে পারেন। এটা একটা গার্ডেন পার্টি। জাস্ট ভিউজ এক্সচেঞ্জ (শুধু মতামত বিনিময়) করতে পারেন তারা। প্লেজেন্টলি এক্সচেঞ্জই (শুভেচ্ছা বিনিময়) মূলত প্রোগ্রাম, আর একটু চা-টা খাবেন একসঙ্গে। ফাঁকে ফাঁকে কথা বলা যাবে। তবে আনুষ্ঠানিক কোনো সংলাপ নয়। শুভেচ্ছা বিনিময়ে করতে গিয়েওতো অনেক কথা বলা যায়।
‘তবে দেখুন এই নির্বাচন ভালো গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। সর্বশেষ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি একসঙ্গে কাজ করার আগ্রহও দেখিয়েছেন। ফলে বিএনপি কেন বিতর্ক তৈরির চেষ্টা করছে এটা বোধগম্য নয়। অস্ট্রেলিয়া এবং জাপানও প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে। ভারত, চীনের পাশাপাশি সার্কভুক্ত দেশগুলো অনেক আগেই শুভেচ্ছা জানিয়েছে। ’
ওবায়দুল কাদের বলেন, এখন বিএনপি যে চেষ্টাটা করছে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, সেটাতে কিন্তু তারা ফেল করেছে। তাদের এই অপচেষ্টা সফল হয়নি। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডাসহ সারা দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে তারা চিঠি লিখেছে। তাতে কেউ সাড়া দেয়নি। উল্টো সবাই নির্বাচিত সরকারকে অভিনন্দন জানিয়েছে।
‘তারা (বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্ট) যে ক’টা আসনই পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, তাদের সংখ্যা কতো সেটা আমরা দেখবো না। তারা যদি কোনো যুক্তিসংগত কোনো বিষয় সংসদে উপস্থাপন করে, তাহলে আমরা সেটা বিবেচনা করবো। ’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, আমরা নির্বাচনের আগে দুই দফা সংলাপ করেছি। ফলে তাদের আমরা আগেও গুরুত্ব দিয়েছি। এখানে তারা এলে আলাপ আলোচনা হতে পারতো। কিন্তু তারা যেভাবে বিষয়টিতে রিঅ্যাক্ট করেছেন, সেটা তাদের স্বভাবসুলভ নেতিবাচক রাজনীতি।
এই সরকারের অধীনে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি যাবে না বলে দলটির পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়ার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কাদের বলেন, এটাই তাদের শেষ কথা কিনা তা আমি জানি না। তারা আসুক, সরকারের পক্ষ থেকে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে সব সহযোগিতা থাকবে। তারা নির্বাচনে না এসে ভুল করবেন, নাকি সঠিক করবেন সেটা তাদের বিষয়।
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হলেও বিএনপি ছাড়াই সংসদ শুরু হচ্ছে- বিষয়টিকে কিভাবে দেখছে ক্ষমতাসীন দল। এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি তাদের নিজেদের সরিয়ে নিচ্ছে। তারা যদি অংশ না নেয় তাহলে আমরা কি তাদের জোর করে আনবো? বিএনপিতো গেলো পাঁচবছরও সংসদে ছিল না। সংসদ চলেনি?
পৃথিবীর কোন দেশে ‘পারফেক্ট’ নির্বাচন হয়েছে? এমন প্রশ্ন ফের তুলে কাদের বলেন, বাঘা বাঘা দেশেও নির্বাচন নিয়ে কথা উঠেছে। ভুল-ত্রুটি থাকতে পারে। সেটা ব্যাপার নয়। সেটাতে বৈধতার কোনো সংকট নেই।
সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আপনার বইয়ে লিখেছেন একসঙ্গে দুইবার এই দেশে কোনো দলই ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আপনার বইয়ে এমন একটি কথা কয়েকবার এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় এলো, তাহলে আপনার ভবিষ্যৎবাণী কি ভুল? এমন প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, দৃশ্যপট সবসময় এক থাকে না। আমি যখন লিখেছি তখন প্রেক্ষাপট তেমনই ছিল। এটাতো জনমতের উপর নির্ভর করে। জনমত যখন পাল্টে গেছে তখন পরিস্থিতিতো পাল্টাতে পারে তাই না?
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৮, ২০১৯
আরএম/এইচএ/