বুধবার (২৫ জুলাই) রাতে গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় খেলায় মাত্র তিন রানে হেরে গেলো বাংলাদেশ। একেবারে তীরে এসে তরী ডোবানো যাকে বলে, ঠিক যেন সেটিই ঘটালেন মুশফিকু রহিম-সাব্বির রহমানরা।
অথচ ক্রিস গেইল- এভিন লুইসদের দলকে ২৭১ রানে থামিয়ে দিয়ে ২৭২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে কী দারুণ শুরুই না করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে রানের খাতা খুলতে না পারা এনামুল হক বিজয়ই তোলেন প্রথম ঝড়। চার-ছক্কায় গ্যালারি মাতিয়ে তুললেও ইনিংসটা লম্বা করতে পারেননি। তিনি ৯ বলে ২ ছক্কা ও ২ চারে ২৩ রান করে আউট হলে বাংলাদেশের স্কোরকার্ড দাঁড়ায় ২.৩ ওভারে ৩২/১।
তারপর সাকিব আল হাসান খেলতে নেমে ওপেনার তামিম ইকবালের সঙ্গে গড়েন শক্ত জুটি। আগের ম্যাচের ঝলমলে এ জুটি দারুণ এগিয়ে নিচ্ছিলো বাংলাদেশকে। তবে তামিমকে আউট করে দু’জনের ৯৭ রানের জুটি ভেঙে দেন দেবেন্দ্র বিশু, তার প্রথম ওভারে এবং ম্যাচের ২৫তম ওভারের শেষ বলে। ৭১ বলে ৪২তম অর্ধশতকের পর ৮৫ বলে ৬ চারে ৫৪ রান করা তামিম আউট হন স্টাম্পিংয়ে। এক দফায় আম্পায়ারের এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত রিভিউর মাধ্যমে ফিরিয়ে খেলার সুযোগ পেলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি সাকিবও। ৬২ বলে অর্ধশতকের পর ৭২ বলে ৫ চারের মারে ৫৬ রানে তিনি আউট হন ক্যাচ তুলে দিয়ে। তখন দলীয় স্কোরকার্ড ২৯.২ ওভারে ১৪৫/৩।
এ দু’জনের বিদায়ের পর ম্যাচের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ। সে জুটি বেশ আশাবাদীও করছিল টাইগার দলকে। কিন্তু ইনিংসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ জুটি ভেঙে যায় ভুল বোঝাবুঝিতে মাহমুদউল্লাহর রানআউটের মাধ্যমে। ৪৬তম ওভারের প্রথম বলে মাহমুদউল্লাহ ব্যক্তিগত ৩৯ রানে এবং দলীয় ২৩২ রানে সাজঘরে ফিরলেও ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ এর কাঁধে ভরসা খুঁজছিল বাংলাদেশ।
সাব্বির রহমান যখন ১১ বল খেলে ১২ রান করে ৪৯তম ওভারে ক্যাচ তুলে দিয়ে ব্যাট-প্যাড গুটিয়ে নেন, তখনও ক্রিজে মুশফিক। কিন্তু প্রথম বলেই তার আউটে শেষ হয়ে যায় বাংলাদেশের স্বপ্ন। পরের পাঁচ বল থেকে কেবল ৪টি রান আসায় বাংলাদেশকে হেরে যেতে হয় মাত্র ৩ রানে।
প্রথম ম্যাচের মতো এই ম্যাচেও টসে জেতেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। সকালে একাধিকবার প্রভিডেন্সে বৃষ্টি হয়। নতুন করে বৃষ্টি নামলে ওভার কাটা যেতে পেরে, যার জেরে পড়ে যেতে হতে পারে কঠিন সমীকরণে, সে ভাবনা থেকেই হয়তো দিবারাত্রির খেলায় বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনায়ক।
সপ্তম ওভারেই ২৯ রানের মাথায় এভিন লুইসকে (১২) এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে দুর্দান্ত শুরু করেন মাশরাফি। ক্রিস গেইলও পড়েন এলবিডব্লিউর ফাঁদে। ১৪তম ওভারে ৩৮ রান করা এই ব্যাটিং টর্নেডোকো ফিরিয়ে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। দুই ওপেনারের বিদায়ের পর স্বাগতিকরা যখন ২৩.৫ ওভারে ১০২ রানে ৪ উইকেট হারায়, তখন ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাতে।
তবে এই পরিস্থিতিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন শিমরন হেটমায়ার ও রোবম্যান পাওয়েল। তাদের পঞ্চম উইকেট জুটিতে আসে ১০৩ রান। এই জুটির ওপরই ভর করে চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়ে উইন্ডিজ। পাওয়েল ৪৪ রানে বোল্ড হলেও ঝড়ো ব্যাটিং করে শতক তুলে নেন গায়ানার ছেলে হেটমায়ার। ৫০তম ওভারেই শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হওয়ার আগে তিনি ৯৩ বলে ৭ ছক্কা ও ৩ চারে ১২৫ রান তুলে নেন।
বাংলাদেশের হয়ে মাশরাফি-মিরাজ ছাড়াও উইকেট পান মোস্তাফিজুর রহমান, সাকিব আল হাসান ও রুবেল হোসেন। রুবেল শিকার করেন ৩ উইকেট, আর মোস্তাফিজ-সাকিবের ঝুলিতে যায় দু’টি করে উইকেট।
এর আগে ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের কাছে মাত্র ২ রানে হারতে হয় বাংলাদেশকে। তারপর ব্যাঙ্গালুরুতে ভারতের বিপক্ষে সেই ১ রানের হার। সবশেষ গত জুনেই দেরাদুনে আফগানিস্তানের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজের খেলায়ও ১ রানে হারার দুঃখ সইতে হয় বাংলাদেশকে। গায়ানা যেন পুরনো সেই দুঃখগুলো উসকে দিয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে, তীরে এসে তরী ডোবানোর এই ‘রেওয়াজ’ বন্ধ হবে কবে?
বাংলাদেশ সময়: ০৮২৭ ঘণ্টা, জুলাই ২৬, ২০১৮
এইচএ/