ঢাকা, সোমবার, ১৫ পৌষ ১৪৩১, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ফিরে দেখা ২০১৫

বড় স্বপ্নের বড় প্রকল্পে মনোযোগী সিডিএ

আল রাহমান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
বড় স্বপ্নের বড় প্রকল্পে মনোযোগী সিডিএ ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম (ফাইল ফটো)

চট্টগ্রাম: বড় স্বপ্নের বড় প্রকল্প নিয়ে বছরজুড়ে ব্যস্ত ছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। মুরাদপুর-লালখানবাজার পর্যন্ত আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভার, আউটার রিং রোড, কদমতলী ফ্লাইওভার, বায়েজিদ-ফৌজদারহাট সংযোগ সড়ক ইত্যাদি ছিল উল্লেখযোগ্য প্রকল্প।

এর মধ্যে কদমতলী ফ্লাইওভারটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না হলেও যান চলাচলের জন্য সম্প্রতি খুলে দেওয়া হয়। বাকিগুলোর কাজ চলমান রয়েছে।
  

এর মধ্যে আখতারুজ্জামান চৌধুরী ফ্লাইওভারের যৌক্তিকতা-প্রয়োজনীয়তা, নকশা পরিবর্তন ইত্যাদি নিয়ে শুরুতে আলোচনা-সমালোচনা, যুক্তি আর বিতর্কে বিভিন্ন মহল সরব থাকলেও ম্যাক্স-রেনকিন জেভি দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিচ্ছে কাজ। ফলে প্রতিদিনই দৃশ্যমান পরিবর্তন হচ্ছে প্রকল্প এলাকায়। ২০১০ সালের ২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ফ্লাইওভারের ভিত্তিস্থাপন এবং ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছিলেন।   

বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) ম্যাক্সের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার মুনির হোসাইন বাংলানিউজকে জানান, মুরাদপুর থেকে ওয়াসা জংশন পর্যন্ত ফ্লাইওভারের মোট কাজের ২৮ থেকে ২৯ ভাগ শেষ হয়েছে। বাকি কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ চালানো হচ্ছে। শুরুর দিকে সমস্যা সৃষ্টি করেছিল বৃষ্টি, এখন সমস্যা হচ্ছে উচ্চভোল্টের বিদ্যুতের লাইন ও খুঁটি এবং বিলবোর্ড। এগুলো অপসারণে সময়ক্ষেপণ হচ্ছে।

সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম গত ২২ ডিসেম্বর প্রকল্পটি পরিদর্শনে গেলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছিলেন, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মাটির নিচের কাজ প্রায় শেষ। এখন ‘ওয়াই’ আকারের পায়ার (স্তম্ভ) ঢালাই ও ৭৪৪টি গার্ডার জমানোর কাজ চলছে। ১৮টি গার্ডার তৈরিও হয়ে গেছে।        

মুরাদপুর-লালখানবাজার (ওয়াসা জংশন) পর্যন্ত ফ্লাইওভারে ৫৫০ কোটি টাকা খরচ হচ্ছে জানিয়ে সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, এ ফ্লাইওভার যখন বিমানবন্দর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে তখন আরও তিন হাজার কোটি টাকার কাজ হবে।

তবে সিডিএ চেয়ারম্যান ফ্লাইওভারের তুলনায় বেশি উচ্ছ্বসিত আউটার রিং রোড প্রকল্প নিয়ে। তার মতে, পতেঙ্গা থেকে ফৌজদারহাট পর্যন্ত ২০-২১ কিলোমিটার দীর্ঘ রিং রোডটি হবে ৩০ ফুট উঁচু। এ সড়কের নিচের দিকে (গোড়া) প্রশস্ততা হবে ৩০০ ফুট এবং উপরে থাকবে ৮৪ ফুট। চারলেনের এ রোডে থাকবে ১১টি স্লুইসগেট। ‍বাংলাদেশ সরকার ও জাইকার অর্থায়নে ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটি হবে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেলের জন্য এপাড়ের অ্যাপ্রোচ রোড।

