চট্টগ্রাম: দূরারোগ্য ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা চট্টগ্রামের আলোচিত বিচারক আব্দুর রশীদের জীবন আবারও সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে আছেন সততার জন্য আলোচিত এই বিচারক।
সিঙ্গাপুরে প্রথম দফা চিকিৎসার পর আশায় বুক বেঁধেছিলেন তার স্ত্রী বিচারক জান্নাতুল ফেরদৌস। পিতাকে সুস্থ অবস্থায় ফিরে পাবার স্বপ্ন দেখেছিল তার দুই সন্তান।
সিঙ্গাপুর থেকে বিচারক জান্নাতুল ফেরদৌস বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, আগে যেখান থেকে টিউমার অপসারণ করা হয়েছিল সেখানে আরও একটি আগের চেয়ে বড় টিউমার ধরা পড়েছে। আগামী শুক্রবারের মধ্যে অপারেশন করতে না পারলে টিউমারটি যে কোন মুহুর্তে বিস্ফোরিত হবে। এতে আব্দুর রশীদকে বাঁচানো আর সম্ভব না-ও হতে পারে।
‘জুন মাসে ব্রেইনে একটা অপারেশন হয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে আরেকটা অপারেশন করতে গেলে বড় কোন অঘটন ঘটে যাবে কি-না সেই আশংকা করছি। তারপরও তো অপারেশন করতে হবে। কিন্তু এতগুলো টাকা আমি কোথায় পাব ? আমরা সামান্য সরকারি চাকরিজীবী। আমার পক্ষে তো এত টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব নয়। ’
‘শেষ পর্যন্ত টাকার জন্য হয়তো আমার স্বামীকে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হবে। ’ কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন জান্নাতুল ফেরদৌস।
জান্নাতুল ফেরদৌসের বরাত দিয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মনতোষ বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, জরুরি ভিত্তিতে অপারেশনের জন্য ৪৩ লাখ টাকা লাগবে। আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে এর আগেও টাকা দেয়া হয়েছে। আমরা এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করছি। একজন সৎ বিচারককে বাঁচানোর জন্য সমিতিসহ সর্বস্তরের আইনজীবী এবং দেশের বিত্তবান নাগরিকদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি।
বিচারক আব্দুর রশীদের জন্য সহযোগিতা চেয়ে রোববার আইনজীবীদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি পাঠানোর কথাও জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট মনতোষ বড়ুয়া।
আব্দুর রশীদ চট্টগ্রামের দ্বিতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক হিসেবে বর্তমানে কর্মরত আছেন। তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস চট্টগ্রামের প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক।
গত এপ্রিলে চট্টগ্রামে নিজ বাসায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন আব্দুর রশীদ। দ্রুত তাকে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর থেকে দীর্ঘদিন কোমায় ছিলেন বিচারক আব্দুর রশীদ।
জুন মাসে অপারেশন করে টিউমার অপসারণের পর গত অক্টোবরে সিঙ্গাপুরে নিয়মিত চেকআপের জন্য নেয়া হয় আব্দুর রশীদকে। চিকিৎসক পরীক্ষা করে আরও একটি টিউমার হওয়ার আশংকা করেছিলেন।
গত ৯ ডিসেম্বর বিচারক আব্দুর রশীদকে আবারও সিঙ্গাপুরে নেয়া হয়। সেখানে দুই দফা এম আর আই করার পর চিকিৎসক জানিয়েছেন, আগের চেয়ে বড় আকারে টিউমার হয়েছে। দ্রুত অপসারণ করা না হলে সেটি আরও বড় হয়ে বিস্ফোরিত হবে।
একদিকে স্বামীর জীবনের ঝুঁকি, অন্যদিকে দ্রুত অপারেশনের জন্য বিপুল পরিমাণ টাকার সংস্থান করতে হবে-সব মিলিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস।
চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, দুজন বিচারক দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম আদালতে আছেন। ব্যক্তিজীবনে তারা খুবই সৎ এবং ন্যায়বিচারের জন্য প্রশংসিত। আমরা আগেও আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতা করেছিলাম। এবারও নির্দিষ্ট কিছু আইনজীবীর তালিকা করে তাদের কাছ থেকে সাহায্য নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এছাড়া সর্বস্তরের বিত্তবান মানুষকে এই সৎ বিচারকের পাশে দাঁড়ানোর জন্যও জেলা আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আহ্বান জানাচ্ছি।
এদিকে চট্টগ্রাম আদালতে আলোচিত ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় এই বিচারকের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও আলোচনা চলছে। জেষ্ঠ্য আইনজীবীদের অনেকেই ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বিচারকের জন্য সাহায্য কামনা করেছেন।
সাহায্য পাঠাবার ঠিকানা:
জান্নাতুল ফেরদৌস
মহানগর অতিরিক্ত দায়রা জজ- ১, চট্টগ্রাম
সঞ্চয়ী হিসাব নং- ১০০৭০০২১৩০৭০৭
সোনালী ব্যাংক, কোর্টহিল শাখা,
চট্টগ্রাম।
বাংলাদেশ সময়: ১৯২২ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
আরডিজি/টিসি