ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ভর্তি পরীক্ষায় ফেল, উপাচার্যের বিশেষ বিবেচনায় পাস ১৭৭ জন

মোহাম্মদ আজহার, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৪৪ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩
ভর্তি পরীক্ষায় ফেল, উপাচার্যের বিশেষ বিবেচনায় পাস ১৭৭ জন ...

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: ভর্তি পরীক্ষায় আশানুরূপ শিক্ষার্থী পাস না করায় বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষ। আসন ফাঁকা থাকার শঙ্কায় শেষ পর্যন্ত পাসের হার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়।

এক্ষেত্রে পাস নম্বর সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য ৪০ থেকে কমিয়ে ৩৩ এবং কোটায় পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীদের জন্য ৩৫ থেকে কমিয়ে ২৮ করা হয়েছে।  

গত ২৫ মে চবির ২০২২-২৩ সেশনের বি-১ উপ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়।

 তবে এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই উপাচার্যের বিশেষ ক্ষমতাবলে ফলাফল পরিবর্তন করা হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির একাধিক সদস্য।  

এর আগে গত ২৪ মে অনুষ্ঠিত হয় বি-১ উপ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। কলা ও মানববিদ্যা অনুষদভুক্ত এই উপ-ইউনিটের পরীক্ষায় ৯১৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিলেও পাস করেন ১৫২ জন। বি-১ উপ-ইউনিটের অধীনে চারুকলা ইনস্টিটিউটে ৬০, নাট্যকলা বিভাগে ৩৫ এবং সংগীত বিভাগে ৩০টি আসন রয়েছে। সেই হিসেবে মোট ১২৫টি আসনের বিপরীতে ১৫২ জন পাস করায় সবগুলো আসন পূরণ না হওয়ার আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ।  

নির্ধারিত নিয়মে পাসের হার কম হওয়ায় গত ২৫ মে কলা ও মানববিদ্যা অনুষদ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত জরুরি সভায় পাস নম্বর কমানোর সিদ্ধান্ত হয়। অনুষদের ডিন ও ভর্তি পরীক্ষার বি-ইউনিটের কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হকের সভাপতিত্বে এ সভায় কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের সকল বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের সভাপতি এবং পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন।

সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পাস নম্বর সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ৪০ নম্বরের পরিবর্তে ৩৩ নম্বর এবং কোটায় পরীক্ষা দেওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে ৩৫ নম্বরের পরিবর্তে ২৮ নম্বর নির্ধারণ করা হয়। পাশাপাশি বিষয়টি কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির (কোর কমিটি) পরবর্তী সভায় রিপোর্ট করার সিদ্ধান্ত হয়। এ সংক্রান্ত একটি ডকুমেন্ট  বাংলানিউজের হাতে এসেছে।

এদিকে প্রথমবার ১৫২ জন পাস করলেও পাস নম্বর কমানোর পর সাধারণ আসনে পাসের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৭৬ এবং কোটায় পাস করেছে ৫৩ জন। সংশোধিত ফলাফলে সর্বমোট ৩২৯ জন মেধাতালিকায় স্থান পেয়েছে। যার ফলে ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করলেও উপাচার্যের বিশেষ বিবেচনায় পাস করেছেন ১৭৭ জন। পাশাপাশি প্রথমবারের তুলনায় সংশোধিত ফলাফলে পাসের হার বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৮০ শতাংশ।  

গত সোমবার (২৯ মে) বেলা ১১টায় অনুষ্ঠিত কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভায় নম্বর কমিয়ে পাসের হার বাড়ানোর বিষয়টি রিপোর্ট করা হলে কোর কমিটি সেটি গ্রহণ করেননি বলে জানিয়েছেন সভায় উপস্থিত থাকা কয়েকজন সদস্য।  

কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির একাধিক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, ভর্তি সংক্রান্ত কোর কমিটির সভায় বিষয়টি আলোচ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত ছিলো না। তবে বিবিধ আলোচনার সময় বিষয়টি রিপোর্ট আকারে পেশ করা হলে আমরা সেটি গ্রহণ করিনি।  কারণ উপাচার্য যেহেতু নিজের ক্ষমতাবলে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেহেতু নিয়মানুযায়ী এ বিষয়ে উপাচার্যকেই রিপোর্ট করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু সেখানে রিপোর্ট পেশ করেছেন কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন ও বি-ইউনিটের কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় হয়নি।  

ভর্তি কমিটির ওই সদস্যরা আরও বলেন, ফলাফল সংশোধনের চারদিন পর কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটিকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। এর আগে আমরা বিষয়টি জানতাম না। তাহলে ভর্তি কমিটি কেন রাখা হলো? ভর্তি কমিটির সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা ছাড়াই উপাচার্যের বিশেষ বিবেচনায় যেহেতু ফেল করা শিক্ষার্থীদের পাস করানো হয়েছে, সেহেতু এর সম্পূর্ণ দায়ভার যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং যিনি অনুমতি দিয়েছেন তাঁর।  

