ঢাকা, বুধবার, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ২৫ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

অনেক প্রাপ্তির সিরিজে একটু হতাশা থাকবে না?

অঘোর মন্ডল, স্পেশালিস্ট স্পোর্টস রাইটার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৫৩ ঘণ্টা, মে ৯, ২০১৫
অনেক প্রাপ্তির সিরিজে একটু হতাশা থাকবে না? ছবি : শোয়েব মিথুন/বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: টস জিতে কেন আগে ফিল্ডিং করলো বাংলাদেশ! এই নিয়ে অনেক শব্দ খরচ হয়েছে। তারপরও ধাঁধাটা রয়েই গেলো! কেননা ম্যাচ শেষে বাংলাদেশ অধিনায়ক তাঁর সিদ্ধান্তকেই সঠিক বলেই মনে করছেন।

করতেই পারেন। করার অনেক কারণও খুঁজে পেতে পারেন মুশফিক। ক্রিকেট এমন একটা খেলা যা আপনাকে রোজ কিছু না কিছু শেখায়। ভুল শুধরে নেয়ার শিক্ষাটাও দেয় ক্রিকেট। মুশফিকুর রহিমের সিদ্ধান্ত ভুল ছিল কিনা সেই তর্কে না গিয়ে আরো কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে বাংলাদেশকে। কারণ, দ্বিতীয় টেস্টটা শেষ হলো সাড়ে তিনদিনে। বাংলাদেশ হারলো ৩২৮ রানের বড় ব্যবধানে। এর চেয়ে বড় ব্যবধানে হারের নজিরও আছে বাংলাদেশের। তবে এই সিরিজে বাংলাদেশ যে ক্রিকেট খেলছিল তাতে শেষটা এরকম হবে সেটা কেউ আশা করেনি। হারের চেয়ে বড় কথা সিরিজের এই ম্যাচটায় বাংলাদেশ তেমন কোনো লড়াই করতে পারলো না! শুরু থেকেই ব্যাকফুটে চলে গেলো। তারপর আর কোমর সোজা করে দাঁড়াতে পারলো না!

টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়া ছিল মুশফিকের খুব সাহসী সিদ্ধান্ত। কিন্তু  ম্যাচ শেষে মুশফিক এবং ম্যাচের মাঝখানে তাঁর টিমমেটরা যা বলেছেন সেটা দুর্বল মানসিকতার বহির্প্রকাশ! ‘আগে ব্যাট করলে আমরা দ্রুত কয়েকটা উইকেট হারাতে পারতাম! যে কারণে ফিল্ডিং নিয়েছিলাম। ’  --এই হচ্ছে মুশফিক এবং তাঁর দলের ক্রিকেটারদের গড়পড়তা ব্যাখ্যা। অর্থাৎ, পরোক্ষভাবে স্বীকার করে নিলেন পাকিস্তানের বোলিং অ্যাটাকের মুখোমুখি হতে তাঁদের ভয় ছিল!

টেস্ট ক্রিকেটে একটা কথা সব সময় বলা হয়: ‘প্রথম দুটো ঘন্টা বোলারদের। ঐ সময়টুকু দেখে শুনে খেললে পরের সময়টা পড়ে থাকে ব্যাটসম্যানদের জন্য। যেখানে তারা মস্তানি দেখান। পাকিস্তানি বোলারদের প্রথম সেশনটা সর্তকভাবে খেলা সম্ভব ছিল না--এই নেতিবাচক ভাবনা কেন বাংলাদেশ দলের মধ্যে ঢুকলো বোঝা গেলো না! আবার  প্রথম দু’ঘন্টায় পাকিস্তানের ইনিংসে গোটা কয়েক উইকেট তুলে নিয়ে ওদেরকে চাপে ফেলে দেয়া যাবে এমন ভাবনা থেকে যদি ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে তাহলে প্রশ্ন: সেই পেস বোলার কি বাংলাদেশ দলে আছে? উত্তরে বার বার বলা হচ্ছে: দুর্ভাগ্য, শাহদাত হোসেনকে ইনিংসের প্রথম ওভারেই হারাতে হয়েছে বাংলাদেশকে। তা নাহলে...!

