ঢাকা: ক্রমেই ঔজ্জ্বল্য বাড়ছে বাংলাদেশ ক্রিকেটের। তারই প্রমাণ এবারের অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ।
যুব বিশ্বকাপ মিশন সফলভাবে শেষ করার পর এই অভিমত দিয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দুই নির্বাচক ও সাবেক তারকা ক্রিকেটার মিনহাজুল আবেদিন নান্নু ও হাবিবুল বাশার সুমন।
তারা বলছিলেন, অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের আগের আসরগুলোতে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেই টাইগার যুবাদের বিদায় নিতে হয়েছিল। এই আসরে ইতিহাস সৃষ্টি করে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে উঠলো ক্ষুদে টাইগাররা।
বিশ্বকাপের এবারের আসরে গ্রুপ পর্ব থেকেই একরকম অপ্রতিরোধ্য ছিল মিরাজ বাহিনী। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার যুবাদের ৪৩ রানে হারানোর পর কক্সবাজারে পরের দুই ম্যাচে স্কটল্যান্ডকে ১১৪ রানে এবং নামিবিয়াকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারায় ক্ষুদে টাইগাররা। এতে চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত হয়ে যায়।
এরপর, কোয়ার্টার ফাইনালে এবারের আসরে অন্যতম চমক দেখানো দল নেপালকে ৬ উইকেটে হারিয়ে বাংলাদেশ উঠে যায় স্বপ্নের সেমিফাইনালে। ওই জয়ে সম্ভাবনা জাগে আরেক ইতিহাস সৃষ্টির। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটা সম্ভব হয়নি। সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে বাংলাদেশ হেরে যায় ৩ উইকেটে। ছিটকে পড়ে শিরোপার লড়াই থেকে।
তবে, এই পরাজয়েও মন খারাপের কিছু নেই বলে মনে করেন সাবেক ক্রিকেটাররা। যেমনটি বলছিলেন সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন, ‘এবারের বাংলাদেশ যুব দল আগের যেকোনো আসরের তুলনায় অনেক উজ্জ্বল ছিল। প্রতিটি ম্যাচই তারা অসাধারণ খেলেছে। তাদের পারফরম্যান্সে এবারের আসরে কোয়ার্টার ও সেমিফাইনাল প্রত্যাশিত ছিল। তবে, ফাইনালে খেলতে পারলে আরও ভালো লাগতো। ’
অবশ্য সেমিফাইনাল পর্যন্ত অর্জনকেই ‘চমৎকার’ বলছেন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। তার কথা, ‘পারফরম্যান্স ভাল না হলে বাংলাদেশ দলকে কোয়ার্টার ফাইনালেই আটকে থাকতে হতো, যা আমরা আগের আসরগুলোতে দেখেছি। এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ছিল চমৎকার। ’
দলীয় ‘সেমিফাইনাল অর্জন’র পাশাপাশি এবারের আসরে ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়েও অসাধারণ অর্জন রয়েছে বাংলাদেশে।
৩১ জানুয়ারি কক্সবাজারে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ১১৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে যুব ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রান করে নতুন রেকর্ড গড়েন নাজমুল হোসেন শান্ত। পাকিস্তানের সামি আসলামের ১৬৯৫ রান টপকে ১৭৪৭ রান করে অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেটে অনন্য এই রেকর্ড গড়েন বাংলাদেশের এই ব্যাটসম্যান।
রেকর্ড গড়ায় পাল্লা দেন বোলাররাও। পরের ম্যাচেই বল হাতে ২ উইকেট শিকার করে যুবাদের ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর খেতাব (৭৪টি উইকেট) জেতেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। বলের গতি দেখান মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন আর ঘূর্ণি দেখান শাওনরাও।
ব্যাটে-বলে জুনিয়র টাইগারদের এমন পারফরম্যান্স ভবিষ্যতেও আরও ভাল কিছুর ইঙ্গিত বলে মনে করেন হাবিবুল বাশার সুমন, ‘অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ দলের কয়েকজন প্লেয়ারের পারফরম্যান্স ভবিষ্যতে জাতীয় দলের জন্য একটি শক্ত ভিত তৈরি করে দিয়েছে। ’
সুমন বলছিলেন, ‘আসলে বিশ্বকাপে ওরা সত্যিই অসাধারণ খেলেছে। দলের প্রতিটি ম্যাচ জয়ে শান্ত, মিরাজ, জাকির, জয়রাজ, সাইফুদ্দিন ও শাওনের মত খেলোয়াড়দের উজ্জ্বল পারফরম্যান্সেই দলকে সেমিফাইনালে খেলতে সাহায্য করেছে। ’
এই ঔজ্জ্বল্য বজায় থাকলে ভবিষ্যতে ক্রিকেটবিশ্বে বাংলাদেশ আরও বড় জায়গা নিতে পারবে বলে স্বপ্নের কথা জানান নান্নু-সুমনরা।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
এইচএ/