চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ১৫ ওয়ানডে খেলে ৯টিতে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু এই সময়ে শীর্ষ চার ব্যাটসম্যানের (একমাত্র তামিম বাদে) রানে অনিয়মিত থাকাটা সন্তোষজনক নয় মোটেও।
সর্বশেষ বাংলাদেশের ওপেনিং জুটি প্রথম ১০ ওভার পর্যন্ত ব্যাট করেছিল সেই জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে। এরপর টানা ১৩ ম্যাচে ওপেনিং জুটিতে রানের খরা চলছে। এশিয়া কাপের ফাইনাল ছাড়া টুর্নামেন্টের বাকি ম্যাচগুলোতে তো প্রথম ১০ ওভার মানেই ২-৩ উইকেট নেই।
ওপেনিংয়ে অধারাবাহিকতার ধারাবাহিক পুনরাবৃত্তি চলতি জিম্বাবুয়ে সিরিজের প্রথম ম্যাচেও দেখা গেছে। শুরুতে রান আউট এবং এরপর মিড-অফে ক্যাচ তুলে নিয়েও জীবন পান লিটন দাস। কিন্তু নিজের ইনিংস দীর্ঘায়িত করতে ব্যর্থ হন এশিয়া কাপের ফাইনালের সেঞ্চুরিয়ান। আরেক ওপেনার ফজলে মাহমুদ রাব্বি তো নিজের অভিষেক ম্যাচে শুন্য হাতেই প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন।
ওপেনিং জুটির ব্যর্থতা মানেই মিডল অর্ডারে বাড়তি চাপ। সামনেই বিশ্বকাপ। এখনও এই প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাওয়া গেল না যে, তামিম ইকবালের ওপেনিং সঙ্গী কে হবেন? ইমরুল ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছেন। কিন্তু তাকে ওপেনিংয়ে খেলানোর সম্ভাবনা আদৌ আছে বলে মনে হয়না।
ওপেনিংয়ে এখন পর্যন্ত অনেককেই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। কেউই নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেন নি। ওপেনিংয়ে কিংবা জাতীয় দলেই আনামুল হক হয়তো আর নাও ফিরতে পারেন। সৌম্য কিংবা নাজমুল হোসেন শান্তকেও সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারাও ব্যর্থ। ওদিকে লিটন এশিয়া কাপে কিছুটা ঝলক দেখালেও সেই ফর্ম ধরে রাখতে পারবেন কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন।
এশিয়া কাপের ফাইনালে মেহেদি হাসান মিরাজকে নিয়ে একটা চেষ্টা করেছিলেন মাশরাফি। কিন্তু ওটা ছিল ঝুঁকি নেওয়া। কাজে লেগেছে, কিন্তু পরে আর নাও লাগতে পারে। চলতি জিম্বাবুয়ে সিরিজ টাইগারদের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ করে দিয়েছে। এই সিরিজেই এর উত্তর খুঁজে বের করতে হবে।
অন্যদিকে সফরকারী জিম্বাবুয়ে চলতি বছর ওয়ানডেতে ওপেনিংয়ে সাতটি ভিন্ন কম্বিনেশন সাজিয়েও কোনো ফল পায়নি। তবে সলোমন মিরে-হ্যামিল্টন মাসাকাদজাই হয়তো তাদের সেরা পছন্দ। তবে জিম্বাবুয়ের জন্য চিন্তার কারণ মিরের ফর্ম। চলতি বছর ওয়ানডেতে তার ব্যাটিং গড় মাত্র ১৪.৭৭। কোনো ফিফটি নেই। আর মাসাকাদজা কয়েকটি বিশোর্ধ রানের ইনিংস খেললেও তা বড় করতে পারেননি।
জিম্বাবুয়ের সঙ্গে বাংলাদেশের পার্থক্য হলো, বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যর্থ হলেও মিডল অর্ডার ঠিকই ক্লিক করছে। কিন্তু জিম্বাবুয়ের ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। তাইতো গত ২৪ ওয়ানডে ম্যাচে মাত্র ৫বার জয়ের মুখ দেখেছে আফ্রিকার দলটি।
নজরে থাকবেন যারা
মোস্তাফিজুর রহমান
