ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গী কে হবেন?
চলতি বছর ৭ ওয়ানডে ম্যাচে মাত্র ৮৮ রান করা আনামুল হক বিজয় স্পষ্টতই হতাশ করেছেন সমর্থকদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ম্যাচেই তাকে দলে রাখার সিদ্ধান্তের কোন প্রতিদানই দিতে পারেন নি আনামুল।
আসন্ন টি-টোয়েন্টি সিরিজে পারফরম্যান্স দেখার পর নির্বাচকদের হয়তো সৌম্য কিংবা লিটন দাসের দিকেই ঝুঁকতে হবে আবার। তবে তরুণ ব্যাটসম্যান নাজমুল হাসান শান্ত যদি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ‘এ’ দলের সফরে ভাল করতে পারেন তাহলে তাকে সুযোগ দেওয়া হতে পারে।
কে হবেন ফিনিশার?
ফিনিশারের ভূমিকায় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ নিয়মিত ভাল করছেন, বিশেষ করে ইনিংসের শেষ পাঁচ ওভারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষ পাঁচ ওভারে তার স্ট্রাইক রেট ২১৪.২৯! ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে সেসময়ের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের অধীনে এই পরিবর্তন আসে তার ব্যাটে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সদ্য শেষ হওয়া সিরিজে সাব্বির রহমান ও মোসাদ্দেক হোসেনের আগে মাহমুদুল্লাহকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। তারা দুজন একেবারেই ব্যর্থ হয়েছেন। গত ১৪ ইনিংসেই সাব্বিরের ব্যাট ফলপ্রসূ হতে ব্যর্থ। আর মোসাদ্দেক এখনও স্লগ ওভারে কিভাবে ব্যাটিং করতে হয় তাই সামলে উঠতে পারেন নি। তাদের দুজনের উপর যথেষ্ট ভরসা না থাকাতেই শেষ ম্যাচে ৩৯তম ওভারে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা নিজেই ব্যাট হাতে নেমে পড়েন।
মোসাদ্দেককে হয়তো একধাপ আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়ে মাহমুদুল্লাহকে শেষ ৬-৮ ওভারে নামানো যেতে পারে। আর সাব্বিরকে এখন নিশ্চিতই বিশ্রামে পাঠানোর সময় হয়েছে। তার স্থলে তরুণ ব্যাটসম্যান আরিফুল হককে সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। ইনিংসের শেষ ৫ ওভারে তার ব্যাটিং তিন টি-টোয়েন্টিতেই কার্যকর হতে পারে।
স্লগ ওভার সামলানোর সামর্থ্য কি বোলারদের আছে?
গত তিন বছর ধরেই ওয়ানডেতে শেষ পাঁচ ওভারে বিশ্বের দ্বিতীয় সেরা ইকোনমি রেট মোস্তাফিজুর রহমানের (কমপক্ষে ১০০ বল)। তার চেয়ে ভাল ইকোনমি রেট শুধুমাত্র আফগান লেগ স্পিনার রশিদ খানের (৬.০০, মোস্তাফিজের ৬.০৮)। তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনেক বড় সম্পদ, কিন্তু এটাও সত্য বাংলাদেশ দল তার উপর একটু বেশিই নির্ভরশীল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গত সিরিজে রুবেল হোসেন ইনিংসের শেষ পাঁচ ওভারে ১০.৪০ গড়ে রান দিয়েছেন (গত দুই বছরে যা ৭.৮৯)। একই সিরিজে মোস্তাফিজের ইকোনমি রেট মাত্র ৪.৬৬। দলের সবচেয়ে বেশি অভিজ্ঞ দুই বোলার মাশরাফি ও সাকিব তিন ম্যাচে শেষ পাঁচ ওভারে মাত্র দুই ওভার বল করেছেন।
এখানেই দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ফর্ম হারিয়ে ফেলা পেসার তাসকিন আহমেদের অভাব বোধ করছে বাংলাদেশ দল। স্লগ ওভারে একসময় দারুণ সফল ছিলেন তিনি। দলে সাকিব আছেন। যিনি যেকোনো পরিস্থিতিতে বল করতে পারেন। আর নতুন বলে দায়িত্ব নেওয়া মাশরাফির কাছে এই বাড়তি চাপ দেওয়াটা কিছুটা অন্যায় মনে হতেই পারে। কারণ, তিনি আবার ৩০তম ওভারের পরও দায়িত্ব সামলাচ্ছেন।
মিরাজ কি দীর্ঘমেয়াদে নতুন বলের বোলার হতে পারবেন?
