ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২, ০১ মে ২০২৫, ০৩ জিলকদ ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

নয় মাসে চট্টগ্রাম বন্দরের যত অগ্রগতি

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১:২২, মে ১, ২০২৫
নয় মাসে চট্টগ্রাম বন্দরের যত অগ্রগতি ...

চট্টগ্রাম: দেশের অর্থনীতির স্বর্ণদ্বার খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দর গত নয় মাসে প্রায় সব খাতে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে প্রধান চারটি খাত- কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং, জাহাজের গড় অবস্থান সময় এবং রাজস্ব আহরণে।

বড় অগ্রগতি হয়েছে বে টার্মিনাল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে।

চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর, বিভিন্ন বিমানবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে যে পরিমাণ পণ্য আমদানি রপ্তানি হয় তার মধ্য দিয়ে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা ও অর্থনৈতিক কর্মযজ্ঞের প্রতিফলন ঘটে।

এর মধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই হয়ে থাকে প্রায় ৯২ শতাংশ বৈদেশিক বাণিজ্য। তাই এ বন্দরের কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণের মধ্যে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির চিত্র ধরা পড়ে।  

চলতি অর্থবছরের শুরুতে ছিল জুলাই বিপ্লব। এ সময় ডলার ও এলসি সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সড়কে জ্বালাও পোড়াও, ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া, ভয়াবহ বন্যা ইত্যাদি কারণে বিঘ্ন ঘটেছিল বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে। তারপর নতুন উদ্যমে শুরু হয় বন্দরের এগিয়ে চলা।

চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেশি হয়েছে আগের অর্থববছরের একই সময়ের চেয়ে ৫ দশমিক ০১ শতাংশ। নয় মাসে জেনারেল কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ৯ কোটি ৭১ লাখ ১৩ হাজার টন। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি। নয় মাসে জাহাজ হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩ হাজার ৫৮টি।

মেরিটাইম বিশ্বে বন্দরে জাহাজের গড় অবস্থান সময় বড় নির্ণায়ক। চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জাহাজ বহির্নোঙরে আসার দুই-এক দিনের মধ্যে জেটিতে ভিড়ছে। ক্ষেত্রবিশেষে অনঅ্যারাইভাল (সরাসরি) জেটিতে ভিড়ছে।  

বন্দরের রাজস্ব আহরণের ৮৫ শতাংশ আসে জাহাজ সেবা ও পণ্য বা কনটেইনার হ্যান্ডলিং খাত থেকে। ১৯৮৬ সালে প্রণীত ট্যারিফের আওতায় যাবতীয় সেবার বিপরীতে মাশুল আদায় করছে বন্দর। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে ৩ হাজার ৭৪৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দরে। যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি। রাজস্ব উদ্বৃত্ত ৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ বেশি।  

বন্দর ব্যবহারকারীরা এ বন্দরের নানা সূচকে প্রবৃদ্ধিতে সন্তুষ্ট হলেও সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছেন। তারা শতভাগ অটোমেশন, ইউরোপ ও আমেরিকার বিভিন্ন বন্দরে সরাসরি জাহাজ সার্ভিস চালু, নিলাম ও ধ্বংসযোগ্য পণ্যের কনটেইনার দ্রুত খালি করা, অফডক ফ্যাসিলিটি বাড়ানো, বন্দরের ভেতরে কনটেইনার খুলে ডেলিভারি কার্যক্রম সীমিতকরণ, বেটার্মিনাল নির্মাণ, ট্রাক টার্মিনাল তৈরি, ঢাকা-চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ে, দ্রুতগতির পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল বৃদ্ধি ইত্যাদির ওপর গুরুত্বারোপ করে আসছেন।  

বন্দরসচিব মো. ওমর ফারুক বাংলানিউজকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সুব্যবস্থাপনা, অটোমেশন, দক্ষতা, অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দেশের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বন্দরের শেড, ইয়ার্ড ও টার্মিনালে ব্যাপক সংস্কার চলছে। বিশেষ করে বছরের পর বছর ডেলিভারি না নেওয়া লোহার পাইপ, বাক্স, রাসায়নিক পণ্য  সরিয়ে জায়গা অবমুক্তির পাশাপাশি বন্দরকে ঝুঁকিমুক্ত করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ৬১৭ টিইইউস কনটেইনার পণ্য ধ্বংস করা হয়েছে। মাননীয় নৌ পরিবহন উপদেষ্টার নির্দেশে তাৎক্ষণিক পি শেডের মাঠ থেকে নিলামযোগ্য ৩০৪টি গাড়ি রিমোভ করা হয়েছে। ওই জায়গায় ইয়ার্ড বানিয়ে কনটেইনার ধারণক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।

তিনি জানান, ইতিমধ্যে বে টার্মিনাল, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে অনেক অগ্রগতি হয়েছে। একনেকে বে টার্মিনালের ডিপিপি অনুমোদন হয়েছে। বেটার্মিনালের চ্যানেলে ব্রেক ওয়াটার নির্মাণের লক্ষ্যে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। ২০২৯-৩০ সালের মধ্যে এ টার্মিনাল নির্মাণকাজ শেষ করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১১ ঘণ্টা, মে ০১, ২০২৫
এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।