২০১০ সালে লর্ডসের ‘এপিক’ সেঞ্চুরিতে তার সামনে কেবল তামিম ইকবাল। ৪৭ ইনিংসে দুই হাজার রানের সীমানাও অতিক্রম করে গেছেন প্রথম দিনেই।
এমন আগ্রাসী নান্দনিক ব্যাটিংয়ে প্রথম দিন শেষে অপরাজিত ছিলেন ১৭৫ রানে। যা তাকে হাতছানি দিচ্ছিলো ডাবল ও ত্রিপল সেঞ্চুরির। কিন্তু দুর্ভাগা বলেই হয়নি। দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে অভিজ্ঞ লঙ্কান স্পিনার রঙ্গনা হেরাথের বল তাকে উইকেট থেকে ছিটকে দিল। আগের দিনের সাথে যোগ হলো মাত্র ১টি রান।
তাতে কী? দল যেমন ৫১৩ রানের বড় সংগ্রহ পেল তেমনি সাবেক হেড কোচের অবজ্ঞার জবাবটি মোক্ষমই দেয়া হলো! আবারও নিজের জাত চেনালেন টেস্ট ক্রিকেটে টাইগারদের সবচাইতে গড়ধারী (৫৪.০৮)। প্রতিভাধর মুমিনুলের সঠিক ব্যবহার লঙ্কান ওই কোচ করতে পারেননি তার প্রমাণও মিললো। দিন শেষে জয় হলো ক্রিকেটেরই।
তাই তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করতে ভুল করলেন না বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক সময়ের বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান নাঈম ইসলাম। এটাই মুমিনুলের সহজাত ব্যাটিং বলে মত তার, ‘অসাধারণ ব্যাটিং ছিল। নিউজিল্যান্ডের সাথে যখন ওর অভিষেক হলো তখন যে ধরণের ক্রিকেট খেলতো এখন তার চেয়ে ভালো ক্রিকেট খেলছে। মাঝখানে হয়তোবা কিছুদিন অফ-ফর্ম গিয়েছে। কিন্তু এটা আমাদের পরিচিত মুমিনুল। ’
অথচ এই মুমিনুলকেই গেল বছরের মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে মাইলফলক স্পর্শকারী শততম টেস্টে থাকতে হয়েছে দর্শক হয়ে। তাকে দলছুট করতে হাথুরুর যুক্তি দিয়েছিলেন মুমিনুল অফস্পিন খেলতে পারেন না। অথচ এই টেস্টে তার ১৭৬ রানের সিংহভাগই এসেছে স্পিন থেকে।
শুধু শ্রীলঙ্কা সিরিজ কেন? অফ স্পিন খেলতে পারেন না এমন অযুহাতে সেপ্টেম্বরে ঘরের মাটিতে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের প্রথম টেস্টেও ছিলেন ডাগআউটে। দ্বিতীয়টিতে দলে সুযোগ পেয়েও ব্যর্থ হওয়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ থেকে তাকে বাদ দেয়া হলো। তবে তার ফেরার উপলক্ষ হয়ে দাঁড়ায় মোসাদ্দেকের চোখে ভাইরাল ইনফেকশন। পুরো সিরিজেই ধুকতে থাকা বাংলাদেশিদের মধ্যে একমাত্র তিনিই খেলেছিলেন সর্বোচ্চ ৭৭ রানের ইনিংস (পচেফস্ট্রুমে)।
এমনসব বিষয় একজন ক্রিকেটারের মনে দারুণ মানসিক চাপ তৈরী করে বলে জানালেন নাঈম, ‘মাঝখানে সে যে খুব খারাপ খেলেছে আমি এটা বলবো না। আমি বলবো ওর পারফরম্যান্সের চেয়ে মানসিক চাপের ব্যাপারটা অনেক বড় ছিল। ’
সেই চাপকে জয় করতে পেরেছেন বলেই লক্ষণ সান্দাকানের বলটি এক্সট্রা কাভারে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে বাতাসে হাত ছুঁড়ে প্যাডে ব্যাট ঠুকে হাথুরুর চোখের সামনে ৫ম টেস্ট শতকের স্বভাববিরুদ্ধ উদযাপন করতে পেরেছেন টাইগারদের এই ‘লিটল মাস্টার’। যা অপোলক দেখেছে লাল-সবুজের অগণিত ক্রিকেট ভক্তরা।
অস্ফুট বাক্যে তারাও নিশ্চয়ই নাঈম ইসলামের মতোই বলেছেন ‘এইতো আমাদের সেই মুমিনুল। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৫ ঘণ্টা, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮
এইচএল/এমআরএম
** দ্বিতীয় দিন শেষে ৩২৬ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