এ প্রকল্পটি শুধু নগরীর ৩৭, ৩৮, ৩৯, ৪০ ও ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের ১৮-২০ লাখ মানুষকে জলোচ্ছ্বাস থেকেই রক্ষা করবে না একইসঙ্গে এলাকার চেহারা পাল্টে দেবে। রিং রোডকে সিইপিজেডের সঙ্গে সংযোগ করে দিচ্ছি। তাই ইপিজেড ও বন্দরের গাড়ি এ রোড দিয়ে চলাচল করতে পারবে। এতে নগরীতে যানজট যেমন হবে না তেমনি পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটানোও এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য। ৫ হাজার একর জায়গা আছে যেখানে পরিকল্পিত উপশহর হবে। প্রকল্পের অধীনে স্থানীয় ২ হাজারের বেশি জেলে পরিবারকে ১ কাঠা করে জমি দেওয়া এবং পতেঙ্গা সৈকতের ভাসমান দোকানগুলোকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সিডিএ’র আরেকটি যুগান্তকারী প্রকল্প বায়েজিদ বোস্তামি সড়ক থেকে ফৌজদারহাটের ঢাকা ট্রাংক রোড পর্যন্ত ৬ কিলোমিটারের বাইপাস সড়ক। প্রায় ১৭২ কোটি ৪৯ লাখ টাকার প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে কাপ্তাই, রাঙামাটি, হাটহাজারী, রাউজান, রাঙ্গুনিয়াসহ বড় একটি অঞ্চলের ঢাকামুখী গাড়ি মূল শহর এড়িয়ে চলাচল করতে পারবে। ফলে নগরীতে যানজট যেমন কমবে তেমনি পরিকল্পিত চট্টগ্রাম গড়ার কাজেও একধাপ অগ্রগতি হবে। বর্তমানে বায়েজিদ প্রান্তে নালা (ড্রেন) ও চারলেন সড়কের কাজ এবং ফৌজদারহাট প্রান্তে কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলছে।

বায়েজিদ-ফৌজদারহাট বাইপাসটি সদরঘাট সড়ক, শাহ আমানত সেতু সড়ক, অক্সিজেন-কুয়াইশ সড়ক ও বায়েজিদ বোস্তামি থেকে ঢাকা ট্রাংক রোড পর্যন্ত সংযোগ সড়কের মাধ্যমে আউটার রিং রোডের অংশ হিসেবে কাজ করবে।

এ প্রকল্পের অধীনে কাজগুলোর মধ্যে রয়েছে- ৬ কিলোমিটার সড়ক, ৯১৯ দশমিক ৭৮ কাঠা জমি অধিগ্রহণ, ৬০ হাজার ৮১২ দশমিক বর্গমিটার ক্লিনিং, ২ লাখ ৩ হাজার ৮৫৬ দশমিক ৬৬ ঘনমিটার সড়ক খনন, ১ লাখ ৪৩২ দশমিক ৮০ ঘনমিটার বাঁধের মাটি ভরাট, ৪ হাজার ৫৫০ বর্গমিটার রেলওভার ব্রিজ, ৬৫ রানিং মিটার রিটেইনিং ওয়াল, ৮টি বক্স কালভার্ট নির্মাণ, ৭টি কালভার্ট সম্প্রসারণ, ৭ হাজার ৮৭২ রানিং মিটার ড্রেন, ১১৫টি বিদ্যুৎ পোল অপসারণ ইত্যাদি।

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের সভাপতি ও ইস্ট ডেল্টা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য ড. মুহাম্মদ সিকান্দার খান বাংলানিউজকে বলেন, বড় স্বপ্নের বড় পরিকল্পনার চেয়ে চট্টগ্রামের টেকসই উন্নয়নের জন্য ১৯৯৫-২০১৫ পর্যন্ত ‘২০ সালা’ যে মাস্টারপ্ল্যান করা হয়েছিল তার পুনর্মূল্যায়ন (রিভিউ) করা উচিত। নয়তো উন্নয়ন হবে খাপছাড়া ও জনবিচ্ছিন্ন।

তিনি বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি), মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) ইত্যাদির শতভাগ বাস্তবায়ন শেষে উড়ালসেতুর মতো প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের যৌক্তিক মন্তব্য করে বলেন, ‘ভবন তৈরি করে সিঁড়ি বানানোর জায়গা খুঁজলে হবে না। ’

বাংলাদেশ সময়: ১৮২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
এআর/আইএসএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।