কলকাতা: বিদেশে নিজের সবচেয়ে বড় পরিচয় পাসপোর্ট। অনেক সময় নানা দুর্ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংযুক্ত বইটি হারিয়ে ফেলেন অনেকেই।
ভ্রমণসহ নানা কারণে এ মুহূর্তে প্রায় ৩৫ হাজার বাংলাদেশি অবস্থান করছেন কলকাতা তথা ভারতে। পাসপোর্ট হারিয়ে গেলে কী করতে হবে, জানেন না তাদের সিংহভাগ। কলকাতায় অবস্থানরত বহু বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংযুক্ত বইটি হারিয়ে গেলে কী করতে হবে তারা জানেন না। অনেকে নাকি ভাবেনই না কী করা দরকার।
অনেকে মনে করেন, পাসপোর্ট হারালেও যদি ফটোকপি তাকে, সেটি ব্যবহার করে দেশে ফেরা যায়। কেউ কেউ জেনে নিয়েছেন, বইটি হারালে স্থানীয় বাংলাদেশ দূতাবাসে যোগাযোগ করার কথা। কিন্তু পাসপোর্ট হারালে আদৌ কি করতে হবে, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
কলকাতার বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের ভিসা প্রধান আলমাস হোসেন জানিয়েছেন, পাসপোর্ট হারালে প্রথমে স্থানীয় থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করতে হবে। এরপর যোগাযোগ করতে হবে বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনে। এ সময় পাসপোর্ট সাইজের ছবি, পাসপোর্টের ফটোকপিসহ একটি আবেদন ফর্ম পূরণ করতে হবে। সঙ্গে জমা দিতে হবে নির্ধারিত ফি।
জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট পেতে দুই হাজার রুপি জমা দিতে হবে। তবে দুয়েকদিন সময় দিলে এক হাজার রুপি ফি নেন তারা। সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর যাত্রীকে ট্রাভেল পারমিট দেওয়া হয়। সেটি নিয়ে বর্ডার পার হয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারবেন ভারতে আসা বাংলাদেশিরা।
অনেক সময় দেখা যায়, কেউ কেউ তার সমস্ত তথ্য বিবরণী হারিয়ে ফেলেন। দেশে ফিরতে তাদের আগের প্রক্রিয়ায় যেতে হবে। তবে, এখানে মানতে হবে আরও কিছু নিয়ম। যিনি প্রয়োজনীয় সব কিছু হারিয়ে ফেলবেন, তাকে ইমিগ্রেশন সার্টিফিকেট তুলতে হবে। কবে কোন রুট ধরে ভারতে প্রবেশ করেছেন সেটির সত্যতা প্রমাণ পত্র দিতে হবে। যদি সড়ক পথে (বেনাপোল-পেট্রাপোল) ভারতে ঢোকা হয় তখন পেট্রাপোল অংশের ইমিগ্রেশনে গিয়ে কর্মকর্তাদের কাছে পাসপোর্টসহ সব তথ্য হারিয়ে ফেলার বিষয়টি জানাতে হবে। ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা সার্ভার দেখে পাসপোর্ট নম্বরসহ একটি সার্টিফিকেট দেবেন। সেটি ডেপুটি হাইকমিশনে জমা করে ট্রাভেল পারমিট নিয়ে দেশে ফিরতে হবে।
ভিসা প্রধান আলমাস হোসেন বলেন, এমন পরিস্থিতির শিকার লোকের সংখ্যা কম। তবে প্রতিনিয়ত তাদের এসব দেখতে হয়। পাসপোর্ট হারিয়ে ফেলা ছাড়াও আরেকটি বড় সমস্যা ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তবে, সঠিক পদ্ধতি মানলে দেশে ফেরার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হয় না বলে জানান এ কর্মকর্তা।
ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার ঘটনা যদিও কম। তারপরও এ পরিস্থিতির মুখোমুখি হন ডেপুটি হাই কমিশনের কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, ছয় মাসে বা বছরে দুয়েকটি কেস তারা পান। পাসপোর্ট নিয়ে কাউকে যাতে হয়রানি না হতে হয়, তারা ভুক্তভোগীদের পাঠিয়ে দেন কলকাতার রবীন্দ্রসদন সংলগ্ন ফরেন রেজিস্ট্রেশন অফিসে। সেখানে অনলাইনে ফরম ফিল-আপ করে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার জরিমানা দিতে হয়। জরিমানা কত, সেটি জানায় ফরেন রেজিস্ট্রেশন অফিস। সব প্রক্রিয়া সঠিক উপায়ে মেনে চললে খুব সহজে দেশে ফেরার ট্রাভেল পারমিট পাওয়া যায়।
তবে, এসব ক্ষেত্রে কে ভারতের কোথায় অবস্থান করছেন তার নথি থাকতে হবে। কোনো হোটেলে উঠলে সে হোটেলের বিল পেপার (সি ফরম) জমা দিতে হবে বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনে। তারপরই বাকি প্রক্রিয়া শুরু হয়।
বাংলাদেশ ডেপুটি হাই কমিশনের ভিসা প্রধান বলেন, ভারতে আসার আগে সঠিকভাবে কাগজপত্র গুছিয়ে রাখলে কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। প্রয়োজনে মেইলে বা পরিচিত কারও কাছে প্রয়োজনীয় কাগজ ফটোকপি করে দেওয়া উচিত। এটি শুধু ভারতেই করতে হবে তা নয়। যেকোনো দেশ ভ্রমণের সময় এ নিয়ম মানা উচিৎ ভ্রমণকারীদের।
বাংলাদেশ সময়: ২০৩০ ঘণ্টা, ২ জানুয়ারি, ২০২৩
ভিএস/এমজে