ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

বিশ্বের কাছে বার্তা গেল-বাংলাদেশ টেস্টেও বড় শক্তি

তাসনীম হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৭
বিশ্বের কাছে বার্তা গেল-বাংলাদেশ টেস্টেও বড় শক্তি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম থেকে: অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে হারলেও অনেক প্রাপ্তি দেখছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট জয়ে বিশ্বের কাছেও বড় বার্তা গিয়েছে বলে মনে করছেন তিনি।

মুশফিকের কণ্ঠে, ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের ফলে এখন অন্য দলগুলোও বাংলাদেশকে সম্মান করবে। বলবে-ওরা শুধু ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টিতে নয়, টেস্টেও বড় একটা শক্তি হতে যাচ্ছে।

দ্বিতীয় ও শেষ ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে মুশফিকের কাছে জানতে চাওয়া হয়, অন্য টেস্ট সিরিজ থেকে এই সিরিজের পার্থক্যটা কী? এমন প্রশ্নে মুশফিকের জবাব, ‘অনেকেই হয়তো ভেবেছে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে একটা ম্যাচ আমরা কোনোরকমে জিতে গেছি। এবার অস্ট্রেলিয়াকে এই কন্ডিশনে হারিয়েছি। তারাও খেলার আগে মেনে নিয়েছিল যে, নিজেরা ফেবারিট না। বাংলাদেশ ভালো খেললে জিততে পারে। আমার মনে হয় এর চেয়ে বড় অর্জন আর কিছু হতে পারে না। অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রতিপক্ষরা যখন এমন সমীহ করে তখন অন্যরা ভাববে, বাংলাদেশ আসলেই একটি বিপদজনক দল। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে শুধু নয়, টেস্টেও তারা বড় শক্তি হতে যাচ্ছে। এটা একটা বড় বার্তা। আমাদের জন্য ভালো একটি অনুপ্রেরণা এই সিরিজ। এই সিরিজের পর বিশ্ব ক্রিকেটের অন্য দলগুলো বাংলাদেশকে সম্মান দেবে। এই অর্জনটা ধরে রাখার চেষ্টা করবো। আর এটা অনেক বড় একটা দায়িত্ব। ’

মুশফিক যোগ করেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ জিতবো সেটা টিম ম্যানেজমেন্টের সাথে অন্যরাও বিশ্বাস করেনি। অস্ট্রেলিয়ার মতো দলের সাথে আমরা একটা ম্যাচ জিতেছি। এটা অনেক বড় প্রাপ্তি। তাদের সাথে খেলা খুব সহজ ছিল না। সাত-আট মাস পর আমরা টেস্ট ম্যাচ খেলেছি। অবশ্য আমাদের আরেকটু ভালো করার সুযোগ ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে সে সুযোগ নষ্ট হয়েছে। সবমিলিয়ে অনেক ভালো একটা সিরিজ গেছে। একটু আক্ষেপ অবশ্যই আছে। আমরা ভালো করলে টেস্টটা একটু অন্যরকম হতে পারতো। ভবিষ্যতে আরও খেলার সুযোগ থাকলে চেষ্টা করবো আরও ভালো খেলার। ’

দ্বিতীয় টেস্টে একেবারেই বিবর্ণ ছিলেন বাংলাদেশ দলের দুই প্রাণভোমরা সাকিব আল হাসান আর তামিম ইকবাল। সাকিব পারফর্ম না করলে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে থাকে না। চট্টগ্রাম টেস্টে সাকিবের সাফল্য তেমন আহামরি নয়। প্রসঙ্গ তুলতেই অধিনায়কের জবাব, ‘সে তো একটা মানুষ। আমি বার বার বলেছি, প্রতি ম্যাচে আমাদের বড় প্লেয়ার সাকিব-তামিম পারফর্ম করবে না। প্রতিপক্ষের দিকেও দেখবেন, তাদের দুই একজন বড় প্লেয়ার খারাপ খেললে অন্যরা খারাপ খেলে তা নয়। তরুণরা চেষ্টা করে পুষিয়ে দেওয়ার। সাকিব যেভাবে আউট হয়েছে, হয়তো আনলাকি ছিল। স্বাভাবিকভাবে সে যদি ভালো করতে পারে তাহলে, আমাদের জন্যই না, তার নিজের জন্যও ভালো। অবশ্যই এটা মিস করেছি। সে যদি ভালো পারফর্ম করে অন্যদের সুযোগ কিন্তু খুব কম থাকে। এখন সে যখন করেনি, তাহলে অন্যদের সুযোগ ছিল। সে সুযোগ হয়তো আমাদের অনেকে কাজে লাগাতে পারেনি। ’    

বেশকিছু ম্যাচে সুযোগ থাকার পরও বাংলাদেশ ড্র করতে পারেনি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ টেস্টেও সুযোগ ছিল ড্র করার। ড্র করতে ব্যর্থ হওয়ার পেছনে কারণটা কী? ড্র করার ক্ষেত্রে যে যোগ্যতা, দক্ষতা দরকার সেটা করতে কী আমরা ব্যর্থ হচ্ছি? এমন প্রশ্নে মুশফিকের জবাব, ‘তা তো অবশ্যই। তবে এই ধরনের কঠিন মুহূর্তে একটা বাজে সেশন আমাদের এতটাই বিপক্ষে যায় যে সেটা থেকে বের হয়ে আসাটা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। অবশ্যই আমাদের দক্ষতার সমস্যা আছে। টেকনিক্যাল সমস্যাও আছে। টেকনিক্যালি কোনো খুঁত থাকলে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যেতে হয়। তখন প্রতিরক্ষার কোনো উপায় থাকে না। ’

