ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিএনপি

নিজস্ব সাংগঠনিক দুর্বলতাও প্রতিপক্ষ: সৈয়দ ইবরাহিম

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৩০১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৯
নিজস্ব সাংগঠনিক দুর্বলতাও প্রতিপক্ষ: সৈয়দ ইবরাহিম

ঢাকা: মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীর প্রতীক)। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান তিনি। গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষ প্রতীকে লড়েছিলেন তিনি। কিন্তু নির্বাচনে পরাজয়ের পর তার অবস্থানও ২০ দলীয় জোটের অন্য দলগুলোর মতোই; ফলাফল প্রত্যাখ্যান ও পুনর্নির্বাচন দাবি। 

সম্প্রতি রাজধানীর মহাখালীর নিউ ডিওএইচএসে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে একান্ত সাক্ষাৎকার দেন বাংলানিউজকে। সঙ্গে ছিলেন স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট মহসিন হোসেন

৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন এবং বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন ইবরাহিম।

বাংলানিউজ: নির্বাচনেতো অনুকূল ফল পেলো না ২০ দল...
ইবরাহিম: ৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচন, সমসাময়িক গণতান্ত্রিক বিশ্বের ইতিহাসে একটি কলঙ্কময় নির্বাচন হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশে বিতর্কিত নির্বাচন অতীতেও হয়েছে, ৩০ ডিসেম্বরও হলো। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ বা নির্বাচনী পর্যবেক্ষকগণ যেসব মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে কোনো একটি দেশের কোনো একটি রাষ্ট্রপতি নির্বাচন বা পার্লামেন্ট নির্বাচনকে বিতর্কিত বলে আখ্যায়িত করে থাকেন, তার বেশির ভাগই আমাদের নির্বাচনে উপস্থিত ছিল। কলঙ্কিত বা বিতর্কিত বা জালিয়াতিপূর্ণ বা প্রতারণাপূর্ণ নির্বাচনের তালিকাগুলোতে বাংলাদেশের একাধিক নির্বাচনের নাম যেমন আছে, তেমনি আরও বহু দেশের বহু নির্বাচনের নাম আছে।

২০১৪ সালের জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনের অনিয়মগুলো দেশবাসী ও পৃথিবীর সামনে উপস্থাপিত হয়েছিল সাহসী গণমাধ্যমকর্মী, তথা সাহসী ও পেশাগত দায়িত্ব পালনে বিশ্বস্ত সাংবাদিকগণের কারণেই। যেসব টিভি সাংবাদিক ক্যামেরা ও রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে এরূপ দায়িত্ব পালন করেছিলেন, যেসব পত্রিকার সাংবাদিক রিপোর্টিংয়ের মাধ্যমে এরূপ দায়িত্ব পালন করেছিলেন; তাদের অনেককেই সাহসিকতার খেসারত দিতে হয়েছে। অনেক মুদ্রিত পত্রিকা বা অনলাইন পত্রিকা সাধারণ মানুষের মোবাইলে ধারণকৃত ছবি বা ভিডিও প্রকাশ করেছে।  

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেন মিডিয়া এমন কিছু প্রকাশ করতে না পারে যার কারণে সরকার বা নির্বাচন কমিশন বিব্রত হবে, যার কারণে কারচুপি প্রকাশিত হতে পারে; সেজন্য সরকার তথা নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের দু-তিন মাস আগেই কিছু পদক্ষেপ নেয়। একাদশ জাতীয় নির্বাচনে গণমাধ্যমের ওপর নিয়ন্ত্রণমূলক একটি নির্দেশ জারি করেছিল নির্বাচন কমিশন। পরে সেটা শিথিল করা হলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটেনি। বেশির ভাগ কেন্দ্রে কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রিত ছিল সাংবাদিকদের গতিবিধি। শোনা যায়, বহু টিভি ও পত্রিকা কর্তৃপক্ষ তাদের সাংবাদিককে এ বিষয়ে সাবধান করে দিয়েছিলেন।

বাংলানিউজ: এসব অভিযোগের প্রমাণ কী?
ইবরাহিম: আমার বক্তব্য দুই প্রকার। চেয়ারম্যান বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ও চট্টগ্রাম-৫ আসনের একজন প্রার্থী হিসেবে। যে দুর্ঘটনাটি হয়েছে সেটি কিন্তু ২৯ ডিসেম্বর দিনের শেষে রাতের বেলা হয়েছে। এটি এমন একটি ঘটনা যার জন্য কোনো সাক্ষী পাওয়া মুশকিল হয়ে গেছে। সাক্ষী পাওয়া যাবে একমাত্র যদি আপনি বিভিন্ন কেন্দ্রে গিয়ে গণশুনানি করেন। তারপরেও আপনি যথেষ্ট সাক্ষী পাবেন কি-না সন্দেহ আছে। কারণ যারা সাক্ষী দেবেন তাদের নিরাপত্তা কে দেবে? তাদেরকে যে সরকারদলীয় ব্যক্তিরা হামলা করে মেরে ফেলবে না, গুলি করবে না, তাদের বিরুদ্ধে যে কেস হবে না, এরতো কোনো গ্যারান্টি নেই। কারণ এই মুহূর্তে বাংলাদেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুরোপুরিভাবে সরকারের সমর্থক। তারা নিরপেক্ষ অবস্থানে নেই।  

বাংলানিউজ: ফলাফল বিপর্যয়ে কি নেতৃত্বের ব্যর্থতা নেই?
ইবরাহিম: আপনার বৈরিতার উপাদান বা আঙ্গিক একটি নয় অনেক। রাজনৈতিক সরকার আপনার প্রতিপক্ষ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী আপনার প্রতিপক্ষ এবং নিজস্ব সাংগঠনিক দুর্বলতাও আপনার প্রতিপক্ষ। সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ হচ্ছে গত ৮টি বছর যে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে, হামলা হচ্ছে এর কারণে তারা খরচ করতে গিয়ে ঋণের দায়ে জর্জরিত। বাড়ি-ঘরে থাকতে না পেরে সামাজিকভাবে বিধ্বস্ত, এই পর্যায়ে আপনি কয়জন বৈরী প্রতিপক্ষকে হ্যান্ডেল করবেন এটার উত্তর পাওয়া মুশকিল।

বাংলানিউজ: নির্বাচন পরবর্তী ২০ দল কী ভাবছে?
ইবরাহিম: আমাদের প্রধান শরিক বিএনপি। তাদের সিদ্ধান্তের দিকেই আমরা তাকিয়ে আছি। আশা করছি শিগগির ২০ দলীয় জোটের বৈঠক হবে। আমার জানা মতে ২০ দলের আন-অফিসিয়াল প্রধান সমন্বয়ক এলডিপির সভাপতি ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ আগামী ৩ ফ্রেব্রুয়ারি থেকে ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের বাইরে থাকবেন। তার অনুপস্থিতিতে বৈঠক হবে, নাকি তিনি আসার পরে হবে সেটা জানি না। তিনি না থাকলে তার বদলে কি মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ বৈঠকে যাবেন কি যাবেন না সেটাও জানি না। আমরা আছি যখন ডাকবে তখন যাবো।
 
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৪ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৯
এমএইচ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।