একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর শুক্রবার (২২ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে সু্প্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের গণশুনানিতে সভাপতির সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মাত্র আটটি আসন পেয়েছে বিএনপি-গণফোরামসহ কয়েকটি দলের সমন্বয়ে গঠিত ঐক্যফ্রন্ট।
সেই নির্বাচনের ওপর শুনানিতে ড. কামাল হোসেন বলেন, আজকে গণশুনানিতে খালেদা জিয়ার মুক্তি একটা প্রধান দাবি। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি যুক্তিসঙ্গত। এটা নিয়ে এর আগেও জোরালো দাবি এসেছে। তাই অবিলম্বে খালেদা জিয়ার মুক্তি হওয়া উচিত। আজকের এই অনুষ্ঠান থেকেও এই দাবিটা দেওয়া দরকরা। এটা দুঃখজনক, স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর এই ধরনের দাবি আমাদের করতে হচ্ছে। গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য যারা ভূমিকা রেখেছেন, তাদের মুক্তি দাবি করতে হচ্ছে।
৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন প্রসঙ্গে ঐক্যফ্রন্ট প্রধান বলেন, এটাকে নির্বাচন বলা যায় না, নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। আমরা বুঝতে পেরেছি এটা কোনো নির্বাচন হয়নি। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের মালিকানা যেন ফিরিয়ে আনতে পারি, সেটা করতে হবে। যেন স্বৈরাচারকে সরাতে পারি। এজন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ তুলে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের বক্তৃতার প্রসঙ্গে টেনে তিনি বলেন, ৪১ জনের (প্রার্থী) কথা শোনার পরে আমরা সবাই মনে করছি এটাকে কোনো নির্বাচন বলা যাবে না, এটাকে একটা অনুষ্ঠান বলা যেতে পারে, যেখানে সরকার নির্বাচনের নামে প্রহসন করেছে। দেশের নাগরিকদের তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। সংবিধান অমান্য করেছে। গণতন্ত্র নামে যে মূলনীতি আছে সেটাকে পুরোপুরি অবমাননার পরিচয় দিয়েছে। এটা আমাদের জন্য দুঃখজনক, স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরে এসব দেখতে হচ্ছে। আর যে দলের নামে এগুলো হচ্ছে, সে দলটা জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দল। যে দল আমরাও করেছি। সেই দলের নামে এসব আমরা মেনে নিতে পারছি না। এটাকে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ বলা যাবে না। এতে আমরা লজ্জা পাই।
ড. কামাল বলেন, এগুলো না করে বলে দিক আমরা এক ব্যক্তির শাসন চালাতে চাই। এটা একদলীয় শাসনও নয়, এক ব্যক্তির শাসন, যা ইচ্ছা তাই। দলের কোনো ভূমিকাও নেই। এখানে এক ব্যক্তি আর প্রশাসনের কিছু লোক।
প্রশাসনের লোকদের উদ্দেশে ড. কামাল বলেন, আপনারা যারা চাকরি করেন, তারা শুধু অবসরেই যাবেন না, মারাও যাবেন। তখন আপনাদের উত্তরসূরীরা আপনাদের নিয়ে লজ্জাবোধ করবে। এক সেকেন্ডের জন্যও আপনাদের নিয়ে তারা গর্ববোধ করতে পারবে না এটা আপনারা মনে রাখুন। আপনারা রাষ্ট্রের কাজ থেকে সরে গিয়ে সংবিধানের যে দায়িত্ব, সেটা অমান্য করে এক ব্যক্তির সেবক হয়ে জীবন শেষ করছেন, আপনাদের লজ্জা পাওয়া উচিত। আপনাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন করুন, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখুন। নিজের চেহারা দেখে ঘৃণা হওয়া উচিত। কোটি কোটি মানুষকে মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করেছেন। নির্বাচনের নামে এগুলোতো করার প্রয়োজন ছিল না। কে বাধ্য করেছে এগুলো করতে? টাকা-পয়সা যে ব্যয় হয়েছে, সেগুলো অপচয়ের দরকার ছিল না।
কোনোদিন এদেশে স্বৈরাচার চিরস্থায়ী হতে পারেনি উল্লেখ করে ড.কামাল বলেন, আমরাও কোনোদিন স্বৈরাচার সরকারের শাসন মেনে নেইনি, এই সরকারও দীর্ঘদিন থাকতে পারবে না।
শুনানিতে সারাদেশ থেকে আসা ঐক্যফ্রন্টের ৪১ প্রার্থী নির্বাচনের আগে ও পরের অবস্থা তুলে ধরেন। ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা ছাড়াও নির্বাচনের আগে গুলিতে চোখ হারানো সিরাজগঞ্জের নারী মেরি বেগম ও ঢাকার ওয়ারীতে একটি কেন্দ্রে থাকা একজন নারী এজেন্ট তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন।
যদিও দেড় শতাধিক প্রার্থী তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বক্তব্য দিতে চেয়েছিলেন। তবে সময়ের অভাবে তা সংক্ষিপ্ত করা হয়। তবু বিকেল ৪টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শুনানি শেষ হয় সাড়ে ৫টায়। আ স ম আবদুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ অনেকেই বক্তব্য দিতে পারেননি।
শুনানিতে বিচারক হিসেবে মঞ্চে গণফোরাম সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্ট প্রধান ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, ড. নুরুল আমিন বেপারী, অ্যাড. ড. মহসিন রশীদ, সাবেক বিচারপতি আ ক ম আনিসুর রহমান খান, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী।
বাংলাদেশ সময়: ২০১২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৯
এমএইচ/এইচএ/
** ৩০ ডিসেম্বর ভোট হয়নি, গণশুনানিতে ঐক্যফ্রন্ট প্রার্থীরা