ঢাকা: আগামী বছরের ২৭ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশে শুরু হচ্ছে আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। যুবাদের ব্যাটে-বলের এ লড়াই শেষ হবে ১৪ ফেব্রুয়ারি।
লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার আগে লাল-সবুজের যুব প্রতিনিধিদের ক্রমান্বয়ে উদ্ভাসিত হওয়ার সোনালী অতীত স্মরণ করতে পারেন সমর্থকেরা।
আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যুবারা এই পর্যন্ত তিনবার প্লেট চ্যাম্পিয়ন ও তিনবার কাপ পর্বের কোয়ার্টার ফাইনালিস্ট। প্লেট চ্যাম্পিয়নশিপ হলো গ্রুপ পর্ব থেকে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে বাদ পড়ে যাওয়া দলগুলোকে নিয়ে খেলা।
আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিলো ১৯৮৮ সালের আসরে। বাংলাদেশের সরাসরি না বলে টাইগার ক্রিকেটারদের যাত্রা হয়েছে বলা যায়। তখনকার নিয়মানুসারে ওই আসরে আইসিসির সহযোগী একাদশের (সবগুলো সহযোগী দেশ থেকে ক্রিকেটার নিয়ে গঠিত একমাত্র একাদশ) ১৪ সদস্যের স্কোয়াডে জায়গা পেয়েছিলেন বাংলাদেশের আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও হারুনুর রশীদ। একাদশটি খেলেছিল সাতটি ম্যাচ। কিন্তু কোনো ম্যাচেই জয়ের দেখা পায়নি বুলবুল-রশিদের দল।
১০ বছর বিরতির পর ১৯৯৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকায় আবার মাঠে গড়ায় আইসিসি অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ, যেখানে বাংলাদেশ প্রথমবারের মত একক দল হিসেবে অংশ নেয়। এই আসরে গ্রুপ পর্বে পুল ‘ডি’-এ থাকা বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল নিউজিল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও নামিবিয়া। গ্রুপ পর্বে টাইগাররা ম্যাচ খেলেছিল তিনটি। এরমধ্যে একটি ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হারলেও বাকি দু’টি ম্যাচে ইংল্যান্ড ও নামিবিয়ার বিপক্ষে জিতে জায়গা করে নেয় প্লেট পর্বে। প্লেট পর্বের তিন প্রতিযোগী কেনিয়া, আয়ারল্যান্ড ও পাপুয়া নিউগিনিকে হারিয়ে টাইগার যুবারা উঠে যায় প্লেট পর্বের ফাইনালে। আর ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ছয় উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মত প্লেট ফাইনাল জিতে চ্যাম্পিয়নের মুকুট মাথায় তোলে আল শাহরিয়ার রোকনের দল।
১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হলেও পরের দুই আসর ২০০০ ও ২০০২ সালে প্লেট রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের।
টানা দুই আসর শিরোপা বঞ্চিত থাকলেও পরের আসর ২০০৪ সালে ঠিকই শিরোপা উদ্ধার করে নেয় বাংলাদেশের যুবারা। সে আসরের প্লেট পর্বের ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৮ রানে হারিয়ে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় প্লেট শিরোপা জেতে শামসুল রব্বানির দল।
পরের আসর ২০০৬ সালে প্রুপ পর্বে ‘এ’ তে থাকা বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড ও উগান্ডা। এই আসরে যেন আরও তেজোদ্দীপ্ত বাংলাদেশের যুবারা। প্রথম ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারানোর পর পরের ম্যাচে পাকিস্তান ও শেষ ম্যাচে উগান্ডাকে হারিয়ে প্রথমবারের মত সুপার লিগ বা কাপ পর্বের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠেন সাকিব-তামিম-মুশফিকরা। তবে, সুপার লিগ কোয়ার্টার ফাইনালে এসে ইংল্যান্ডের কাছে পাঁচ উইকেটে হেরে গেলে টাইগার যুবাদের প্লেট চ্যাম্পিয়নশিপ সুপার লিগে খেলতে দেওয়া হয়। সেখানকার প্লে অফ সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৪ উইকেটে জয় তুলে নেয় লাল-সবুজের দল। এরপর সুপার লিগের প্লে অফ ফাইনালেও লঙ্কানদের সঙ্গে ৯৮ রানে জিতে যায় বাংলাদেশ।
