সে যেন তেন দল নয়, গেইল, লুইস ও শেই হোপের মতো দাপুটেদের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে তাদের ১৮ রানে হারিয়ে ২-১ সিরিজ জিতে নিয়েছে কোচ স্টিভ রোডসের শিষ্যরা।
বাংলাদেশের দেওয়া ৩০২ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২৮৩ রানে থেমেছে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং ইনিংস।
এদিন সফরকারীদের হয়ে বল হাতে টাইগারদের হয়ে ক্যারিবীয় শিবিরে প্রথম আঘাতটি হানেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। বাংলাদেশের বোলিং ইনিংসের ১১তম ওভারের কথা। মাশরাফির একেবারে প্রথম অফকাটার ডেলিভারিটি ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে ব্যক্তিগত ১৩ রানে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে ধরা পড়েন ওপেনার এভিন লুইস।
লুইস ফিরে গেলেও শেই হোপকে সঙ্গে করে দ্বিতীয় উইকেটে টাইগারদের দারুণ জবাব দিচ্ছিলেন ‘দানব গেইল’। কিন্তু হঠাৎই পা হড়কালেন এই ‘ক্যারিবীয় টর্নেডো’। ২২তম ওভারে রুবেল হোসেনের ৫ম বলটি লংঅনে উঠিয়ে দিলে সেখান থেকে তা তালুবন্দি করেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ৭৩ রানে থামে তার ইনিংস। এই রান সংগ্রহে তিনি খেলেছেন ৬৬টি বল। যেখানে চারের ছিল ৬টি ও ছয়ের মার ছিল ৫টি। ক্যারিবীয়দের তৃতীয় উইকেটের পতন হয় দলীয় ১৭২ রানে। ব্যক্তিগত ৩০ রানে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে ক্লিন বোল্ড হন শিমরন হ্যাটমায়ার। চতুর্থ উইকেটটি এসেছে রান আউট থেকে। এর কারিগরও মিরাজ। ৩৮তম ওভারে তার পঞ্চম বলে শেই হোপের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির ফাঁদে পড়ে ৩ রানে ক্রিজ ছাড়া হন কাইরন পাওয়েল। এর মাঝে দু’দুটি ক্যাচ ফেলেছেন রুবেল হোসেন ও সাব্বির রহমান।
তা না হলে হয়তো আরো আগেই গুটিয়ে যেতে পারতেন ক্যারিবীয়ানরা।
সেটা হয়েছে বটে তবে তার আগে শেই হোপ ও রভম্যান পাওয়েল টাইগারদের ওপর বেশ লম্বা একটি সেশন ছড়ি ঘুড়িয়েছেন। পাওয়েলকে সঙ্গী করে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে চাইছিলেন তিনে নামা হোপ। কিন্তু পারেননি। ৪৪ তম ওভারে মাশরাফির বলে সাকিবের মুঠোবন্দি হলে দলটির জয়ের আশা দূরের বাতিঘরে পরিণত হয়। তবে তার আগে তিনি খেলেছেন ৬৪ রানের দায়িত্বশীল এক ইনিংস।
বলার অপেক্ষা রাখে না তার ফিরে যাওয়াতেই জয়ের সুবাস পেতে থাকেন টাইগাররা। ৪৮তম ওভারে মোস্তাফিজ বল হাতে এসে একেবারে প্রথম ডেলিভারিকে অধিনায়ক জ্যাসন হোল্ডারকে ৯ রানে রুবেল হোসেনের ক্যাচে পরিণত সেই সুবাস আরও ঘণিভূত হয়।
ব্যাট হাতে উইন্ডিজ মিডল অর্ডার রভম্যান পাওয়েল শেষ পর্যন্ত হুঙ্কার ছেড়েছেন বটে। ৪০ বল থেকে সংগ্রহ করেছেন ৭৩ রান। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।
নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৬ উইকেটের বিনিময়ে এসেছে ২৮৩ রান যা টাইগারদের কপালে এঁকে দিয়েছে ১৮ রানের গৌরবের বিজয় তিলক।
এর আগে শনিবার (২৮ জুলাই) সেইন্ট কিটসে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে তামিম ইকবালের ১০৩, মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদের ৪৯ বলে ৬৭ ও মাশরাফির ২৫ বলে ৩৬ রানের ঝড়ো ইনিংসে ৬ উইকেটের বিনিময়ে ৩০১ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
বলা বাহুল্য এই সিরিজেই এক ম্যাচ বিরতিতে দু'দুটি সেঞ্চুরি হাঁকালেন তামিম। প্রথমটি এসেছিলে গেলো ২২ জুলাই গায়নায়। সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে অপরাজিত ছিলেন ১৩০ রানে।
আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ তুলে নিয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৯ তম অর্ধশতক। তবে জ্বলে উঠতে পারেননি মাশরাফির বাজির ঘোড়া এনামুল হক বিজয়। মাত্র ১০ রানে ফিরে গেছেন জ্যাসন হোল্ডারের বলে কাইরন পাওয়েলের ক্যাচ বনে।
পারেননি সাকিব, মুশফিক, সাব্বিরও। দ্বিতীয় উইকেটে তামিমের সাথে দৃঢ় জুটির আশা জাগিয়ে অ্যাশলে নার্সের বলে ৩৭ রানে হয়েছেন কিমো পলের তালুবন্দি।
মিস্টার ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিমকেও থামিয়েছেন নার্স। ১২ রানে করেছেন বোল্ড আউট। সমান সংখ্যক রানে চলতি সিরিজে নিজের ছায়া হয়ে থাকা সাব্বির রহমানকে থামিয়েছেন শেলডন কোটরেল।
তবে ডাকসাইটে ব্যাটসম্যানের তকমা গায়ে মেখে তারা কেউ না পারলেও বোলার হয়েও পেরেছেন মাশরাফি। চারটি চার ও একটি ছয়ের মারে ২৫ বল থেকে সংগ্রহ করেছেন ৩৬ রান। অবশ্য শেষ করে আসতে পরেননি। অধিনায়ক হোল্ডারের বলে গেইলের হাদে ক্যাচ তুলে দিয়েছেন।
তবে তার এই রানেই নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৬ উইকেটের খরচায় প্রথমবারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩০১ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৯, ২০১৮
এইচএল/টিএ/