‘আমাদের আরও অনেক জায়গা আছে যেখানে উন্নতি করতে হবে। টেস্ট উইকেটে কিভাবে রান করতে হবে, কিভাবে থাকতে হবে- এই কৌশলগুলো আমরা পুরোপুরি আয়ত্ব করতে পারিনি। শেষ দুই-চারবার আমরা সুযোগ পেয়েছি। কিন্তু কাজে লাগাতে পারিনি। এই সুযোগগুলো যদি আমরা কাজে লাগাতে না পারি তাহলে শিখতেও পারবো না। এই ধরনের উইকেট আমরা ঘরোয়া ম্যাচগুলোতে পাই না। একটা ম্যাচে দুইটি সেশন খারাপ খেললেও ঘুরে দাঁড়ানো যায়। কিন্তু পাঁচ-ছয়টা সেশন খারাপ করলে উঠে দাঁড়ানো কঠিন। প্রতিপক্ষরা জানে টপঅর্ডারকে দ্রুত ফেরাতে পারলে নিচের সারির ব্যাটসম্যানদের উপর একটা বড় চাপ ফেলা যায়। এই জায়গাগুলোয় আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। ’-বলেন মুশফিকুর রহিম।

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ওয়ার্নারের কাছ থেকেও শিখতে চান মুশফিকুর রহিম। তিনি বলেন, ‘ওয়ার্নার খুবই আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যান। এই উইকেটে সে অনেক কষ্ট করে রান করেছে। চট্টগ্রাম টেস্টে তার শতকটা সবচেয়ে ধীরগতির। ওখান থেকেই আমরা অনেক কিছু দেখতে পারি এবং শিখতে পারি। হয়তো সবার রান করার ধরন আলাদা। কিন্তু চাইলেই ওয়ার্নার আরও আক্রমণাত্মক খেলতে পারতো। ’

‘অনেকেই হয়তো বলবেন আমরা আর কত বছর শিখবো। ১৭ বছর হয়ে গেছে। প্রত্যেক ম্যাচেই আমাদের একটা, দুটি, তিনটি করে পরিবর্তন থাকে। পেস বোলাররা অনেকদিন পরপর খেলে। ব্যাটসম্যানও অনেক কম আছে, যারা কিনা টেস্ট ম্যাচ খেলে। তো তাদের জন্য কঠিন। অনেকদিন পরে এসে খেলা এবং এভাবে প্রেসারে থাকা.. সবমিলিয়ে আমাদের অবস্থা অন্য দলগুলোর চেয়ে কঠিন। আমি প্রতিজ্ঞা করে বলতে পারি, শেষ দুই বছরে বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেটে ভালো খেলছে। এখন আমাদেরকে আরেকটু এগোতে হবে। জয় সবসময় না পেলেও সাফল্যের ধারাবাহিকতা যাতে আমরা রাখতে পারি সেটাই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত। ’ যোগ করেন টাইগারদের টেস্ট দলপতি।

এর আগে ২০০৬ সালে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। সেই সিরিজের সঙ্গে এই সিরিজের কি প্রার্থক্য দেখছেন এমন প্রশ্নে বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন,  ‘আগে আমরা জানতাম যে তারা শুধু ব্যাট-বল না শারীরিক ভাষায়ও কথা বলে। মাঠে সবসময় প্রেসারেস করে। তাই আমরা চেষ্টা করেছি তাদের সঙ্গে খাপ খাইয়ে থাকার। ঢাকা টেস্টে আমরা সেটা খুব ভালো করেই পেরেছি। আর এখন আমাদের অনেক প্লেয়ার আছে যতই টপ ক্লাস প্লেয়ার হোক না কেন তার কথার জবাবে মুখে মুখে কথা বলতে পারে। অন্তত না পারলেও সামনে দাঁড়ানোর ক্ষমতা রাখে। এটা আগে হতো না। ’ 

এই ম্যাচেও মুশফিকের সঙ্গে ঝামেলা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের। এসময় মুশফিককেও তার প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে। মাঠে কি হয়েছিল সেই বিষয়ে জানতে চাইলে হাসিমুখে মুশফিকের জবাব, ‘মাঠে তো একটু উল্টা-পাল্টা একটা দুটো কথা হয়। ওরা তো সবসময় বলে থাকে। আম্পায়ারের সামনে অনেক জোরে বলেছিল। সেটা আমি একটু আপত্তি জানিয়েছিলাম যে আপনাদের (আম্পায়ার) সামনেই যদি বলে আমরা আর কার কাছেই বা যাবো। তখন আম্পায়ার বললো, হ্যাঁ আমরা শুনেছি, ‘‘এটা নিয়ে আমি ওপরে কথা বলবো। ’’

বাংলাদেশ সময়: ২০০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৭, ২০১৭
টিএইচ/টিসি/এমআরপি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।