ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বাজেট

বাজেট প্রতিক্রিয়া

শুল্ক ও বিনিয়োগ প্রস্তাবে আশা পূরণ হয়নি: অধ্যাপক মুস্তাফিজুর

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৩১ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০২২
শুল্ক ও বিনিয়োগ প্রস্তাবে আশা পূরণ হয়নি: অধ্যাপক মুস্তাফিজুর

ঢাকা: মূল্যস্ফীতির চাপ ও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার অবনমনের এ সময়ে যে ধরনের শুল্ক ও বিনিয়োগ প্রস্তাব থাকার প্রয়োজন ছিল, প্রস্তাবিত বাজেট সে আশা পূরণ করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ও অর্তনীতিবিদ অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান।

বৃহস্পতিবার (০৯ জুন) রাতে বাজেট প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।

এ দিন বিকেলে জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন,  প্রস্তাবিত বাজেটের প্রারম্ভিক বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী তিনটি চ্যালেঞ্জের কথা স্বীকার করেছেন। বাজেটে মূল্যস্ফীতির চাপ আছে, মানুষের কোভিড-১৯ থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এবং সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ওপর চাপ ফেলেছে, এগুলো বলা হলো। বাজেট প্রস্তাবনায় তার কোনো প্রতিফলন আমরা দেখতে পাইনি। যেমন, আমদানি শুল্ক ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক কমানোর তেমন কোনো কিছু দেখিনি। আমরা দেখেছি সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে পেনশন বাদ দিলে বরং কমে যাবে।

এছাড়া বিনিয়োগের যে রেয়াতি সুবিধা, সেটা ১০ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে সুযোগটা পাবে যারা উচ্চ, মধ্যবিত্ত শ্রেণির তারা। কিন্তু নিম্নবিত্তরা এসব সুযোগ গ্রহণ করতে পারে না।

অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কোভিডের সময় সর্বোচ্চ করসীমা ৩০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে নামানো হয়েছিল। সেটা সেভাবে রেখে দেওয়া হয়েছে। উচিত ছিল ৩০ শতাংশে নিয়ে যাওয়া। এ দিক থেকে আমাদের মনে হয়েছে, মূল্যস্ফীতির চাপে সময়ে ও সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার অবনমনের এ সময়ে বাজেট যে ধরনের শুল্ক প্রস্তাব ও বিনিয়োগ প্রস্তাব থাকার প্রয়োজন ছিল, সে আশা পূরণ করতে পারেনি। তবে আমদানি প্রতিস্থাপক শিল্পের জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সেটা ভালো উদ্যোগক্তাদের প্রতিরক্ষণ দেওয়ার জন্য। শুল্ক বাড়ানো হয়েছে আমদানি পর্যায়ে। পাশাপাশি তারা যেসব পণ্য আমদানি করে সেগুলোতে শুল্ক কমানো হয়েছে।

কালো টাকা সাদা করার বিষয়ে তিনি বলেন, বাইরে থেকে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এটা একেবারেই ঠিক হয়নি। দুর্নীতি করে যারা টাকা বাইরে নিয়েছেন, রপ্তানি করে যারা টাকা দেশে নিয়ে আসেননি এবং দেশ থেকে টাকা পাচার করেছেন তাদের স্থাবর-অস্থাবর সব কিছুতেই একটা ছাড় দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি এটা ঠিক হয়নি।

বাজেটে ঘাটতি সম্পর্কে অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ৫.৫ শতাংশ ঘাটতি তেমন বড় কিছু না। তবে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে অনেক ঋণ নিতে হবে সরকারকে। এ ক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যাতে বেসরকারিখাতে যেন ঋণ প্রাপ্তিতে সমস্যা না হয়। কারণ এখন এমন একটা সময় সঞ্চয়ের প্রবণতার ওপর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে মূল্যস্ফীতির কারণে। প্রকৃত সঞ্চয়ের হার তো নেগেটিভ হয়ে গেছে। এরকম একটা পরিস্থিতিতে ব্যাংকের তারল্যের সমস্যা হতে পারে। সেখানে সরকার এতো ঋণ নিলে ব্যক্তিখাতেও ঋণের সমস্যা হবে। এ সমস্ত বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন আছে। আমরা মনে করি, বৈদেশিক ঋণ দিয়েই বেশি ঘাটতি মেটানো দরকার।

কোভিড-১৯ অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এবারের বাজেটের আকার যেমন বড়, তেমনি এ বাজেটে ঘাটতিও ধরা হয়েছে বড়। অনুদান বাদে এই বাজেটের ঘাটতি দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশের সমান। আর অনুদানসহ বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দুই লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৪০ শতাংশের সমান।

চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জন্য ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। তবে সংশোধিত হয়ে সেই বাজেটের আকার কমে দাঁড়ায় ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকায়।

বাংলাদেশ সময়: ২১২২ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০২২
জিসিজি/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।