ঢাকা: অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালের পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে দাঁড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) প্রেসিডেন্ট জহির আব্বাস, প্রধান নির্বাহী (সিইও) ডেভ রিচার্ডসন ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। সবার চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি।
হাসি উজ্জ্বলতর নাজমুল হাসান পাপনের। পুরস্কার প্রদান মঞ্চে তাই মাথা খানিকটা বেশিই যেন উঁচু হলো তার। সগর্বে মাথা উঁচু তো করবেনই পাপন। কারণ ‘এক মোড়ল’ নিরাপত্তার ঠুনকো অজুহাত তোলায় কম ঘাম ঝরাতে হয়েছে তাকে? দেশের ক্রিকেটাঙ্গনকে নিরাপদ প্রমাণে?
আজ (রোববার ১৪ ফেব্রুয়ারি) যে তার সেই নির্ঘুম পরিশ্রমের সুফল মিললো! সফলভাবে শেষ হলো যুব বিশ্বকাপ! ঠুনকো অজুহাত দেখিয়ে যারা বাংলাদেশে এলো না, তাদের জবাব দেওয়া হলো। প্রমাণ হলো বাংলাদেশ অনিরাপদ নয়, বরং কিংবদন্তিতুল্য রাহুল দ্রাবিড়ের ভাষ্যমতে, সময় কাটানোর অসাধারণ এক স্থান লাল-সবুজের এ দেশ।
২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা ছিল অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকির কারণ দেখিয়ে নজিরবিহীনভাবে সিদ্ধান্ত বাতিল করে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। এরপর অনূর্ধ্ব-১৯ দলকেও যুব বিশ্বকাপ থেকে প্রত্যাহার করে নেয় তারা। সেই একই ‘নিরাপত্তা-ঝুঁকি’ দেখিয়ে।
এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ক্রিকেটসহ সংশ্লিষ্টদের সামনে যেন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ালো এখানকার মাঠগুলোকে অনিরাপদ নয় প্রমাণ করা। সর্বস্তরের সেই প্রচেষ্টা কতটুকু সফল, তা রোববার বলে দিয়েছেন ভারতের যুব দলের কোচ রাহুল দ্রাবিড়ই; ‘বাংলাদেশে ২৪ দিন কাটালাম। এখানকার নিরাপত্তা, প্র্যাকটিস সুবিধা, হোটেলে আতিথেয়তা আমাকে মুগ্ধ করেছে। খুব ভালো সময়ে কাটিয়েছি। এক কথায় ‘অসাধারণ’। ’
রাহুল দ্রাবিড়দের মুখ থেকে এই ‘অসাধারণ’ অনুভূতির প্রকাশ পেতে কতোটা পরিশ্রম করতে হয়েছে তা না বললেই নয়।
২৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ১৯ দিনব্যাপী ৪৮ ম্যাচের এ টুর্নামেন্ট চলে চার শহরের আট ভেন্যুতে। টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া ১৬টি দলের ক্রিকেটার- কর্মকর্তাদের আতিথেয়তা ও নিরাপত্তার ব্যাপারে কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলছিলেন, ‘আমাদের সবার প্রচেষ্টায়ই এমন সফলভাবে টুর্নামেন্ট শেষ হলো। দলগুলোকে নিরাপত্তা দিতে প্রতিটি মুহূর্ত সজাগ থেকেছি আমরা। খেলা চলাকালে স্টেডিয়ামের আশপাশে ছিল নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা। মিরপুরের সনি সিনেমা হল থেকে মিরপুর দশ নম্বর পর্যন্ত টিম যখন স্টেডিয়ামে যাতায়াত করতো, তখন গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকতো। ম্যাচ চলাকালে স্টেডিয়ামের পাশের রাস্তায় গাড়ি চলাচলও নিয়ন্ত্রিত ও নিয়মবদ্ধ ছিল। ’
পুরো আয়োজন নিয়ে সন্তোষের কথা জানাচ্ছিলেন নিরাপত্তা প্রধান মেজর (অব.) হোসেন ইমামও।
কেবল নিরাপত্তাই নয়, আতিথেয়তার পাশাপাশি সরাসরি মাঠে গিয়েও সবগুলো টিমকে উৎসাহ যুগিয়েছে বাংলাদেশের ক্রিকেট পাগল মানুষ। ক্রিকেটের এমন উৎসবে ‘দূর অতীত’ হয়ে যায় সাম্প্রতিক অনাকাঙ্ক্ষিত সব ঘটনাও।
এই উৎসবে বাংলাদেশ ‘সব পেয়েছে’। নিজেদের ক্রিকেটাঙ্গন যেমন নিরাপদ প্রমাণ করেছে, তেমনি বিশ্বকাপে তৃতীয় স্থান দখল করে জানান দিয়েছে ভবিষ্যতে ক্রিকেটকে শাসন করারও।
কিন্তু অস্ট্রেলিয়া কী পেয়েছে? তাদের অজুহাত তো ভেসে গেলোই, উপরন্তু যুব দলকে প্রত্যাহার করায় টুর্নামেন্টের কোনো অর্জন থেকেও বঞ্চিত হলো তাদের ভবিষ্যৎ দল।
এই দৃশ্যত পরাজয়ে এখন কী বলবে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া?
বাংলাদেশ সময়: ২০৩৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৬
এসকে/এইচএ/