দিন, মাস, বছর চলে গেলেও যে ছবির পটভূমি আর বদলায় না।
প্রসঙ্গটি এমনি এমনি আসেনি।
উদ্বোধনী ম্যাচে বাঁহাতের কবজির চোটে তামিম ইকবালের ছিটকে যাওয়ায় দলে সুযোগ পেলেন তরুণ নাজমুল হোসেন শান্ত। কী হতাশাজনক ব্যাটিংই না উপহার দিলেন! তিন ম্যাচ থেকে তার সংগ্রহ ৭,৭,৬। আহামরি কিছু করে দেখাতে পারেননি ওপেনিংয়ে তাকে সঙ্গ দেয়া লিটন দাসও। এশিয়া কাপের চলতি আসরের চার ম্যাচে তার ব্যাট থেকে এসেছে ০,৬, ৭ ও ৪১ রান।
আর তাদের জুটির হিসেব করলে তিন ম্যাচে সাকুল্যে এসেছে ১৫,১৫ ও ১৬ রান। চমকপ্রদ জুটি উপহার দিতে পারেননি তামিম-লিটনও। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে এই জুটি দলকে উপহার দিয়েছিলো মাত্র ১ রান। অর্থাৎ এই চার ম্যাচের উদ্বোধনী জুটিতে ব্যাটিং গড় ১১.৭৫ রান।
এবার আসা যাক বছরের শুরু থেকে আজ অব্দি সমীকরণে। ২০১৮ সালে ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই শতরানের কোনো ওপেনিং জুটি পায়নি বাংলাদেশ। পঞ্চাশ পেরোনো জুটি মাত্র পাঁচটি। ওয়ানডেতে একটি, টি-টুয়েন্টি ও টেস্টে এসেছে দুটি করে পঞ্চাশের বেশি জুটি। সর্বোচ্চ ৭৪ রানের জুটিটি এসেছে গেল মার্চে নিদাহাস ট্রফিতে।
খেয়াল করার বিষয় হলো যে পাঁচ ইনিংসে ওপেনিং জুটি পঞ্চাশ পেরিয়েছে, তার একটিতেও বাংলাদেশ হারেনি। এশিয়া কাপে রোববারের আফগানিস্তান ম্যাচ পর্যন্ত এ বছর ১৩টি করে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি এবং ৪টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। ৩৩টি ইনিংসে ওপেন করেছেন তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, আনামুল হক বিজয়, সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস, মোহাম্মদ মিঠুন ও জাকির হাসান।
ঘরের মাঠে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে চলতি বছর বাংলাদেশ বছর শুরু করেছিল জানুয়ারিতে। পাঁচ ম্যাচের চারটিতে তামিম ইকবালের সঙ্গে ওপেন করেন আনামুল হক বিজয়। ওই সিরিজে তাদের সর্বোচ্চ জুটিটি ছিল ৭১ রানের, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। অপর তিন ম্যাচে শুরুর জুটি থেকে আসে ১১, ৬ ও ৩০। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আসরের ফাইনালে আনামুলের স্থলাভিষিক্ত হন মোহাম্মদ মিঠুন। ৩ রান করে শুরুতে তামিম ফিরে গেলে ওপেনিং জুটি থেকে ১১ রানের বেশি আসেনি। ওই সিরিজে ওপেনিং জুটির গড় ২৪.৬।
এরপর ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের চার ইনিংসে তামিম ও ইমরুলের ওপেনিং জুটি থেকে আসে ৪, ৩ ও ৭২, ৫২। কিন্তু চট্টগ্রামে দুই ইনিংসেই স্বাগতিকরা ভালো শুরু পাওয়ায় ম্যাচ ড্র করে বাংলাদেশ।
মার্চে শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত নিদাহাস ট্রফির ৫ ম্যাচে শুধুমাত্র লঙ্কানদের বিপক্ষে একটি ম্যাচে ভাল শুরু করতে পেরেছিল বাংলাদেশ। ৭৪ রানের ওপেনিং জুটি এসেছিলো। বাকি চার ম্যাচে ২৭, ১১, ১২, ২০। পাঁচ ম্যাচের গড় ২৮.৮।
আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে তিন ম্যাচ সিরিজের টি-টোয়েন্টিতে ওপেনিং জুটির রান ৬১, ৭, ০। গড় ২২.৬৬। ওয়ানডে সিরিজে ০, ৩২, ৩৫। গড় ২২.৩৩। টেস্টের অবস্থা আরও সঙ্গীন। দুই ম্যাচের সিরিজে চার ইনিংস যথাক্রমে ২০, ২, ১০ ও ১৪। গড় ১১.৫।
সবচাইতে করুণ ছিলো মে মাসে দেরাদুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে। ০, ১, ১৬! তিন ম্যাচে ১৭ রান ওপেনিং জুটিতে। গড় ৫.৬৬।
কেন এমন হচ্ছে? জানতে চাওয়া হয়েছিলো বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক ওপেনিং ব্যাটসম্যান জাভেদ ওমর বেলিমের কাছে। কারণ হিসেবে টিম ম্যানেজমেন্ট ও ক্রিকেটারদের অস্থিরতাকেই সামনে আনলেন।
‘যারা টিম ম্যানেজমেন্টে আছে আমার কাছে মনে হয় তারা অস্থির। ক্রিকেটাররাও অস্থির। যারা বাংলাদেশের হয়ে ওপেন করছে তারা সবাই প্রতিষ্ঠিত। ইমরুল কায়েস, আনামুল হক বিজয়, সৌম্য যার কথাই বলেন না কেন। আমার মনে হয় ওদের সাথে কথা বলা উচিৎ। আমাদের সমস্যা হলো সবাইকে নেয়ার জন্য অস্তির হয়ে যাই, আবার বাদ দেয়ার জন্য অস্থির হয়ে যাই। ’
সমস্যা যেখানে সমাধানও সেখানে। টাইগার ওপেনারদের অব্যাহত এই করুণ দশা থেকে বেরিয়ে আসার সমাধান নিশ্চয়ই আছে। জাভেদ ওমর সেই সমাধান দিতে গিয়ে প্রথমেই বললেন উইকেট কী চাচ্ছে সেটাকে গুরুত্ব দিতে। পাশাপাশি বিবেচেনায় রাখতে বললেন দলের অবস্থাও।
‘সমাধান হলো যেহেতু ওপেনিং একটি বিশেষায়িত জায়গা সেহেতু একটা প্লেয়ারকে স্থিরভাবে বলা উচিৎ তোমাকে নিয়ে আমার এমন পরিকল্পনা আছে। দ্বিতীয়ত টিম ম্যানেজমেন্টের বলা উচিৎ আমরা এত রান চাই না বড় জুটি চাই। ’
‘ওপেনারদের উইকেটে থাকতে হবে। ওরা মারতে পছন্দ করে। উইকেটে থাকলেই রান হবে। উইকেট কী চাচ্ছে করছে বা সিচুয়েশন কি বলছে করছে সেটাও বিবেচনা করা উচিৎ। উইকেট মারার না হলে আপনি ব্যাট চালালে আউট হবেন। আবার যদি এমন হয় দুটি উইকেট পড়ে গেছে তখন আমার উইকেটে থাকতে হবে। আমার টার্গেট থাকতে হবে ৬ ওভারে ৪০ বা ৬৫ নিব। ’
বাংলাদেশ সময়: ২০২০ ঘণ্টা, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
এইচএল/এমএমএস