ঢাকা, শনিবার, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

ক্রিকেটপ্রেমী আল-আমিনের জাদুঘর

মহিবুর রহমান ও টিটু দাস | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮৩০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৬
ক্রিকেটপ্রেমী আল-আমিনের জাদুঘর ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: ক্রিকেটের প্রতি কতটা ভালোবাসা থাকলে একজন মানুষকে সত্যিকারের ক্রিকেটপ্রেমী বলা যায়? দিনের পর দিন সেটের সামনে বসে কিংবা মাঠে গিয়ে প্রিয় দলের খেলা দেখলে অথবা প্রিয় খেলোয়াড়দের ছবি-অটোগ্রাফ অ্যালবাম-ডায়েরির পাতায় সাজিয়ে রাখলে অথবা বিনিদ্র মনের ক্যানভাসে রঙ ও তুলির আঁচড়ে প্রিয় ক্রিকেটারদের ছবি আঁকলে? এসবই অবশ্য প্রথাগত প্রেমের ধরন। সময় বদলেছে তাই বদল এসেছে প্রেমের ধরনেও।



এমনই এক ব্যতিক্রমধর্মী ক্রিকেটপ্রেমী কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার মাইক্রোবাস চালক আল-আমিন। ২৭ বছর বয়সী এই যুবকের ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা এতটাই প্রবল যে, নিজ দেশের প্রিয় ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের ছেড়ে এক মুহূর্তও থাকতে পারেন না! যেন টাইগারদের সঙ্গে তার জন্ম-জন্মান্তরের এক অবিচ্ছিন্ন বন্ধন তৈরি হয়েছে। ‍
 
এ দেশের ক্রিকেট তাকে এতটাই মোহ‍াবিষ্ট করে রেখেছে যে সূর্যোদয় থেকে শুরু করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত প্রেয়সী ক্রিকেট ও এর কুশীলবদের সঙ্গে থাকতেই যেন নিজের বসতঘরটিকে পরিণত করেছেন ক্রিকেট জাদুঘরে!

শুধু আঁঠা দিয়ে বসতঘরে নিজ দলের ছবি লাগিয়েই নয়, ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসার প্রবল টানে টাইগারদের জার্সিও ২৪ ঘণ্টা গায়ে পড়ে থাকেন আল-আমিন।

প্রিয় দল ও প্রিয় খেলোয়াড়দের প্রতি ভালোবাসার পাশাপাশি জার্সি পড়া নিয়ে আল-আমিনের আরেকটি ব্যাপার বেশ দারুণভাবে কাজ করে। আর সেটি হলো, দেশের প্রতি ভালোবাসা।

ক্রিকেটের পাশাপাশি এই জার্সি তাকে দেশের প্রতি অকৃত্তিম ভালোবাসার অনুপ্রেরণা যোগায়। ‘আমাদের জার্সির রংটি লাল-সবুজ। তাই আমি যখন জার্সি পড়ি তখন দেশের সঙ্গেও দারুণ প্রেম অনুভব করি’- বলেন আল-আমিন।  

ঘটনার শুরু আজ থেকে ১১ বছর আগে ২০০৫ সালে। তখন থেকেই ক্রিকেটপ্রেমী আল-আমিন বিভিন্ন পত্রিকা থেকে ক্রিকেটাদের ছবি সংগ্রহ করে বসতঘরের বিভিন্ন জায়গায় সাঁটানো শুরু করেন।

২০০৫ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত এমন একটি দিনও যায়নি আল-আমিন ছবি সংগ্রহ ও তা বসতঘরে লাগানো বন্ধ রেখেছেন। গেল ১১ বছর ধরে পত্রিকায় ছাপা টাইগারদের নানা সফলতা, ব্যর্থতা আর উচ্ছ্বাসের ছবি সংগ্রহ করে গড়ে তুলেছেন এই জাদুঘর।

তার এই দুর্লভ জাদুঘরে সাজানো বাংলাদেশের ক্রিকেটের গ্যালারি দেখতে দেশের বিভিন্ন জয়গা থেকে অনেকেই ছুটে আসেন।    

সরেজমিনে আল-আমিনের ক্রিকেট জাদুঘরে গিয়ে দেখা যায়, ৬ শতাংশ জমির উপর টিনের তৈরি একটি ঘর। ঘরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়বে পত্রিকা থেকে সংগ্রহ করা বাংলাদেশের ক্রিকেট দলের টাইগারদের বিভিন্ন সময়ের ছবি। সেখানে বাংলাদেশের টেস্ট দলের প্রথম অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয় থেকে শুরু করে আল-আমিনের সঙ্গে প্রতিনিয়তই ভাব বিনিময় করে যাচ্চেন সাকিব, তামিম, সৌম্য ও মুস্তাফিজ।
 
শুধুই ম্যাচ কিংবা প্রিয় খেলোয়াড়দের ছবিই নয়, আল-আমিনের জাদুঘরে শোভা পাচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় দলেকে নিয়ে পৃষ্ঠপোষক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন সময়ে নির্মিত প্রোমোর মুহূর্তও।    

ক্রিকেটপ্রেমী আল-আমিন ২০০৫ সালে বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বে জিম্বাবুয়ের সাথে টেস্ট ম্যাচ খেলার সময় থেকেই বিভিন্ন পত্রিকা থেকে খোলোয়াড়দের ছবি সংগ্রহ শুরু করেন। সেই যে শুরু যা এখনও অব্যাহত আছে।

১৯৮৮ সালে ফিরোজ মিয়া ও মোছা. বকুল খাতুনের ঘরে আল-আমিন জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই আল-আমিনের স্বপ্ন ছিল ক্রিকেটার হওয়ার। কিন্তু অভাবের তাড়নায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করে শিক্ষা জীবনের সমাপ্তি ঘটে এবং সেই সাথে সমাপ্তি ঘটে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নেরও।

স্বপ্নভঙ্গ জীবন নিয়ে আল-আমিন ২০০০ সালে হয়ে ওঠেন মাইক্রোবাস চালক।

তবে, ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন শেষ হলেও বাংলাদেশের ক্রিকেট ও ক্রিকেটারদের প্রতি ভালোবাসে দিন দিন বেড়েছে বৈ কমেনি।

ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্নভঙ্গে কষ্ট পাওয়া আল-আমিন এখন আনন্দ খুঁজে ফেরেন তার প্রিয় দল ও খেলোয়াড়দের মুখ দেখে। তবে, তার এই আনন্দের মাত্রা আরও বেড়ে যাবে যদি প্রিয় খোলোয়াড়েরা তার এই স্বপ্নের জাদুঘরটি একবার কষ্ট করে দেখতে আসেন।  

‘আমি খুবই খুশি হবো যদি আমার তৈরি জাদুঘরটি দেখতে সাকিব, তামিমসহ বিসিবির কর্তকর্তারা একবার হলেও আসেন। ’
 
আল-আমিনের জাদুঘর নিয়ে পাকুন্দিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু বলেন, আল আমিনের ক্রিকেট জাদুঘরটি দেখে এসেছি। জাদুঘর তৈরির কাজে ব্যক্তিগতভাবে আল-আমিনকে আমি বিভিন্ন সময় সহযোগিতা করেছি।

এ দেশের ক্রিকেটের স্বার্থেই ক্রিকেটের প্রতি এমন বিরল ভালোবাসার দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী আল আমিনের জাদুঘরটি টিকিয়ে রাখা প্রয়োজন বলেও মনে করেন পাকুন্দিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম।

বাংলাদেশ সময়: ০৮৩১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৬
এমজেএফ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।