ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

২৪ বছর ধরে মৃত্যুকূপে নওশাদ!

ইসমেত আরা, নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৪৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
২৪ বছর ধরে মৃত্যুকূপে নওশাদ! ছবি: সোহেল সরওয়ার/ বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: ভাবুনতো, মাটির মাঝে বিশাল একটি কূপে আছেন আপনি।   সেখানে আপনার সম্বল একটিমাত্র মোটরবাইক।

কূপের দেয়ালে সেই বাইক চালাচ্ছেন আপনি।   আর চালাতে চালাতে পৌঁছে গেলেন মাটি থেকে ৩০ ফুট শূণ্যে।
  কি কিছুটা হতচকিত হয়ে গেলেন তো? ভাবছেন এও কি সম্ভব?

দিনের পর দিন এ অসম্ভব কাজটিকে সম্ভব করে যাচ্ছেন নীলফামারীর নওশাদ। ছোটখাট গড়নের এ মানুষটিকে দেখলে প্রশ্ন জাগতে পারে সবকিছু ফেলে কেন এরকম ভয়ঙ্কর একটি কাজ করছেন তিনি।   উত্তর আসে নওশাদের মুখ থেকেই, ‘কিছুটা শখের বশে, কিছুটা পেটের দায়ে। ’

মৃত্যুকূপ বা গেম অব ডেঞ্জার নামে একটি বিপজ্জনক খেলার খেলুড়ে নওশাদ। বয়স ৪৮ পেরিয়েছে।   কিন্তু এ বয়সেও চমৎকার খেলছেন নওশাদ। নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে চলমান মাসব্যাপী বিজয় মেলা। রোববার মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় মৃত্যুকূপের খেলুড়ে নওশাদের সঙ্গে।   জানালেন, ২৪ বছর ধরে মৃত্যুকূপ নিয়েই আছেন তিনি।

শুরুটা হয়েছিল বন্ধুর অনুপ্রেরণায়।   গ্রামের মাঠে বড় গর্ত খুঁড়ে সেখানেই চালাতেন অনুশীলন।   খেলার কৌশল কিছুটা রপ্ত হওয়ার পর ১৪ বছর বয়সে জনসম্মুখে প্রথম নিজের প্রতিভা তুলে ধরেন।   কুড়িয়ে নেন দর্শকের প্রশংসা।   নিজের এলাকা ছাড়িয়ে নওশাদের নামডাক এভাবে ছড়িয়ে পড়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায়।

মাঝখানে ছিলেন ১০-১২ বছরের বিরতিতে।   এর মধ্যেই ড্রাইভিং পেশায় থেকে প্রাইভেট কার চালানো আয়ত্ত করে নেন।   এরপর পুরোদমে আবার শুরু। বাইসাইকেল দিয়ে শুরু করলেও এখন নওশাদ মৃত্যুকূপে দেখান মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কারের খেলা।

নওশাদ ভাষায়, ‘পুরো খেলাটি চলছে অনুশীলনের ওপর।   বাইসাইকেল দিয়ে শুরু করে এখন আমি কূপে প্রাইভেট কারের খেলা দেখাই।   প্রথম প্রথম ভয় লাগতো। এখন আর লাগে না। অভ্যাস হয়ে গেছে।   তবে পরিবারের লোকজন আমাকে নিয়ে কিছুটা আতঙ্কে থাকে। ’

চট্টগ্রামে প্রাইভেট কারের কূপ প্রথম তিনিই নিয়ে এসেছেন দাবি করে নওশাদ বলেন, চট্টগ্রামে সর্বপ্রথম প্রাইভেট কারের কূপ আমি চালাচ্ছি। এর আগে ছিলনা। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত ১০ থেকে ১৫ বার এসেছি খেলা দেখাতে। এছাড়া উত্তরবঙ্গের ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, পঞ্চগড়সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় দর্শককে খেলা দেখিয়েছি। বিজয় মেলায় দর্শকদের গত ৩ বছর ধরে খেলা দেখাচ্ছি।

ব্যক্তিগত জীবনে চার সন্তানের জনক নওশাদ।   বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন।   বাকী সন্তানদের পড়ালেখা করাচ্ছেন।   একমাত্র ছেলেকে এ পেশায় আনতে চান না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছি। স্বপ্ন দেখি সে বড় কিছু করবে।   তাকে এ পেশায় আনার কোন আগ্রহ আমার নেই। সে আগ্রহী হলেও আমি তাকে এ পেশায় আসতে নিষেধ করবো।  

এ পেশায় এখন মানসম্মান নেই উল্লেখ করে কিছুটা আক্ষেপের সুরে বলেন, মৃত্যুকূপ গ্রাম বাংলার একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা। আগে সার্কাসে এ ধরনের খেলা দেখানো হতো।   কিন্তু এ পেশায় এখন মানসম্মান নেই।   আগে ব্যবসাও ভালো হতো, কিন্তু এখন ব্যবসাও তেমন একটা ভালো হয়না।   তাই অনেকেই এ পেশা ছেড়ে চলে গেছে।

তারপরও নিজের কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট নওশাদ বলেন, এ খেলার আয় দিয়েই পরিবার চালাই।   কষ্ট তেমন একটা হয়না।   আর যখন কাজ থাকে না তখন ঘুরে বেড়াই।   এভাবেই চলছে জীবন।

মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দর্শকদের এভাবে আনন্দ দিয়ে যেতে চান মৃত্যুকূপের নওশাদ।   তিনি বলেন, দর্শকদের কাছ থেকে প্রচুর উৎসাহ পাই। দর্শকদের উৎসাহ না থাকলে ভালভাবে খেলতে পারতাম না। দর্শককে আনন্দ দিতে পারছি এটাই জীবনের সব থেকে বড় পাওয়া।  

‘এ খেলায় মাঝেমাঝে ছোটখাট দুর্ঘটনায় পড়তে হয়। তবে বড়কিছু এখনো বড় হয়নি। দর্শকের দোয়া থাকে তো তাই। দর্শকের দোয়া দিয়েই চলছে। শরীরে শক্তি থাকলে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দর্শকদের এভাবে আনন্দ ‍দিয়ে যেতে চাই। ’

বাংলাদেশ সময়: ০৯৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৮, ২০১৫
আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।