এরপরের ২০০৮ সালের আসরে ‘ডি’ গ্রুপে খেলে বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্বে টাইগারদের প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড, বারমুডা ও আয়ারল্যান্ড। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে বারমুডার বিপক্ষে ১৭৮ রানের বড় জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচেও আইরিশ যুবাদের বিপক্ষে ৮ উইকেটের বড় জয় পায় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। জয়ের ধারা থাকে শেষ ম্যাচ পর্যন্তও। তৃতীয় ম্যাচে ইংলিশদের বিপক্ষে ১৩ রানের জয়ের পর গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মত টাইগাররা উঠে যায় সুপার কোয়ার্টার ফাইনালে। গ্রুপ পর্বে অদম্য খেলা উপহার দিলেও সুপার কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ২০১ রানের বড় ব্যবধানে হেরে গেলে পঞ্চমস্থান নির্ধারণী ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় নাসির-আশিকদের দল। তবে, পঞ্চমস্থান নির্ধারণী ওই ম্যাচটিতে কোনো ফলাফল হয়নি।
২০১০ সালের অষ্টম আসরে কাকতালীয়ভাবে ওই ‘ডি’ গ্রুপে যায়গা হয় এনামুল হক বিজয়, সৈকত ও সাব্বিরদের। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের যুবাদের প্রতিপক্ষ ছিল পাকিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও পাপুয়া নিউগিনি। এবারের আসরের গ্রুপ পর্বে বিগত দিনগুলোর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। এ পর্বের খেলায় একমাত্র পাপুয়া নিউগিনি ছাড়া বাকি দু‘টি দল পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয়ের দেখা পায়নি ১৯৯৮ ও ২০০৪ এর প্লেট শিরোপা জয়ীরা। সুপার কোয়ার্টার ফাইনালে না উঠতে পেরে নিয়মানুযায়ী জায়গা হয় প্লেট কোয়ার্টার ফাইনালে, যেখানে তাদের সঙ্গী হয় হংকং। প্লেট কোয়ার্টার ফাইনালে হংকংকে ৪ উইকেটে হারানোর পর প্লেট সেমিফাইনালে পাপুয়া নিউগিনিকে ১৬৮ আর প্লেট ফাইনালে আয়ারল্যান্ডকে ১৯৫ রানে হারিয়ে তৃতীয় প্লেট শিরোপা জেতে বাংলাদেশ।
২০১২ সালের আসরে অবশ্য বাংলাদেশের যুবাদের পারফরমেন্স ছিল চোখে পড়ার মতো। এই আসরেও ওই ‘ডি’ গ্রুপে থাকা বাংলাদেশ দল গ্রুপ পর্বের ৩ ম্যাচের দু’টিতে জয় নিয়ে উঠে যায় সুপার কোয়ার্টার ফাইনালে। গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও নামিবিয়া। প্রথম ম্যাচটি লঙ্কানদের বিপক্ষে ২৫ রানে জয়ের পর টাইগাররা দ্বিতীয় ম্যাচে প্রোটিয়া যুবাদের কাছে হেরে যায় ১৩৩ রানের বড় ব্যবধানে। এরপর, তৃতীয় ম্যাচে নামিবিয়াকে ৭ উইকেটে হারায় তাসকিন, নাইম ও মাসুমদের দল। নামিবিয়াকে হারিয়ে তৃতীয়বারের মত সুপার বা কাপ পর্বের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে তাসকিনরা প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় শক্তিশালী অস্ট্রেলিয়াকে। কোয়ার্টার ফাইনালে দলটির বিপক্ষে ৫ উইকেটে হারের পর পঞ্চমস্থান নির্ধারণী ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪ উইকেটে হেরে যায় বাংলাদেশ। এতে তাদের সপ্তমস্থান নির্ধারণীতে পাকিস্তানের মুখোমুখি হতে হয়। তবে তাদের বিপক্ষে সমানসংখ্যক উইকেটে জয় পেলে সপ্তমস্থান নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয় টাইগার যুবাদের।
সবশেষ ২০১৪ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপের দশম আসরে ‘বি’ গ্রুপে থাকা বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান ও নামিবিয়া। প্রথম দুই ম্যাচে আফগানিস্তান ও নামিবিয়ার বিপক্ষে জয়ের পর তৃতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হেরে গেলে প্লেট পর্বের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে মুস্তাফিজ, মেহেদি ও রাতুলদের দল। আর প্লেট কোয়ার্টার ফাইনালে কানাডার বিপক্ষে ৯ উইকেট, সেমিফাইনালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৭২ রানে জয়ের পর নবমস্থান নির্ধারণী প্লে অফে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৭ রানে জয় তুলে নেয় লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।
বাংলাদেশ সময়: ০২২১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
এইচএল/এইচএ