এভাবেই বাংলানিউজের সঙ্গে দুই বছর আগে ক্রিকেটে ঝুঁকে পড়ার গল্প বলছিলেন সাইফ। বলেন ‘ক্রিকেট শৈশব থেকেই খেলি।
এরপর আসতে থাকে সাফল্য, বয়সভিত্তিক ধাপগুলো পেরিয়ে সুযোগ পায় জাতীয় দলে। তবে জাতীয় দলে আসার পর থেকে বারংবার হোঁচট খাচ্ছিলেন অগ্রসরমান জনপদ ফেনীর ছেলে সাইফউদ্দিন। কিন্তু হাল ছাড়েননি ছোট বেলা থেকেই কঠোর মানসিক শক্তির মালিক সাইফ। সফলতা অবশেষে ধরা দিচ্ছে, নিজেকে মেলে ধরার সর্বাত্মক চেষ্টায় তিনি দেখছেন আলোর মুখ।
জিম্বাবুয়ে সিরিজে প্রথম ম্যাচে হাফ সেঞ্চুরি হাঁকানোর সাইফউদ্দিন দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হয়েছেন ম্যাচ সেরা। চট্টগ্রামের এ ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং ছিল সাইফউদ্দিনের। ৩ উইকেট নিয়ে হয়েছেন ম্যাচের সেরা। ১০ ওভারে বাউন্ডারি দিয়েছেন মাত্র ৩টি।
ম্যাচ শেষে গণমাধ্যমে জানালেন, তার এগিয়ে যাওয়ার গল্প। এসময় সাইফ বলেন, 'ব্যর্থ হলেও ভেঙে পড়িনি কখনো। চেষ্টা করছি ভুলগুলো থেকে শিখতে। মায়ের কাছ থেকেই শিখেছি হোচট খেলে দাড়িয়ে যেতে নেই এগিয়ে যেতে হয়। যতবারই হোঁচট খেয়েছি মায়ের কথাটিকে মনে করেছি। '
মা বলতেন ‘ হাঁটা শিখতে গেলে বারবার হোঁচট খায়, তাতে কি তার হাঁটা বন্ধ হয়ে যায়?’। সাইফউদ্দিনও ঠিক এমনটাই করেছেন বারবার হোঁচট খেলেও হাটা বন্ধ করেননি। ১ ওভারে ৫টি ছয়ের মার খাওয়ার পরও শঙ্কিত হননি। ম্যাচ সেরা হওয়ার পর সাইফ জানালেন, দলের বাইরে থাকার সময়টায় বোলিংয়ে দক্ষতা বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করে গেছেন। মনে দৃঢ় বিশ্বাস ছিল ভাল করবেন।
ফেনী শহরের শাহীন একাডেমি স্কুল অ্যান্ড কলেজে মাধ্যমিক, জয়নাল হাজারী কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক এবং ফেনী সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে অধ্যয়নরত সাইফউদ্দিন।
ক্রিকেটে তার আনুষ্ঠানিক পথচলা ২০০৮ সালে। ফেনী ফ্রেন্ডশিপ ক্রিকেট ক্লাবের মধ্যদিয়ে। এরপর ২০১০ সালে ফেনী জেলা দলের হয়ে বিভাগীয় পর্যায়ে (৫ ম্যাচে ২৭৮ রান) সর্বোচ্চ রান করে অনূর্ধ্ব-১৫ টিমে স্থান করে নেন। একই বছর অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে একটি সিরিজে দুর্দান্ত খেলে (৪৫০ রান, ২৪ উইকেট) জেতেন ম্যান অব দ্য সিরিজ পুরস্কার। ২০১১ সালে সুযোগ পান অনূর্ধ্ব-১৭ দলে খেলার। তার দু’বছরের মাথায় ২০১৩ সালে অনূর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে খেলার পর ডাক পড়ে অনূর্ধ্ব-১৯ দলে।
তারপর থেকে সাইফ তরুণ টাইগারদের নিয়মিত ও গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে জায়গা পোক্ত করে নেন। এই দলের হয়ে ২০১৪ সালে সফর করেন ইংল্যান্ড। পরের বছর সফর করেন শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ২০১৬ সালে জিম্বাবুয়ে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের সঙ্গে হোম সিরিজে ভালো করার পর সুযোগ হয় অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ দলে। মূলত ক্রিকেটপ্রেমীদের নজর কাড়েন বিশ্বকাপ খেলেই। এই আসরে বল হাতে ১৩ উইকেটের পাশাপাশি তুলে নেন ৭৫ রান।
বিশেষত স্লগ ওভারে তার বোলিং নজর কাড়ে সবার। নজর কাড়ে ৭ নম্বর পজিশনে ব্যাট করতে নেমে ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংও। সাইফ পরিচিত হয়ে ওঠেন সম্ভাবনাময় অলরাউন্ডার হিসেবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৫, ২০১৮
এসএইচডি/এমকেএম