দুইশ ছাড়ানো সংগ্রহ গড়ে সহজেই জেতার পথে ছিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। কিন্তু তাদের পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়ান সিলেট সানরাইজার্সের দুই ব্যাটার আনামুল হক ও কলিন ইনগ্রাম।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শনিবার বিপিএলের দ্বাদশ ম্যাচে ১৬ রানে জিতেছে চট্টগ্রাম। শুরুতে ব্যাট করে ৫ উইকেট হারিয়ে ২০২ রানের পাহাড় গড়ে নাঈমবাহিনী। জবাবে মোসাদ্দেকের সিলেট ৬ উইকেট হারিয়ে ১৮৬ রান তুলতে পারে।
ম্যাচটা আসলে ঘুরিয়ে দিয়েছেন মৃত্যুঞ্জয়। ২০ বছর বয়সী চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের এই পেস বোলিং অল-রাউন্ডার আসরের প্রথম হ্যাটট্রিক উপহার দিয়েছেন। একে একে তুলে নিয়েছেন দারুণ খেলতে থাকায় এনামুল হক বিজয়, মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত আর রবি বোপারাকে।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে স্কোর বোর্ডে ৯ রান তুলতেই লেন্ডল সিমন্সের উইকেট হারায় সিলেট। ক্যারিবীয় এই ওপেনার ৯ রান করে নাসুম আহমেদের বলে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন। তবে এরপর আনামুল ও ইনগ্রাম মিলে ১১২ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন। মূলত এই জুটিতেই স্বপ্ন দেখতে শুরু করে সিলেট। দুজনেই পান ফিফটির দেখা।
ইনগ্রাম বিদায় নেন ঠিক ব্যক্তিগত ৫০ রানেই। ৩৭ বলের মোকাবিলায় ৫ চার ও ২ ছক্কায় সাজানো ইনিংসটি শেষ হয় মেহেদী হাসান মিরাজের বলে বোল্ড হয়ে। এরপর নাসুমের বলে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হয়ে দ্রুত বিদায় নেন আলাউদ্দিন বাবু (১)। এরপর বিজয়ের সঙ্গী হন রবি বোপারা। তাদের ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ে ২০ বলে ৪২ রানের জুটি দাঁড়িয়ে যায়। এমন সময় বিজয়কে নাসুম আহমেদের তালুবন্দি করেন মৃত্যুঞ্জয়।
১৮তম ওভারের তৃতীয় বলে আউট হওয়ার আগে ৪৭ বলে ৯ চার ৩ ছক্কায় ৭৮ রানের দারুণ ইনিংস খেলেন বিজয়। পরের বলে তার শিকার হন সিলেট অধিনায়ক মোসাদ্দেক (০)। পঞ্চম বলে রবি বোপারাকে (১৬) বোল্ড করে মৃত্যুঞ্জয় হ্যাটট্রিক পূরণ করেন। চলতি বিপিএলে এটি প্রথম হ্যাটট্রিক। সেখান থেকে সিলেট আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি।
বল হাতে চট্টগ্রামের মৃত্যুঞ্জয় ৩ উইকেট এবং নাসুম ২ উইকেট তুলে নিয়েছেন। বাকি উইকেট মিরাজের।
এর আগে ঘরের মাঠে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স রীতিমত রানের বন্যা বইয়ে দেয়। আগ্রাসী শুরুটা করেছিলেন উইল জ্যাক। এই ইংলিশ ব্যাটারের ঝড়ো ফিফটিতে বড় সংগ্রহের ভিত পেয়ে যায় চট্টগ্রাম। পরে তা বিশাল আকার দেন আফিফ-সাব্বির এবং বেনি হাওয়েলরা।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা চট্টগ্রামকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন কেনার লুইস এবং উইল জ্যাকস। দুজনে গড়েন ৬২ রানের ওপেনিং জুটি। বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ১৮ বলে ফিফটি তুলে নেন উইল জ্যাকস। তাসকিনকে বাউন্ডারি মেরে হাফ সেঞ্চুরি করার পরের বলেই সিমন্সের তালুবন্দি হয়ে ফেরেন এই ইংলিশ ক্রিকেটার। থামে ১৯ বলে ৫২ রানের ইনিংস। ১২ বলে ৮ রান করা অপর ওপেনার কেনার লুইস বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। পরের ওভারেই সোহাগ গাজীর বলে সানজামুলের তালুবন্দি হন।
ঝড়ো শুরুর পর এই পর্যায়ে চট্টগ্রামের রান তোলার গতি কমে যায়। ৪৭ রানের জুটিতে বিপর্যয় সামাল দেন পরের দুই ব্যাটার আফিফ হোসেন এবং সাব্বির রহমান। মোসাদ্দেকের বলে ক্যাচ দিয়ে ২৯ বলে ৩ চারে ৩১ রান করা সাব্বির আউট হলে ভাঙে এই জুটি। এরপর আফিফও ২৮ বলে ১ চার ৩ ছক্কায় ৩৮ রান করে রবি বোপারার শিকার হন।
চট্টগ্রামের নতুন অধিনায়ক নাঈম ইসলাম ৭ বলে ৮ রান করেন। ব্যাট হাতে বিধ্বংসী বেনি হাওয়েল খেলেন ২১ বলে ২ চার ৩ ছক্কায় ৪১ রানের অপরাজিত ইনিংস। সদ্য নেতৃত্ব হারানো মেহেদি মিরাজও ৪ বলে ২ ছক্কায় ১৩* রান করে অবদান রাখেন। দুজনের অবিচ্ছিন্ন ১০ বলে ৩১ রানের বিধ্বংসী জুটিতে চট্টগ্রামের স্কোর ২০০ ছাড়ায়।
৫ ম্যাচে ৩ জয় ও ২ হারে ৬ পয়েন্ট নিয়ে চট্টগ্রাম উঠে এলো পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে। অন্যদিকে ৪ ম্যাচে ৩ হার ও ১ জয়ে মাত্র ২ পয়েন্ট পাওয়া সিলেট নেমে গেল ছয়ে।
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২২
এমএইচএম