চট্টগ্রাম: পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পেলেও জালিয়াতির মাধ্যমে ছেলেকে জিপিএ-৫ পাইয়ে দেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথ। ছেলের পরীক্ষার ফল জালিয়াতির ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় কারাগারে থাকা চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এর আগে ১৭ জুন চট্টগ্রাম চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মিজানুর রহমান ছেলের পরীক্ষার ফল জালিয়াতির ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সোমবার (৭ জুলাই) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব সিদ্দিক জোবায়েরের স্বাক্ষর করা এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নারায়ণ চন্দ্র নাথ তাঁর ছেলের পরীক্ষার ফলাফল জালিয়াতির মামলায় গত ১৭ জুন আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। তাই ১৭ জুন থেকে সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী তাঁকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো। সাময়িক বরখাস্তকালে তিনি বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা পাবেন।
চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের সচিব একেএম সামছু উদ্দিন আজাদ বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে এখনো চিঠি আসেনি। তবে, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব নারায়ণ চন্দ্র নাথকে সাময়িক বরখাস্ত করার বিষয়টি আমরা জেনেছি।
নারায়ণ চন্দ্র নাথ চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ও সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২৩ সালে সচিব থাকাকালে তার ছেলে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। ফলাফল প্রকাশিত হওয়ার পর জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। পরে বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। অভিযোগ ওঠার পর গত বছরের ৯ জুলাই তাকে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড থেকে মাউশি চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক পদে পদায়ন করা হয়।
অন্যদিকে গত বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) শৃঙ্খলা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব শতরূপা তালুকদারের সই করা নির্দেশনায় বলা হয়, তদন্তে নারায়ণ চন্দ্র নাথের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ অনুযায়ী মামলাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া ও ছেলের ফলাফল বাতিলের নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর আগে গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর তাঁকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।
জানা গেছে, গত ২১ জানুয়ারি জালিয়াতির মাধ্যমে ছেলেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগে অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র নাথসহ চারজনের বিরুদ্ধে নগরের পাঁচলাইশ থানায় মামলা হয়।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন- নারায়ণের ছেলে নক্ষত্র দেবনাথ, শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট কিবরিয়া মাসুদ খান ও সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুস্তফা কামরুল আখতার। শিক্ষা বোর্ডের সচিব ওই সময়ের সচিব অধ্যাপক একেএম সামছু উদ্দিন আজাদ বাদী হয়ে থানায় এ মামলা করেন।
ওই মামলায় হাইকোর্ট থেকে নেওয়া চার সপ্তাহের আগাম জামিনের মেয়াদ শেষে ১৭ জুন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন নারায়ণ চন্দ্র নাথ। শুনানি শেষে আদালত তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
বিই/পিডি/টিসি