অভিষেক টেস্টেই পাথুম নিসানকার সেঞ্চুরি আর ডিকভেলার সেঞ্চুরি ছুঁইছুঁই ইনিংসে ভর করে অ্যান্টিগা টেস্টে চালকের আসনে বসে গেছে শ্রীলঙ্কা।
বুধবার দিনগত রাতে অ্যান্টিগায় সিরিজের প্রথম টেস্টের চতুর্থ দিনে লঙ্কানরা নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস ৪৭০ রান সংগ্রহ করে।
নিজেদের প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৬৯ রানে অলআউট হওয়া শ্রীলঙ্কা চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনে ১০৪ রান যোগ করে এবং চা বিরতির আগে যোগ হয় আরও ৭৬ রান। তবে শেষ সেশনে দ্রুত উইকেট হারানোয় লক্ষ্যটা ৪০০ পর্যন্ত নিতে পারেনি শ্রীলঙ্কা। উইন্ডিজের জন্য সান্ত্বনা বলতে আসলে ওইটুকুই।
আলঝারি জোসেপ দিনের দ্বিতীয় ওভারে ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে বিদায় করার পর দুইটা সেশন উইন্ডিজের জন্য আনন্দের উপলক্ষহীন কাটে। এরপর ডিকভেলা ও নিসানকা মিলে স্বাগতিক বোলারদের নাস্তানাবুদ করে ১৭৯ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন। দ্বিতীয় ইনিংসে সফরকারীদের এটি দ্বিতীয় সেঞ্চুরি জুটি।
দ্বিতীয় নতুন বলে খেলা শুরু হতেই নিসানকা ও ডিকভেলা মিলে ধীরে ধীরে হাত খুলতে থাকেন। দুজনে মিলে উইন্ডিজ বোলারদের পরীক্ষায় ফেলে দেন। শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ফিফটি তুলে নেন নিসানকা। ব্রেক থ্রো পেতে মরিয়া উইন্ডিজ মধ্যাহ্ন বিরতির আগে ও পরে দুটি রিভিও খরচ করে ফেলে। কিন্তু যখন সত্যিকার অর্থেই সুযোগ আসে তখন আর রিভিওয়ের উপায় ছিল না।
জেসন হোল্ডারের বল ডিকভেলার ব্যাটের কানায় স্পর্শ করে গালিতে থাকা ফিল্ডারের দিকে যায়। তখন ৪৪ রানে ব্যাট করছিলেন ডিকভেলা। কিন্তু ক্যাচটি নিতে পারেননি সেখানে থাকা এনক্রুমাহ বনার। জীবন পেয়ে আরও ৫২ রান যোগ করেন ডিকভেলা। পরে ৭৪ রানে ব্যাট করা অবস্থায় ডিকভেলার ব্যাট ছুঁয়ে বল উইকেটরক্ষকের গ্লাভসে জমা হলেও আম্পায়ার নট আউটের সিদ্ধান দেন। কিন্তু রিভিও না থাকায় কপাল পোড়ে স্বাগতিকদের। ৯৫ রানে কেমার রোচের বাউন্সারে বল তার হেলমেটে লাগলেও বেল অক্ষত থেকে যায়।
তবে দিনটা অবশ্যই ২২ বছর বয়সী নিসানকার। গলের এই তরুণ মাত্র চতুর্থ লঙ্কান ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট অভিষেকেই সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩৩ ম্যাচ খেলে ১৩ সেঞ্চুরি। ব্যাটিং গড় ৬৭.৫৪। এমন চোখধাঁধানো ফর্ম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও বয়ে এনেছেন তিনি। ধৈর্যের প্রতিমূর্তি হয়ে ২৪০ বলে তিন অংকের দেখা পান তিনি। ১০৩ রানের ইনিংসটির ৮৯ রানই তিনি ১ ও ২ রান করে তুলে নিয়েছেন। ১২৬ বলে ৫ চারে ফিফটি করার পর সেঞ্চুরি পর্যন্ত যেতে চার মারেন মাত্র ১টি।
সেঞ্চুরি পাওয়ার পর রাকিম কর্নওয়ালকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে আউট হন নিসানকা। এরপর মাত্র ৪ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন ডিকভেলা। ১৬৩ বলে ৮ চারে সাজানো ইনিংসটি শেষ হয় কেমার রোচের বলে বোল্ড হলে। লঙ্কান ইনিংসের শেষটা মধুর হয়নি। ৪৬০ রান থেকে ৪৭৬, এই ১৬ রানেই তারা বাকি ৪ উইকেট হারায়।
এরপর লক্ষ্য তাড়ায় নামা উইন্ডিজ দলীয় ১২ রানেই হারায় ওপেনার জন ক্যাম্পবেলের উইকেট। বিশ্ব ফার্নান্দোর বলে উইকেটরক্ষক ডিকভেলার হাতে ক্যাচ তুলে দেন ক্যাম্পবেল। বাকি সময় উইকেটে টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যান ক্রেইগ ব্যাথওয়েট ও বনার। দুজনের লড়াইটাও বেশ চমক জাগানিয়া। লঙ্কান বোলারদের ছোবল সামলে ৮ রানে অপরাজিত থাকা ব্র্যাথওয়েট খেলেছেন ৬৫ বল। তার সঙ্গী বনার ১৫ রানে অপরাজিত আছেন ৪০ বল খেলে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ১৬৯
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ২৭১
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: (আগের দিন ২৫৫/৪) ১৪৯.৫ ওভারে ৪৭৬ (থিরিমান্নে ৭৬, ধনাঞ্জয়া ৫০, নিসানকা ১০৩, ডিকভেলা ৯৬; রোচ ৭৪/৩, জোসেফ ৮৩/১, কর্নওয়াল ১৩৭/৩, মেয়ার্স ২৪/২।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৭৫) ২০ ওভারে ৩৪/১ (ব্র্যাথওয়েট ৮*, ক্যাম্পবেল ১১, বনার ১৫*; বিশ্ব ২১/১।
বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০২১
এমএইচএম