শনিবার (১০ নভেম্বর) ভোরে নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাঘিনীরা। বাংলাদেশ সময় ভোর ছয়টায় মাথে নামার আগে দলের বিশাল সম্ভাবনা নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আইসিসি।
বৈচিত্রপূর্ণ বোলিং আক্রমণ
পেস ও স্পিনের বোলিং মিশ্রণে সবসময়ই আক্রমণ বেশ শক্তিশালী হয় বাংলাদেশ দলের। আইসিসির র্যাংকিংয়েও সে কথাই বলে। র্যাংকিংয়ের শীর্ষ দশে রয়েছেন বাংলাদেশের লেগস্পিনার রুমানা আহমেদ (৭) ও বাঁহাতি স্পিনার নাহিদা আক্তার (৯)। এছাড়া দলের বাড়তি শক্তি হিসেবে আছেন দুই অফস্পিনার খাদিজা তুল কুবরা ও সালমা খাতুন।
নতুন বল হাতে দলের দুই পেসার জাহানারা আলম এবং পান্না ঘোষও আগুন ঝরাতে প্রস্তুৎ থাকেন সব সময়। চলতি বছর দুজনই দেখিয়েছেন ম্যাচে পাঁচ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব। দলের কোচ আঞ্জু জেইনের মতে স্পিন ও পেসের মিশেলে তার দলের বোলিং আক্রমণ বেশ বৈচিত্রপূর্ণ।
স্থিতিশীল ব্যাটিং
ব্যাটিংয়ের দিকেও সম্প্রতি বেশ মনোযোগী হয়েছে বাংলাদেশের নারীরা। দলের দুই টপঅর্ডার ব্যাটসম্যান ফারজানা হক এবং শামীমা সুলতানা চলতি বছর হাঁকিয়েছেন দুইটি করে হাফসেঞ্চুরি। দুজনেরই হাত খুলে খেলতে পছন্দ করেন। এদের সঙ্গে আছেন আয়েশা রহমান, সালমা খাতুন ও রুমানা আহমেদ। নিজেদের ইতিহাসের ৮টি সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের সবকটিই এ বছরে করেছে বাংলাদেশ। যার প্রধান কৃতিত্ব ব্যাটসম্যানদের।
কোচ বলেন, ‘আমাদের দলের খেলায় অনেক পরিবর্তন এসেছে, আগের চেয়ে মেরে খেলারও সামর্থ্য বেড়েছে। ’ কোচের মতে, নারী দলের ফিটনেসের উন্নতি হওয়াতেই বর্তমানে রানিং বিট্যুইন দ্য উইকেট ও বড় শট খেলার ধারাবাহিকতা বৃদ্ধি পেয়েছে বাংলাদেশের।
রান তাড়ায় পারদর্শীতা
চলতি বছরে বাংলাদেশ দল এখন পর্যন্ত ১৩টি ম্যাচ জিতেছে। এর মধ্যে ৯টি জয়ই এসেছে পরে ব্যাটিং করে অর্থাৎ লক্ষ্য তাড়া করে। রান তাড়া করার সময় ধৈর্য্য ও একাগ্রতার পরিচয় দিচ্ছে বাংলাদেশ। শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে এশিয়া কাপের ম্যাচে ১৪২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে রেকর্ড গড়েন রুমানা-সালমারা।
এছাড়া এশিয়া কাপের ফাইনাল ম্যাচে ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে একদম শেষ বলে জিতে নিজেদের মানসিক দৃঢ়তারও পরিচয় দিয়েছে বাংলাদেশ দল। কোচ আঞ্জু জেইন মনে করেন নিজেদের মধ্যে দারুণ বোঝাপড়া এবং পরে ব্যাটিং করার সুবিধাটা কাজে লাগানোর শিক্ষা যথাযথ ভাবেই পাচ্ছে দলটি।
শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিপক্ষে প্রস্তুতি
গেলো ১২ মাসে ভারতব্যতীত আর কোনো দল বাংলাদেশের চেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেনি। এসময়ে মধ্যে সালমারা ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, দক্ষিণ আফ্রিকা ও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলেছেন। আর এই সব দলগুলিই বিশ্বকাপেও খেলবে। এমনকি টুর্নামেন্ট শুরুর আগে গ্রেনাডায় এক সপ্তাহব্যাপী অনুশীলন ক্যাম্পে স্থানীয় ছেলে দলের বিপক্ষেও খেলেছে তারা।
বড় দলগুলোর বিপক্ষে বেশি ম্যাচ না জিতলেও এশিয়া কাপে দুইবার হারিয়েছে ভারতকে। জয় পেয়েছে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় না পেলেও পেয়েছে অভিজ্ঞতা।
নিচের সারির দলগুলোর বিপক্ষে আধিপত্য
বড় দলগুলোর বিপক্ষে খুব বেশি সাফল্য না থাকলেও নিচের সারির দলগুলোকে স্রেফ উড়িয়ে দেয়ার ইতিহাস রয়েছে বাংলাদেশের। এ জয়গুলোর ইতিবাচকতা বিশ্ব টি-টোয়েন্টিতে কাজে লাগবে বলে মনে করেন দলের কোচ আঞ্জু জেইন। বলেন, ‘নিজেদের সফলতাগুলোকে খেলোয়াড়রা ইতিবাচকভাবে নেয় এবং অনুপ্রেরণা হিসেবে মানে। চাপে ভেঙে না পড়ে দায়িত্ব নিয়ে কাজ শেষ করে। তাদের সাথে কাজ করা সহজ হয়েছে মূলত তাদের আত্মবিশ্বাস এবং ভালো করার তীব্র ইচ্ছার কারণেই। ’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি স্কিল বা সামর্থ্যের দিক দিয়ে বড় দলগুলোর চেয়ে পিছিয়ে নেই আমরা। পুরো ব্যাপারটাই আসলে মানসিক। কোনো টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া এক জিনিস এবং ভালো খেলার লক্ষ্য নিয়ে খেলা আরেক জিনিস। আমরা এদিকটা নিয়েই কাজ করছি। আমরা এই বিশ্বাস নিয়েই নামবো যে যেকোনো দলকেই হারাতে পারি আমরা। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৯, ২০১৮
এমকেএম