স্টেডিয়াম থেকে ফিরে: বর্তমানে ক্রিকেট খেলা এক উৎসবের নাম। পহেলা বৈশাখের মতো এ উৎসব পুরনো না হলেও ১৯৯৯ সালের পর গেল ১৬ বছরে এর অবিশ্বাস্য জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
দল-মত-পথ ছেড়ে ধর্ম-বর্ণ বিদ্বেষ ভুলে এ উৎসবে যোগ দিতে কেউ কার্পণ্য করে না। আর এ উৎসবের প্রাণকেন্দ্র হলো স্টেডিয়াম। সেখান থেকে গণমাধ্যমের কল্যাণে তাৎক্ষণিক উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র।
সেই উৎসবে সশরীরে যোগ দিতে উৎসাহীরা ভিড় জমায় স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে। ফলে গ্যালারিতে দর্শক ও জনতার চাপ বাড়ে। উৎসুক জনতা শামলাতে নিয়োজিত থাকে পুলিশ, গোয়েন্দা, আর্মড পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাহিনীর সদস্যরাও মেতে উঠেন ক্রিকেট আনন্দে। বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা চার-ছক্কা মারলে তারাও অবচেতন মনে হাততালি দেন, সাধারণ দর্শকের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে 'বাংলাদেশ'-'বাংলাদেশ' বলে চিৎকার করেন। প্রিয় দলটির কোনো ফিল্ডার ক্যাচ মিস করলে আফসোস করেন, ব্যথিত হন। আবার দলের পক্ষে কোনো বোলার উইকেট নিলে উল্লাসে ফেটে পড়েন।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ বনাম জিম্বাবুয়ের খেলা চলার সময় গ্যালারি ঘুরে এমন চিত্রই লক্ষ্য করা যায়।
এ সময় গ্যালারিতে দায়িত্বরত রাজধানীর পল্লবী থানার দুই উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আব্বাস উদ্দিন ও শরীফুল ইসলামের কাছে জানতে চাওয়া হয়- বাইরের ডিউটি ও গ্যালারির ডিউটির মধ্যে তফাৎ কোথায়?
তারা জানান, বাইরের ডিউটিতে কিছু কিছু সময় ঝুঁকি থাকে। দাঙ্গা-হাঙ্গামা সামাল দিতে হয়। মিছিল-মিটিংয়ে থাকতে হয়, যা মাঝে মাঝে ঝঁকিপূর্ণ মনে হয়। কিন্তু গ্যালারির ডিউটিতে কোনো ঝুঁকি নেই, ডিউটির পাশাপাশি খেলা দেখা যায় এবং নির্মল আনন্দও পাওয়া যায়।
এসআই শরীফুল ইসলাম বলেন, বিশেষ করে বাংলাদেশ দল যখন ভালো খেলে, তখন ভীষণ আনন্দ লাগে। দেশের প্রতি মায়া বেড়ে যায়, এই দেশকে আরও বেশি ভালোবাসতে ইচ্ছে করে। গর্ব করে বলতে ইচ্ছে করে আমরা বাঙালি, এই দেশে আমাদের জন্ম।
তিনি বলেন, ‘গ্যালারিতে ডিউটির সময় ক্রিকেটের উচ্ছ্বাস-উত্তেজনায় নিজেদের আর পুলিশ মনে হয় না, পাবলিক মনে হয়, দর্শক মনে হয়। উত্তেজনা ধরে রাখতে না পেরে আমরাও সাধারণ দর্শকের মতো আনন্দ উদযাপন করি। আমার মনে হয় এটাই দেশপ্রেম।
গ্যালারি ঘুরে ঘুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য এনায়েত, সাইফুল, হাবিব, শাহজালাল, হাসেমসহ আরও অনেকের সঙ্গেই কথা হয়। তারা প্রায় একই রকম প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
রাজারবাগ পুলিশ লাইনের নারী কনস্টেবল ইয়াসমিন ও রেবেকা বাংলানিউজকে জানান, বাইরের পাবলিক ডিউটির চেয়ে গ্যালারির ডিউটি অনেক স্বস্তিদায়ক। এখানে ভিন্নরকম এক অনুভূতি কাজ করে। কখন যে ডিউটি টাইম শেষ হয়ে যায়, টেরই পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশ সময়: ১২৪৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১১, ২০১৫
টিআই/আরআই