ঢাকা: আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’। সারা বিশ্বের কোটি কোটি প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য পরম আকাঙ্ক্ষিত একটি দিন।
যদি, ফাইনালের মঞ্চে নিজেদের সেরাটা খেলে শিরোপা জিতেই নেয় বাংলাদেশের খুদে টাইগাররা, তারপরও একটা অস্বস্তি কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। সে প্রসঙ্গে পরে আসছি।
ইতিহাস সৃষ্টি করে মেগা এই ইভেন্টে বাংলাদেশের যুবারা প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালের বাধা ডিঙিয়ে সেমিফাইনালে উঠেছে। বিশ্বকাপ মিশনে নেমে গ্রুপপর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই তারা হারায় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকাকে। পরের ম্যাচগুলো জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে হারিয়ে দেয় স্কটল্যান্ড আর চমক জাগানো দল নামিবিয়াকে। যে নামিবিয়া গতবারের চ্যাম্পিয়ন দ. আফ্রিকাকে হারিয়ে স্বাগতিক বাংলাদেশকে হুমকি দিয়ে রেখেছিল, সেই নামিবিয়াকে ক্রিকেট শিখিয়ে ছাড়ে মেহেদি হাসান মিরাজ, জয়রাজ শেখ, সাইফ হাসান, সালেহ আহমেদ শাওন, পিনাক ঘোষ, নাজমুল হোসেন শান্ত, জাকির হাসানরা।
গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই বাংলাদেশের যুবারা কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে। কোয়ার্টারে বাংলাদেশ প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় আসরের আরেক বিস্ময় জাগানিয়া দল নেপালকে। টাইগারদের বেশ সমীহ করেই ব্যাটিংয়ে নামে নেপালিরা। তবে, বাংলাদেশের ব্যাটিং ইনিংসেও কিছুটা এগিয়ে যায় তারা। টাইগারপ্রেমীদের মনে যখন শঙ্কা-পারবেতো মেহেদির দল, তখন যুবাদের এই দলপতি আর উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জাকির হাসান দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং করে অনবদ্য জুটি গড়ে আর অবিচ্ছিন্ন থেকেই জয় পাইয়ে দেয় টাইগার যুবাদের। এতোদিন যেই কোয়ার্টার ফাইনাল ছিল বাংলাদেশের কাছে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার মতো!
তবে, বাংলাদেশি বীর সাঁতারু ব্রজেন দাস যেভাবে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছিলেন, তার দেশের ক্রিকেটাররাও অনায়াসে কোয়ার্টার ফাইনাল পাড়ি দিতে পেরেছে। এবার সেমিতে স্বাগতিকদের সামনে পাকিস্তানকে হারানো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর সেমিতে এই দলটিকেই চেয়েছে স্বাগতিকরা।
কেনই বা চাইবে না? ক্যারিবীয় যুবাদের নাড়িনক্ষত্র বেশ ভালোই জানা টাইগারদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এখনো পর্যন্ত ১৭ বার মুখোমুখি হয়ে ১২ ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশের যুবারা। চলমান বিশ্বকাপের ঠিক আগেই নিজেদের ঝালিয়ে নিতে ক্যারিবীয় যুবাদের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজও খেলেছে মেহেদি হাসান মিরাজের দল। তাতে এবারের সেমিফাইনালিস্ট দলটিকে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা দিয়েছিল স্বাগতিকরা। যুব বিশ্বকাপের মঞ্চেও তিনবার মুখোমুখি হয় দল দু’টি। সেখানেও দু’বার শেষ হাসি টাইগারদের। শুধু ২০১০ বিশ্বকাপে মাত্র ১ রানের ব্যবধানে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে হেরেছিল বাংলাদেশের যুবারা।
আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে অনূর্ধ্ব-১৯ যুব বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ। ক্যারিবীয়দের আরেকবার হারিয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করতে চায় মিজানুর রহমানের শিষ্যরা। ফাইনাল ম্যাচ শেষে ট্রফি তুলে দিতে উপস্থিত থাকবেন ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সভাপতি জহির আব্বাস। একই সঙ্গে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও সেখানে উপস্থিত থাকার কথা।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানান, ‘আইসিসি সভাপতি জহির আব্বাস ফাইনাল ম্যাচে পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে থাকবেন। নিয়মানুযায়ী তিনি চ্যাম্পিয়ন দলের হাতে পুরস্কার তুলে দেবেন। