এটা ঠিক এমন উইকেটে টাইগাররা খেলে অভ্যস্ত নন। তার মানে কী এই তাদের ভেতরে নুন্যতম টেম্পারমেন্ট দেখা যাবে না? নিউজিল্যান্ড, লর্ডস, শ্রীলঙ্কার মাটিতে যাদের হাত দিয়ে সেঞ্চুরি ডাবল সেঞ্চুরি এসেছে তারা ৫ দিনের ক্রিকেটে ৫ মিনিটও উইকেটেই থাকতে পারবেন না!
কী এমন বিভীষিকা আছে নর্থ সাউন্ডের ওই উইকেটে? জানতে চাওয়া হয়েছিল বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের হেড কোচ সারোয়ার ইমরানের কাছে।
'টেস্ট খেলার জন্য যে মনোযোগ, টেম্পারমেন্ট দরকার এর ছিটেফোটাও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ছিল না। এই ধরনের উইকেটে তারা খেলে না এটা ঠিক। এমন উইকেটে দাঁড়িয়ে থাকা ও বল ছাড়াটা গুরুত্বপুর্ণ। আমাদের ব্যাটসম্যানরা ৪-৫ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরেও অফস্ট্যাম্পের বাইরে ব্যাট চালাচ্ছে। এটা দেখেই বোঝা যায় ব্যাটসম্যানদের প্রস্তুতিতে ঘাটতি ছিল। '-বলেন সারোয়ার ইমরান।
'উইকেটে মুভমেন্ট ছিল, ডাবল পেসের উইকেট তাই ওখানে শটস খেলা অসম্ভব ব্যাপার। এই পিচে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। যেহেতু আমরা এ ধরনের পিচে অভ্যস্ত না আমাদের এতটা আক্রমণাত্মক হওয়া ঠিক হয়নি। তাদের আগে বুঝতে হবে এটা কী ধরনের উইকেট, আমি কতটা আক্রমণাত্মক ও রক্ষণাত্মক থাকবো এবং স্ট্যাম্পের বাইরের বল আমি কীভাবে ছাড়বো। এগুলো তাদের ভেতরে ছিলোই না। '
এতো গেল ব্যাটসম্যানদের গল্প। এবার আসি বোলারদের গল্পে।
যেহেতু উইকেটটি পেস বান্ধব এবং সাকিব শিবিরে রুবেল হোসেন, রাহি, ও রাব্বির মতো কার্যকর পেসাররা মজুদ আছেন তাই সফরকারীদের সাফল্য প্রথম দিনে প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু না। ঠিক প্রত্যাশিত ছন্দে তাদের দেখা গেল না। ওয়াইড, শর্ট, লো ফুলটস এবং লাইন ও লেংথহীন বলের মোহরায় বোলাররা কঠিন সময় কিঞ্চিৎই উপহার দিতে সক্ষম হয়েছেন।
ঠিক সেই সুযোগটি শতভাগ কাজে লাগিয়ে মাত্র ২ উইকেটের খরচায় ২০১ রানে প্রথম দিন শেষ করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দিন শেষে প্রথম ইনিংসে ১৫৮ রানে এগিয়ে স্বাগতিক শিবির।
ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল আবু জায়েদ চৌধুরী রাহি। দিনের ২টি উইকেট মাহমুদউল্লাহর সাথে ভাগ করে নিয়েছেন। বাকি দুই পেসার থেকেছেন নিজেদের ছায়া হয়েই। টানা লেংথে বল করে এবং সুইংয়ে বৈচিত্রের পসরা সাজিয়ে রাহি যে রুদ্র মূর্তি ধারণ করেছিলেন ব্র্যাথওয়েট, স্মিথরা না বুঝে ব্যাট চালালে দিন শেষে তার থলিতেও বেশ কয়েকটি উইকেট থাকতে পারতো বলে বিশ্বাস সারোয়ার ইমরানের। তবে ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যানরা বরফের মতো ঠাণ্ডা মাথায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা উইকেটে থেকে দেখিয়েছেন কীভাবে ম্যাচের মোমেন্টাম নিজেদের করে নিতে হয়।
'শুধু রাহির কথা বলবো। ও ভাল বল করেছে। আমাদের ব্যাটসম্যনরা যেভাবে খেলেছে ওরা রাহিকে ওভাবে খেললে রাহিও ৩-৪ উইকেট পেতে পারতো। '
অথচ এই বাংলাদেশই গেল দুই বছর দেশে ও দেশের বাহিরে কী ধারাবাহিক না খেললো! বিশ্ব ক্রিকেটের দুই কুলীন ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে নাকানি চুবানি খাইয়ে টেস্ট জিতলো। তাহলে ওখানে কী এমন হলো? সারোয়ারের ইমরানের গম্ভীর উত্তর। 'আমরা ঘরের মাঠেই পারি। '
টাইগাররা কিন্তু বাইরেও পেরেছে। গেল বছরের মার্চে শ্রীলঙ্কা সফরে গিয়ে স্বাগতিকদের বিপক্ষে নিজেদের শততম টেস্ট জিতলো মুশফিকুর রহিম নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ।
তবে সাকিবের নেতৃত্বে দল এমন হাবুডুবু খাচ্ছে কেন? বিশ্বসেরা অলরাউন্ডরের নতুন অধিনায়কত্বে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে দিন বদলের যে স্বপ্ন এদেশের মানুষ দেখেছিল তার শুরুটা ভীষণ বাজে হলো। দেখা যাক শেষটা কেমন হয়। কেননা সব ভাল তো তারই হয় যার শেষটা ভাল হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৫০৪ ঘণ্টা, ০৫ জুলাই, ২০১৮
এইচএল/এমএমএস