প্রথম ম্যাচে মাত্র ১ উইকেট নিলেও বাংলাদেশের ‘কাটার মাস্টার’ মোস্তাফিজুর রহমানের সামর্থ্য নিয়ে কোনো সন্দেহ করার সুযোগ নেই। ম্যাচের গতিপথ একাই পাল্টে দিতে সক্ষম এই বাঁহাতি পেসার। কিন্তু তার ফিটনেস নিয়ে কিছুটা শঙ্কা রয়ে গেছে। আগের ম্যাচে তাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বোলিং করিয়েছেন দলপতি মাশরাফি। তবে তিনি যদি পরের ম্যাচেও দলে থাকেন তাহলে জিম্বাবুয়ের জন্য তিনি একাই বড় বিপদ হতে পারেন। আগের ম্যাচেই ৩৬টি ডট বল দিয়েছেন মোস্তাফিজ।
তার মানে তাকে দেখেশুনে খেলার নীতি গ্রহণ করেছে জিম্বাবুয়ে, যা বাংলাদেশের জন্য আখেরে লাভজনক হবে। কারণ, তাহলে মাশরাফি, রুবেল কিংবা মিরাজ-অপুদের মারতে গিয়ে উইকেট হারাতে পারে জিম্বাবুয়ে। আগের ম্যাচেও তাই হয়েছে। তার বোলিংয়ে চাপে পড়ে গিয়েই ভুল শট কিংবা বাকিদের বলে বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হয়ে গেছেন নার্ভাস জিম্বাবুইয়ানরা।
ব্রেন্ডন টেইলর
জিম্বাবুয়ের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ব্র্যান্ডন টেইলর। বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের হয়ে সবচেয়ে বেশি রান এসেছে তার ব্যাট থেকেই। আর চট্টগ্রামের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে জিম্বাবুয়ের একমাত্র টেইলরই সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। মাঝে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দলে না থেকেও চলতি বছর ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের সবচেয়ে বেশি রান এসেছে তার ব্যাট থেকেই। তবে খুশির খবর হচ্ছে গত মার্চে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ম্যাচে ১৩৮ রানের ইনিংস খেলার পর আর কোনো ফিফটির দেখা পাননি টেইলর। সিরিজ বাঁচাতে তার ব্যাটে রানের দেখা পেতে চাইবে জিম্বাবুয়ে এটাই স্বাভাবিক।
টাইগারদের দলের আপডেট
আগামীকাল বুধবার (২৪ অক্টোবর) চট্টগ্রামের জহুর আহম্মেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় দ্বিতীয় ম্যাচের জন্য বাংলাদেশ দলের ওপেনিংয়ে ফজলে মাহমুদের বদলে নাজমুল হাসান শান্তকে বেছে নেওয়া হতে পারে। যদিও ফজলে মাহমুদকে আরও সুযোগ দেওয়ার পক্ষে মাশরাফি। অন্যদিকে টাইগারদের জন্য খুশির খবর হচ্ছে রুবেল হোসেন ম্যাচের জন্য ফিট।
টাইগারদের জন্য স্বস্তির খবর আরও আছে। চট্টগ্রামের এই মাঠে ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কখনো হারেনি বাংলাদেশ। পাঁচ ম্যাচ খেলে সবকটিতেই জয়।
বাংলাদেশের সম্ভাব্য একাদশ: লিটন দাস, ইমরুল কায়েস, ফজলে মাহমুদ, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মোহাম্মদ মিঠুন, মাহমুদউল্লাহ, মেহেদি হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ সাইফুদ্দীন, মাশরাফি মর্তুজা (অধিনায়ক), নাজমুল ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান।
জিম্বাবুয়ের সম্ভাব্য একাদশ: হ্যামিল্টন মাসাকাদজা, চিপহাস জুহওয়াও, ক্রেইগ আরভিন, ব্র্যান্ডন টেইলর (উইকেটরক্ষক), সিকান্দার রাজা, শন উইলিয়ামস, পিটার মুর, ডোনাল্ড ট্রিপিয়ানো, ব্র্যান্ডন মাভুতা, কাইলি জারভিস, টেন্ডাই চাতারা।
বাংলাদেশ সময়: ২২০১ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৮
এমএইচএম