কোর কমিটির আরেকজন সদস্য বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত নিয়মে পর্যাপ্ত পরিমাণ শিক্ষার্থী যদি ভর্তি পরীক্ষায় পাস না করেন তাহলে প্রয়োজনে আসন ফাঁকা থাকবে। কিন্তু ফেল করা শিক্ষার্থীদের জন্য নিয়মনীতি শিথিল করে পাস করানোর সুযোগ নেই। তবে যদি নির্ধারিত প্রক্রিয়ায় পাসের হার কম থাকার কারণে কোনো বিভাগে প্রতিবছরই আসন ফাঁকা থাকে, তাহলে প্রয়োজনে আসন কমাতে হবে। অথবা ভর্তি সংক্রান্ত নোটিশ দেওয়ার আগেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কিন্তু ভর্তি পরীক্ষার পরে পাসের হার বাড়ানোর জন্য তো নিয়ম পরিবর্তন করতে পারি না আমরা’।

কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সদস্য ও আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ আল ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, এটি কোর কমিটির সভার আলোচ্যসূচিতে ছিলো না। কিন্তু এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভায় রিপোর্ট করা হয়েছিল। তখন কোর কমিটির সদস্যরা বলেছেন, যেহেতু উপাচার্যের সিদ্ধান্তক্রমে কাজটি হয়েছে, তাই এ বিষয়ে আর আলোচনার প্রয়োজন নেই। এছাড়া এতে কেউ দ্বিমত পোষণ করেননি।

কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন ও ভর্তি পরীক্ষার বি-ইউনিটের কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক বাংলানিউজকে বলেন, বি-১ উপ-ইউনিটে ১২৫টি আসনের বিপরীতে পাস করেছিল ১৫২ জন। পাস করা শিক্ষার্থীদের অনেকে অন্য ইউনিট বা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পরীক্ষা দিয়েছেন সেখানেও ভর্তি হতে পারেন। যার ফলে অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা ধারণা করছি ওই উপ-ইউনিটের বিভাগগুলোর অর্ধেক আসন ফাঁকা থেকে যেতে পারে। তাই আমরা পাসের হার কিছুটা বাড়ানোর জন্য বি-ইউনিট এবং বি-১ উপ-ইউনিটের কমিটির সকল সদস্যদের সঙ্গে বসে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরবর্তীতে এ বিষয়ে উপাচার্যের কাছে সুপারিশ করা হলে তিনি সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ফলাফল সংশোধনের অনুমতি দেন।

ভর্তি কমিটির সঙ্গে আলোচনা ছাড়া উপাচার্য এককভাবে এমন অনুমতি দিতে পারেন কি-না জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ অ্যাক্ট ১৩ (সি) ধারা অনুযায়ী উপাচার্যকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, সেই ক্ষমতাবলে তিনি এ অনুমতি দিতে পারেন। তাছাড়া এ ধরনের ঘটনা আগেও ঘটেছে, বিষয়গুলো এভাবেই সমাধান করা হয়েছে। আগের ডিনদের সঙ্গে কথা বললে আপনি সেটা জানতে পারবেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ এক্ট ১৩ (সি) ধারায় বলা হয়েছে, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সংক্রান্ত বিষয়ে উদ্ভূত কোনো জরুরি পরিস্থিতিতে উপাচার্যের নিজস্ব বিবেচনায় তাৎক্ষণিক কোনো কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক বিবেচিত হলে, তিনি স্বীয় বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন এবং পরবর্তী নিকটতম সময়ের মধ্যে গৃহীত কার্যব্যবস্থা অনুমোদনের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট পেশ করবেন’।

যদিও কোর কমিটির কয়েকজন সদস্য জানান, উপাচার্য এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি ভর্তি কমিটিকে জানাননি। উপাচার্যের পরিবর্তে ভর্তি পরীক্ষার বি-ইউনিটের কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক এ রিপোর্ট পেশ করায় ভর্তি কমিটি সেটি গ্রহণ করেনি। তাছাড়া এমন কোনো জরুরি পরিস্থিতিও সৃষ্টি হয়নি যে, ভর্তি কমিটিকে না জানিয়ে তাৎক্ষণিক এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে।  

সার্বিক বিষয়ে বি-ইউনিটের কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহবুবুল হক বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তাছাড়া বি-১ উপ-ইউনিটের কমিটির সদস্যরা ছাড়াও পুরো বি-ইউনিটের কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়। এখানে নিয়মের কোনো ব্যত্যয় ঘটেনি। বিষয়টি স্পষ্ট এবং লুকোচুরিরও কিছু নেই।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সচিব ও চবির একাডেমিক শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার এসএম আকবর হোছাইন বাংলানিউজকে বলেন, এসব বিষয়ে কথা বলবেন ইউনিট কো-অর্ডিনেটর। ফলাফলের বিষয়ে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। আমি এসব জানি না এবং এ বিষয়ে আমার বলার কিছু নেই।

এর আগে গত ২৪ মে অনুষ্ঠিত বি-১ উপ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ১৩৮২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ৯১৮ জন অংশ নেন। পরদিন ২৫ মে এই উপ-ইউনিটের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায় মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল এবং ভর্তি পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরসহ মাত্র ৩৮ দশমিক ৯৪ নম্বর পেয়েও মেধাতালিকায় রয়েছেন কোটায় ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া একজন। এছাড়া কোটায় সর্বোচ্চ নম্বর উঠেছে ৬৬ দশমিক ২৫।  

বি-১ উপ-ইউনিটে সাধারণ আসনে মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল এবং ভর্তি পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরসহ সর্বনিম্ন ৪৪ দশমিক ৮৯ নম্বর পেয়ে মেধাতালিকায় ২৭৬তম হয়েছেন। এছাড়া সাধারণ আসনে সর্বোচ্চ নম্বর উঠেছে ৮৭ দশমিক ২২।  

বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০২৩
এমএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।