যথেষ্ট উইকেট ঝুলিতে না পুরতে পারলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বেশ সফল বোলার কিন্তু স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। পেসের হেরফের আর লেন্থে পরিবর্তন এনে উইকেট টু উইকেট বলে করে ব্যাটসম্যানদের বেশ ভোগাতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। গত সিরিজে প্রথম পাওয়ার প্লে-তে তার ইকোনমি মাত্র ৩.৭৩। গত এশিয়া কাপ এবং ঘরের মাটিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ থেকেই এই দায়িত্ব পালন করে চলেছেন তিনি। কিন্তু আগামী ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে পেস-বান্ধব পিচে তিনি কিভাবে কার্যকর হবেন তা এখনই ভাবতে হবে। কারণ নতুন বলের বোলার বলতে এখন বাংলাদেশের ভাণ্ডারে মাশরাফি আর মিরাজই আছেন।
মোস্তাফিজকে চাপের মুহূর্তে বিশেষ করে শেষ ১০ ওভারে ব্যবহার করছেন মাশরাফি। ফলে নতুন বলে পেস বোলার সঙ্কট আসন্ন। সেক্ষেত্রে রুবেল, তাসকিন কিংবা শফিউলকে সুযোগ দেওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশের রিজার্ভ বেঞ্চ কতটা শক্তিশালী?
আগামী ১০ মাসে প্রচুত ক্রিকেট অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ দলের জন্য। তারপর আবার ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ তো আছেই। এই সময়ের মধ্যেই বেশ কিছু বিষয় গুছিয়ে আনতে হবে। টেস্ট ক্রিকেটে ভাল পেস বোলিং আক্রমণ, ওয়ানডের ওপেনিং ব্যাটসম্যান সমস্যা, এবং কমপক্ষে দুজন আক্রমণাত্বক মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান।
শান্ত এখনও ‘এ’ দলের হয়েই খেলে যাচ্ছেন। তাকে ওয়ানডে কিংবা টেস্ট ক্রিকেটে পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সৌম্য, লিটন আর আরিফুলকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। আর আয়ারল্যান্ডে সংক্ষিপ্ত পরিসরের ক্রিকেটে মমিনুলকে বাজিয়ে দেখা হবে।
এছাড়া তরুণ ক্রিকেটারদের মধ্যে মিজানুর রহমান, সাইফ হাসান, আল আমিন এবং আফিফ হোসেন আছেন যারা ‘এ’ দলের হয়ে খেলছেন।
অন্যদিকে তাসকিন, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন আর শরিফুলের বোলারদের সামনে টেস্ট কিংবা টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ দেওয়া হবে। বাংলাদেশের রিজার্ভ বেঞ্চ বলতে মোটামুটি এমনই। এখন এদের প্রস্ফুটিত হওয়ার সুযোগ দিয়ে সিনিয়রদের উপর থেকে বোঝা কমানোর এখনই সময়। নয়তো সিনিয়ররা বিদায় নিলে দলের জন্য তা অশনি সংকেত হিসেবে ধরা দিতে পারে।
(ইএসপিএন ক্রিকইনফো অবলম্বনে)
বাংলাদেশ সময়: ১৩২২ ঘণ্টা, জুলাই ৩০, ২০১৮
এমএইচএম