ঢাকা, শনিবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

ফাঁকা গ্যালারি, তবুও টিকিটের আকাশছোঁয়া দাম!

মহিবুর রহমান, স্পেশাল করেসপনডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১, ২০১৮
ফাঁকা গ্যালারি, তবুও টিকিটের আকাশছোঁয়া দাম! ঢাকা টেস্টের দ্বিতীয় দিনে গ্যালারির বড় অংশই রয়ে গেছে ফাঁকা | ছবি: শোয়েব মিথুন

ঢাকা: টেস্ট ক্রিকেটে গ্যালারির বড় অংশ ফাঁকা থাকা নতুন কোনো দৃশ্য নয়। বিগত দিনের সিরিজগুলোর মতো শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার শেষ টেস্টেও সেই দর্শক খরা অব্যাহত। ২৬ হাজার দর্শক ধারণক্ষমার ‘হোম অব ক্রিকেটে’ দ্বিতীয় দিনের মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত সাকুল্যে ১ হাজার দর্শকেওও সমাগম হয়নি।

অথচ স্টেডিয়ামের বাইরে টিকিটের হাহাকার। স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় যারাই ম্যাচের টিকিট কিনতে আসছেন আকাশছোঁয়া দর হাঁকাচ্ছে কালোবাজারিরা।

৫০ টাকার টিকিটের ন্যূনতম দাম ৫শ’ টাকা হাঁকছেন তারা। ভাবটা এমন—কিনলে কেনেন, না কিনলে নেই! একই টিকিট বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত স্থান অর্থাৎ মিরপুর ১০ নম্বর সংলগ্ন সোহরাওয়ার্দী ইনডোরের বুথে মিলছে নির্ধারিত মূল্যেই।

যারা তথ্যটি জানেন না তারা প্রতারিত হচ্ছেন। সেই অজ্ঞাতদের একজন শাহ আলম। তবে আশার কথা হলো, তিনি প্রতারিত হননি। রংপুর থেকে চাকরির ভাইভা দিতে শুক্রবার ঢাকায় এসেছেন। শনিবার ভাইভা হওয়ার কথা ছিলো তার। কিন্তু হয়নি। তার ভাইভার নতুন দিন রোববার। একদিনের অবসর মেলায় কোন চিন্তা না করেই বাংলাদেশের টেস্ট ম্যাচ দেখতে চলে এসেছেন মিরপুর স্টেডিয়ামে।

কিন্তু স্টেডিয়াম পাড়ায় এসে ম্যাচের টিকিট কিনতে গিয়ে খেলেন বড় ধাক্কা। কালোবাজারিরা ৫০ টাকার টিকিট তার কাছে ৫শ’ টাকা চেয়ে বসলেন। মন খারাপ করে বেশ কিছুক্ষণ স্টেডিয়ামের ১ নম্বর গেট থেকে ৫ নম্বর গেট পর্যন্ত ঘোরাঘুরির পর জানতে পারলেন সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামের বুথে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। টিকিটের জন্য ছোট দৈর্ঘ্যের লাইনে দাঁড়িয়ে সেখান থেকে টিকিটও সংগ্রহ করলেন।
মিরপুর স্টেডিয়ামের সামনে প্রকাশ্যেই চলে টিকিট কালোবাজারিস্টেডিয়াম চত্বরে ধাক্কা খাওয়া শাহ আলম বুথে টিকিট কিনতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হলো, সেটা তার কাছে আরো বিস্ময় জাগানিয়া। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশের সহায়তা লাইনের বাইরে থেকে একজন এসে একাই ১০/১২টি টিকিট কিনে নিয়ে গেলেন। অথচ নিয়ম করে দেওয়া আছে যে কেউ একসঙ্গে চারটির বেশি টিকিট কিনতে পারবেন না।

যেহেতু এদেশের ক্রিকেটের অনাদিকাল ধরে চলমান কালোবাজারির সঙ্গে তিনি পরিচিত নন, তাই দৃশ্যটি শাহ আলমকে বিস্মিত করে। সচেতন মনে প্রশ্নের উদ্রেক করে, পুলিশের সহায়তায় টিকিট কালোবাজারি?

বাস্তবতা হলো, রংপুরের শাহ আলমের মতো এমন অগণিত ক্রিকেটপ্রেমী আছেন যারা ঢাকা তো বটেই এবং ঢাকার বাইরের ম্যাচগুলোতেও টিকিট কোথায় বিক্রি হচ্ছে সেই তথ্যটি না জেনে সোজা স্টেডিয়াম পাড়ায় হাজির হন এবং কালোবাজারিদের কাছ থেকে টিকিট কিনে প্রতারিত হন।

কালোবাজারিদের কাছ থেকে যারা টিকিট কেনেন তারা সংবাদ মাধ্যমকে সামনে পেলেই বিস্তর অভিযোগ করেন। এত দাম কেন? বিসিবির কোন নজরদারি কেন নেই? প্রাশাসন কী করে? ইত্যকার নানান প্রশ্ন তোলেন ভুক্তভোগীরা।

তবে কালোবাজিদের খপ্পরে পড়ে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হন তারা দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। প্রিয় খেলোয়াড়দের খেলা দেখতে যারা নির্ধারিত মূল্য নিয়ে টিকিটের সন্ধানে আসেন তারা হয়তো মাঠ থেকে খেলা না দেখার অতৃপ্তি নিয়ে ফিরে যান। নয়তোবা বাধ্য হয়ে বাড়তি টাকা দিয়েই কালোবাজারিদের কাছ থেকে টিকিট কিনে বঞ্চিত হন।

এভাবে প্রতারিতদের জন্য কি আদৌ কিছু করার নেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের? এতদিনে টিকিট কালোবাজারি নিয়ে কত লেখা, কত প্রতিবেদনই তো প্রকাশিত হলো। বলা বাহুল্য বাংলাদেশের ক্রিকেটের প্রাণ মাঠে এসে খেলা দেখা এই মানুষগুলোই। অথচ সেই তারাই ক্রিকেট ম্যাচ দেখতে এসে প্রতিনিয়তই প্রতারিত হন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫০১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৮
এইচএল/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।