যে বোলার পুরোপুরি ফিট না, তিনি দলে থাকলে কি করতেন সেটা পরের বিষয়। কিন্তু তিনি নিজেই প্রমাণ করে দিয়েছেন ম্যাচে ফিট তিনি ছিলেন না! শাহদাত হোসেন রাজীব আর মোহাম্মদ শহীদ এই দুই বোলার পাকিস্তানকে প্রথম দু’ঘন্টায় শেষ করে দেবেন সেই আশায় আগে ফিল্ডিং নেওয়া ঠিক, নাকি আগের ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসে তামিম-ইমরুলের যে জুটি ৩১২ রান তুলে দিলেন ওপেনিংয়ে তাঁদের উপর আস্থা রেখে আগে ব্যাট করবেন? ডাব্লিউ জি গ্রেসের আগে ব্যাট করার থিওরি পড়ার দরকার নেই, মোটামুটি যারা ক্রিকেট দেখেন-ট্যাখেন তারাও বলবেন আগে ব্যাট করা অনেক নিরাপদ। ৫৫৭ রান স্কোর বোর্ডে দেখতে দেখতে ইনিংস ওপেন করতে নামা, আর ম্যাচের শুরুতে ওপেন করতে নামা এক কথা নয়, সেটা বোঝানোর জন্য বাড়তি শব্দ খরচ করার দরকার পড়বে না। কিন্তু তামিম-ইমরুলকে কিন্তু পাকিস্তানের বড় একটা স্কোর দেখতে দেখতে ইনিংস ওপেন করতে নামতে হলো! পাল্টা একটা যুক্তি হয়তো দাঁড় করানো যাবে: খুলনায় ২৯৬ রানে পিছিয়ে থেকেই তো তামিম-ইমরুল অতো বড় রানের স্কোর গড়েছিলেন। হ্যাঁ, তাই। কিন্তু খুলনা আর মিরপুরের উইকেটের চরিত্র এক নয়, সেটা অজানা নয় বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের।

প্রথম দিনের প্রথম সেশনে পাকিস্তানি অ্যাটাক সামাল দেওয়া কঠিন হবে এই ভাবনাটা যদি নেতিবাচক ভাবনা না হয়, তাহলে আরো একটা প্রশ্ন থাকছে। পাকিস্তান দলে ইয়াসির শাহ নামের একজন লেগ স্পিনার আছেন সেটা নিশ্চয়ই ভুলে যাওয়ার কথা নয় বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের। মিরপুরের উইকেট চতুর্থ কিংবা পঞ্চম দিনে ভাঙবে, বল টার্ন করবে সেটাও অজানা নয়। তাহলে চতুর্থ ইনিংসে ইয়াসির-হাফিজকে খেলার ঝুঁকি নেওয়া কি অনেক বেশি দু:সাহস হয়ে যায় না? প্রথম সেশন পার করা নিয়ে যাদের এতো দুশ্চিন্তা, তারা কি একবারও ভাববে না চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করা সব সময় কঠিন কাজ!

প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন আরো আছে। তাইজুল-সাকিব-শুভাগত হোমদের স্পিনে যারা বেশি ভরসা রাখলেন একাদশ ঠিক করতে গিয়ে, তারা কেন প্রতিপক্ষকে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে ঠেলে দেবে না! আবার যারা ব্যাটিং গভীরতা বাড়ানোর কথা বলে টেস্টে জন সাতেক ব্যাটসম্যান নিয়ে মাঠে নামলেন, তারা কেন প্রথম দিনের প্রথম সেশনটা নিয়ে এতো দুশ্চিন্তায় ভুগবেন! দিনশেষে এরকম অনেক প্রশ্নে এফোঁড়-ওফোঁড় হতে পারে অধিনায়ক মুশফিকের সিদ্ধান্ত। কিন্তু সব দায় কি মুশফিকের একার? যদিও অধিনায়ক হিসেবে প্রশ্নের উত্তরটা তাঁকেই দিতে হচ্ছে। কিন্তু জোর দিয়ে বলা যায়, টস জিতে আগে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত মুশফিকের একার নয়। কিন্তু দায়টা তাঁকেই নিতে হবে। কারণ, তিনি অধিনায়ক। ক্রিকেটে অধিনায়কের মুকুট যার মাথায় ওঠে তাঁকে কিছু কাঁটার জ্বালাও সইতে হয়। যন্ত্রনায় কাতর হতে হয়। কিন্তু তার নীরবে গোঙানির শব্দটা দূর থেকে শোনা যায় না।

আবারও লিখতে হচ্ছে টস জিতে ফিল্ডিং করাটা যদি মুশফিকের সাহসী সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে আরো একটু সাহস দেখিয়ে তিনি বলতেই পারতেন, ‘সাহস করে সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম। কিন্তু ক্লিক করলো না। ’ কিন্তু বাংলাদেশ অধিনায়ক নিজের সিদ্ধান্তে ভুল কিছু দেখছেন না! কিন্তু ক্রিকেটবিশ্ব দেখলো ম্যাচটা বাংলাদেশ সাড়ে তিনদিনেই হারলো! আগে ব্যাট করলে ম্যাচের আয়ু সাড়ে তিনদিনের জায়গায় সাড়ে চারদিনও হতে পারতো! তবে কি হতে পারতো সেটা ভাবা এখন অর্থহীন। মিরপুর টেস্টটাই এখন অতীত।

পাকিস্তানের বিপক্ষে অনেক কিছু পাওয়ার এই সিরিজে একটু হতাশাও থাকবে না তা কী করে হয়! মুশফিকের টস জিতে ফিল্ডিং নেয়ার সিদ্ধান্ত সেই হতাশাটা একটু বাড়িয়েই দিলো!

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, মে ০৯, ২০১৫
সম্পাদনা: জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।