বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অভিষেক ম্যাচ। তার ওপর আবার দিনরাতের টেস্ট।
বৃহস্পতিবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) গুজরাটের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামে সিরিজের তৃতীয় টেস্ট ম্যাচটি দ্বিতীয় দিনের খেলা ২৫ ওভার বাকি থাকতেই ১০ উইকেটে জিতেছে ভারত। দুই দল মিলে খেলেছে মাত্র ৮৪২ বল। ১৯৩৫ সালের পর এটাই সবচেয়ে কম দৈর্ঘ্যের টেস্ট। (৮৬ বছর আগে ব্রিজটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ-ইংল্যান্ড ম্যাচটি শেষ হয়েছিল ৬৭২ বলে। )
দ্বিতীয় দিনের খেলা শুরুর পর মাত্র ৫ ঘণ্টার মধ্যেই ১৭ উইকেটের পতন হয়েছে। এর মধ্যে এক সেশনের মধ্যেই ৮১ রানে অলআউট হয়েছে ইংল্যান্ড। ভারতের বিপক্ষে এর আগে এত কমে ইংলিশদের গুটিয়ে যাওয়ার নজির নেই। দুই ইনিংস মিলিয়ে ইংল্যান্ড মোকাবিলা করেছে মাত্র ৪৭৬ বল, যা তাদের টেস্ট ইতিহাসের পঞ্চম সর্বনিম্ন।
কিন্তু ম্যাচের এমন ফলাফলের পেছনে নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের পিচের দায় দেখছেন অনেকে। শুরু থেকেই পিচে অদ্ভুত টার্ন আর বাউন্স দেখা গেল, ধীরে ধীরে সেখানে স্পিনের স্বর্গ আর ব্যাটসম্যানদের সমাধি রচিত হলো। এমনকি পিচে ধুলো উড়তেও দেখা গেল। এই পিচে টিকে থাকাই তখন ব্যাটসম্যানদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে।
দ্বিতীয় দিনে ১৭ উইকেটের সবগুলোই নিলেন স্পিনাররা। এর মধ্যে জো রুট যিনি নিজে পার্ট টাইম বোলার, তিনিও বল হাতে মাত্র ৮ রান খরচে নিলেন ৫ উইকেট। দুই দিনে ভারতীয় স্পিনার অক্ষর প্যাটেল একাই নিলেন ১১ উইকেট। রবিচন্দ্রন অশ্বিনের ঝুলিতে গেল ৯ উইকেট। বোলিংয়েই আসেননি ভারতীয় পেসাররা। ভারতকে মাত্র ৪৯ রান লক্ষ্য দেওয়ার পর বল হাতে নিলেন সেই রুট আর ভারতের প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেওয়া জ্যাক লিচ।
অবস্থা দেখে সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল ভন তো এই পিচকে ‘ভয়ঙ্কর’ এবং ‘পুরোপুরি লটারি’ বলে বসলেন। তার মতে এটা ৫ দিনের টেস্ট ম্যাচের উপযোগীই নয়। তার উত্তরসূরি স্যার অ্যালিস্টার কুকের মতে, এই পিচে ব্যাট করা ‘একেবারেই অসম্ভব’।
পুরো ম্যাচে রান হয়েছে মাত্র ৩৮৭ রানে। ১ লাখ ১০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামে ম্যাচটির স্থায়িত্ব ১৪০.২ ওভার, যা ইতিহাসের সপ্তম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে ক্ষণস্থায়ী টেস্ট ম্যাচ। ২০০০ সালের পর এই প্রথম কোনো টেস্ট শেষ হলো দুই দিনেই।
ইংলিশ অধিনায়ক রুটের আক্ষেপ, উইকেটের কারণে দর্শকরা দারুণ একটা ম্যাচ থেকে বঞ্চিত হলো। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় ম্যাচটা দর্শকদের কাছ থেকে ছিনিয়ে দেওয়া হলো। এর বদলে তারা আমাকে উইকেট পেতে দেখলো। কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। ’
আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, নিম্নমানের পিচের কারণে কোনো স্টেডিয়াম ডিমেরিট পয়েন্ট পেতে পারে, আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনও নিষিদ্ধ করা হতে পারে। কিন্তু বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পয়েন্ট কমানোর সুযোগ নেই। রুটও পিচ নিয়ে সিদ্ধান্তটা আইসিসির ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন।
রুট বলেন, ‘আমার মনে হয় গত কয়েক ম্যাচে যা হয়েছে সেদিকে আইসিসির নজর আছে। আমি নিশ্চিত তারা বিভিন্ন সময় বিশ্বের অন্যান্য উইকেটের দিকেও নজর দিয়েছে। সেসব ক্ষেত্রেও হয়তো একই প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়েছে। সব দলই হোম কন্ডিশনের সুবিধা নেয়। কিন্তু এটা খুবই লজ্জার ব্যাপার যে, আপনার কাছে এত ভালো খেলোয়াড় আছে, কিন্তু তারা একটা টেস্ট ম্যাচে ইনপুট দিতে পারছে না। ’
আহমেদাবাদের পিচ নিয়ে নিষেধাজ্ঞা চান কি না এমন প্রশ্নের জবাবে রুট বলেন, ‘এখন এবং আগামীতেও আমরা এমন মাঠে খেলতে চাই যা হবে চ্যালেঞ্জিং। আর পিচ খেলার উপযোগী কি না তা সেই প্রশ্নের উত্তর দেবে আইসিসি। তবে খেলোয়াড় হিসেবে আমরা অবশ্যই সেরাদের বিপক্ষে প্রতিযোগিতা করতে চাই, কন্ডিশন যা-ই হোক না কেন। তবে অন্তত প্রতিযোগিতাটা তো হতে হবে। ’
রুট স্বীকার করেছেন দলে চার পেসার ও ১ স্পিনার নিয়ে খেলার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল। তবে ভারতীয় অধিনায়ক বিরাট কোহলির মতে, উইকেট নয়, বরং দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে নিবেদনের ঘাটতি থাকার কারণেই ম্যাচটি দুই দিনে শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের জন্য খুবই ভালো পিচ ছিল এটা, বিশেষ করে শুরুতে। বল সুন্দরভাবে ব্যাটে আসছিল। ’
বাংলাদেশ সময়: ১১১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২১
এমএইচএম