ঢাকা, মঙ্গলবার, ৯ বৈশাখ ১৪৩২, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ডিসি হিলে বর্ষবরণে লাগাম, সিআরবিতে চলবে দুইদিন

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৫
ডিসি হিলে বর্ষবরণে লাগাম, সিআরবিতে চলবে দুইদিন ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: নগরের নন্দনকানন ডিসি হিলে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে টানা হয়েছে লাগাম। নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে হবে অনুষ্ঠান।

এছাড়া সিআরবি শিরীষতলায় বর্ষবিদায় ও বরণ অনুষ্ঠান হবে দুইদিন, তাও নির্দিষ্ট সময়ে।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমের সভাপতিত্বে সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সভা হয়।

ওই সভায় সোমবার (১৪ এপ্রিল) ভোর সাড়ে ৬টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বর্ষবরণের অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হয়।

জানা গেছে, ডিসি হিলে বাংলা বর্ষবরণ অনুষ্ঠান এবার ৪৭ বছরে পা রাখছে। ৫১টির বেশি সংগঠন সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নিচ্ছে। প্রত্যেক সংগঠনের জন্য সময় বরাদ্দ থাকবে ৮ মিনিট। আয়োজনের মধ্যে থাকবে- দেশাত্মবোধক গান, নৃত্য, আবৃত্তিসহ নানা পরিবেশনা। অতিথি থাকবেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ফরিদা খানম। আগে বর্ষবিদায় ও বরণ অনুষ্ঠান হতো দুই দিনব্যাপী।

সম্মিলিত পহেলা বৈশাখ উদ্‌যাপন পরিষদের সমন্বয়কারী সুচরিত দাশ খোকন জানান, প্রশাসন বিকাল ৪টা পর্যন্ত অনুষ্ঠান করার অনুমতি দিয়েছে। বিতর্ক হবে- এমন কোনো গান বা কবিতা পরিবেশন না করার কথা বলা হয়েছে। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে এ বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছি। অনুষ্ঠানে যেসব সংগঠনের পরিবেশনা থাকবে, তাদের তালিকা প্রশাসনকে দেওয়া হবে।  

এদিকে সিআরবিতে বর্ষবিদায় অনুষ্ঠান রোববার (১৩ এপ্রিল) বিকাল সাড়ে ৩টা থেকে ৫টা এবং বর্ষবরণ অনুষ্ঠান সোমবার (১৪ এপ্রিল) সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শেষ করার কর্মসূচি দিয়েছে নববর্ষ উদযাপন পরিষদ, চট্টগ্রাম। অনুষ্ঠানে ৬০টির বেশি সাংস্কৃতিক সংগঠন অংশ নেবে। তবে এবার হচ্ছে না সাহাব উদ্দিনের বলীখেলা।  

সিএমপি কার্যালয়ে নববর্ষ উদ্‌যাপন সংক্রান্ত সভায় অনুষ্ঠানের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে ডিসি হিল, সিআরবি ও শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠেয় বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের আয়োজকদের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়।

নববর্ষ উদযাপন পরিষদের উৎসব কমিটির আহ্বায়ক হাসান মারুফ রুমি বলেন, সমন্বয় বৈঠকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। আমরা দুইদিনের অনুষ্ঠান আয়োজন করেছি।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. কামরুজ্জামান বলেন, সকাল ৭টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ডিসি হিলে অনুষ্ঠান করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। নিরাপত্তাসহ সামগ্রিক বিষয় পর্যবেক্ষণে একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে তদারক কমিটি করা হয়েছে। এতে ছাত্র প্রতিনিধি, জাসাসসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও আছেন। অনুষ্ঠানস্থলে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য আয়োজকদের বলা হয়েছে।

অপরদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা পহেলা বৈশাখকে বরণ করে নিতে এখন ক্যাম্পাসে ব্যস্ত সময় পার করছেন। নগরের বাদশা মিঞা সড়কের চারুকলা ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা পালাক্রমে বর্ণিল সব মুখোশ তৈরি আর রংতুলির আঁচড়ে মাটির সরাতে চিরায়িত বাঙালি ঐতিহ্য ফুটিয়ে তুলছেন।
 
চারুকলার শিক্ষার্থীরা জানান, পহেলা বৈশাখের সকাল পর্যন্ত চলবে কর্মযজ্ঞ। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রায় থাকবে ইলিশের প্রতিকৃতি। কাগজ আর বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বানানো হচ্ছে জীব-জন্তুর প্রতিকৃতি। শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীকী উপস্থাপনের নানা বিষয় স্থান পাবে। অশুভ শক্তি দূর করে নতুন বছরে নতুন আবাহনে সৌন্দর্য বরণের প্রত্যয়ে হবে এ শোভাযাত্রা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করবেন। এছাড়া পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে বাদশা মিয়া সড়ক ক্যাম্পাস আলপনায় ভরিয়ে তোলা হচ্ছে।

১৯৯০ সালে প্রথম চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজন শুরু হয়। ২০১০ সালে চারুকলা বিভাগ চারুকলা কলেজের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পর থেকে প্রতি বছর চারুকলার শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্রভাবে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন শুরু করে। ২০০৬ সালে চট্টগ্রাম সরকারি চারুকলা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরা নববর্ষের বারতা, বাঙালির চিরন্তন ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে নগরবাসীর কাছে ছড়িয়ে দিতে ছোট পরিসরে আয়োজন করেছিলেন মঙ্গল শোভাযাত্রা। পরবর্তীতে এ শোভাযাত্রা আয়োজনের ভার নেয় চবি’র চারুকলা ইনস্টিটিউট।

চবি চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক প্রণব মিত্র চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত পহেলা বৈশাখের শোভাযাত্রা। এই শোভাযাত্রা অশুভকে দূর করা, সত্য ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির প্রতীক। এই শোভাযাত্রার মাধ্যমে বাঙালির ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, জাতিগত সব ধরনের বৈশিষ্ট্য এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের কাছে হস্তান্তরিত হয়।

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ বরণ উপলক্ষ্যে চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির উদ্যোগে ১৩ এপ্রিল থেকে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত ৩ দিনব্যাপী বৈশাখী উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজনের ১ম দিন রোববার বিকাল ৪টায় চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমির অনিরুদ্ধ মুক্ত মঞ্চে চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে থাকবে দেশের গান, লোকগান, নৃত্য, তবলা লহড়া কথামালা ও আবৃত্তি। ২য় দিন সোমবার সকাল ৮টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে বৈশাখী আনন্দ শোভাযাত্রা নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণের মাধ্যমে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের সূচনা হবে। বর্ষবরণ ও বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালায় থাকবে দেশের গান, লোকগান, নৃত্য, কথামালা ও আবৃত্তি এবং বাঙালির ঐতিহ্য ও দেশিয় খাবার। ৩য় দিন মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় অনুষ্ঠিত হবে বাউল গানের আসর ‘বৈশাখী সাধুমেলা’।  

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১১, ২০২৫
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।