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও থাকবেন ফাইনাল ম্যাচে। বাংলাদেশের সেমিফাইনাল ম্যাচেই অবশ্য তিনি আসতে চেয়েছিলেন। তবে স্বাগতিক দলের যুবারা তাকে ফাইনাল ম্যাচের দিনই (১৪ ফেব্রুয়ারি) মাঠে দেখতে চাইছে। ’ দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বাংলাদেশের যুবারা এতটাই আত্মবিশ্বাসী যে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে আগাম সংকেত দিয়ে রেখেছে ‘আমরাই যাচ্ছি ফাইনালে’।
টাইগার যুবাদের বিশেষ অনুরোধে বিশ্ব ভালবাসা দিবসের দিন খেলাপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী খুদে টাইগারদের ভালবাসার টানে মাঠে যাবেন। শিরোপাটাও যদি টাইগারদের হাতেই উঠে, তাতে স্বস্তির পাশাপাশি কিছুটা অস্বস্তিও ভর করবে স্বাগতিক শিবিরে। এর আগে বহুবার মাঠে বসে বাংলাদেশের খেলা উপভোগ করতে দেখা গেছে শেখ হাসিনাকে। ফুটবল কিংবা ক্রিকেট বাংলাদেশ ভালো-মন্দ যে পারফর্মই করুক না কেন, তাদের উৎসাহ দিতে মাঠে ছুটে গিয়েছেন তিনি। পুরস্কার বিতরণী মঞ্চেও তিনি অনেকবারই লাল-সবুজের প্রতিনিধিদের হাতে তুলে দেন পুরস্কার। তবে, এবার আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী শেখ হাসিনা অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে পারছেন না। সেটি যাবে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) সভাপতি জহির আব্বাসের হাত ধরে।
ইতোমধ্যেই আইসিসির এই নিয়মকে নিয়ে শোরগোল শুরু হয়ে গেছে। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালের প্রসঙ্গ টানছেন ক্রিকেটের অনেক খুদে বোদ্ধারাও। তাদের মতে, আইসিসির এই নিয়মটি শুধুমাত্র লোক দেখানো বা কাগজে-কলমে। অনেকের মতে, খুব বেশি দূর যেতে হবেনা। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালের পুরস্কার বিতরণীর কথা মনে করলেই চলবে। সংস্থাটির হর্তাকর্তারাই কখনো কখনো এমন নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের আসরে সে সময়কার আইসিসি চেয়ারম্যান শ্রীনিবাসন অন্যায়ভাবে আইসিসির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মোস্তফা কামালকে বিশ্বকাপ জয়ী দলের হাতে পুরস্কার তুলে দিতে দেননি। এমসিজিতে উপস্থিত প্রায় এক লাখ দর্শকের দুয়ো শুনেও নির্লজ্জভাবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার হাতে শিরোপা তুলে দেন শ্রীনি। কয়েক মিনিটের সিদ্ধান্তেই যে সেটা হয়নি বুঝতে আর কারো বাকি ছিল না। আইসিসির নিয়ম মানা হয়নি সেখানে।
এদিকে, ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় ১৯৯৬ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে প্রায় ৬৭ হাজার দর্শকের উপস্থিতিতে ফাইনালে মাঠে নামে অস্ট্রেলিয়া এবং শ্রীলঙ্কা। ১৭ মার্চ সে ফাইনালে মার্ক টেইলর, রিকি পন্টিং, মার্ক ওয়াহ, স্টিভ ওয়াহ, শেন ওয়ার্ন, মাইকেল বিভান, ড্যামিয়েন ফ্লেমিং আর গ্লের ম্যাকগ্রাদের অস্ট্রেলিয়াকে ২২ বল হাতে রেখে ৭ উইকেটের ব্যবধানে হারায় সনাথ জয়সুরিয়া, কালুভিতরানা, ডি সিলভা, রানাতুঙ্গা, কুমার ধর্মসেনা, রোশন মহানামা আর মুরালিধরনদের শ্রীলঙ্কা। শিরোপা জয়ী লঙ্কানদের হাতে ট্রফি তুলে দেন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো। লঙ্কানদের অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুঙ্গা তাঁর হাত থেকে শিরোপা নেন।
অনেক ক্রিকেট পাগলদের নিজস্ব চাওয়া, বাংলাদেশের যুবারা আইসিসির মেগা এই ইভেন্টের ফাইনালে উঠুক এবং শিরোপা জিতে বাংলাদেশের হয়ে আরেকটি নতুন ইতিহাস গড়ুক। আর সেই নতুন ইতিহাসকে স্মরণীয় করে রাখতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকেই যেন বিশ্বশিরোপা তুলে নিতে পারে মিরাজ বাহিনী। তবে, সেক্ষেত্রে বিশ্ব ভালবাসা দিবসের দিনে আইসিসির নমনীয়তা আশা করছেন তারা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩০ ঘণ্টা, ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৬
এমআর