আগরতলা (ত্রিপুরা): কংগ্রেস নেতা সুদীপ রায় বর্মণ এবং তার ভাইয়ের হাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক কর্নেলের নিগৃহীত হবার ঘটনা নতুন মোড় নিল।
গত মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর কোর কমান্ডার।
উল্লেখ্য, গত রোববার রাতে শহরের পশ্চিম থানায় কর্নেল ভি কে যাদব কংগ্রেস সভাপতি সুদীপ রায় বর্মণ এবং তার ভাই সন্দ্বীপ রায় বর্মণের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন।
জুলাই মাসের ২৭ তারিখ যখন এ ঘটনা ঘটে তখন রাজধানীর পশ্চিম থানায় অভিযোগ এবং পাল্টা অভিযোগ দায়ের হয়েছিল।
এদিকে, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কোর কমান্ডারের বৈঠকের কথা সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত মঙ্গলবার সেনাবাহিনীর কোর কমান্ডার জেনারেল সহনী মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সঙ্গে দেখা করে রাজ্যে সেনাবাহিনীর বর্তমান অবস্থা নিয়ে কথা বলেন। আধঘণ্টার মতো দু’জনের মধ্যে কথাবার্তা হয়।
আগরতলা শহরে প্রকাশ্যে একজন কর্নেলকে মারধরের ঘটনায় তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে এ ঘটনার তদন্ত করতে দাবি জানানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে।
উল্লেখ্য, মারধরের ঘটনাটি ঘটে এ বছর জুলাই মাসে। তখন ঘটনার শিকার কর্নেল ভি কে যাদব অভিযোগ দায়ের করলেও পরে তা উঠিয়ে নিতে বাধ্য হন। এরপর কর্নেলকে এখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
প্রায় আড়াই মাস পর রোববার তিনি বিকালে রাজ্যে ফেরেন। রাতে পশ্চিম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
জানা গেছে, ভারতীয় সেনাবাহিনী গোটা বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। যার কারণে কর্নেল ভি কে যাদবকে আবার ফিরিয়ে এনে অভিযোগ দায়ের করানো হয়েছে। তারা বিষয়টিকে হালকাভাবে ছেড়ে দিতে রাজি নয়।
রাজ্য কংগ্রেসের অনেক নেতাও এ ঘটনায় খুব ক্ষুব্ধ। তারা কংগ্রেস হাই কমান্ডকে এ বিষয়ে চিঠিও দিয়েছিলেন। জানানো হয়েছিল রাষ্ট্রপতিকেও। যিনি দেশের সবক`টি বাহিনীর প্রধান। কর্নেলকে আক্রমণ করার ঘটনায় কংগ্রেসের মধ্য থেকে আওয়াজ তোলার মধ্যে অন্যতম হলেন বিধায়ক সুবল ভৌমিক।
যার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সেই সুদীপ রায় বর্মণ নিজেও বিধায়ক। গত পনের বছর ধরে আগরতলা বিধানসভা কেন্দ্রের প্রতিনিধিত্ব করছেন তিনি।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর কর্নেল ভি কে যাদব অভিযোগ করেছেন, তিনি ২৭ জুলাই সন্দ্বীপ রায় বর্মণের দোকানে যান। সেখানে তার কিছু কাজ ছিল। দোকানেই একটি বিষয় নিয়ে সন্দ্বীপ রায় বর্মণের সাথে তার কথা কাটাকাটি হয়। এরপর সন্দ্বীপ রায় বর্মণ তাকে টেনে হিঁচড়ে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যান।
সেই বাড়িতে সন্দ্বীপ রায় বর্মণ এবং রাজ্য কংগ্রেস সভাপতি তথা বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ তাকে মারধর করেন। এ ঘটনায় এই সিনিয়র সেনা কর্মকর্তা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করেন।
প্রসঙ্গত, কোনো রাজনৈতিক দলের প্রথম সারির নেতার হাতে এভাবে সেনাবাহিনীর আধিকারিকের নিগৃহীত হবার ঘটনা রাজ্যে কখনোই ঘটেনি।
এদিকে, সুদীপ বর্মণের পক্ষ থেকে থানায় এক অভিযোগ দায়ের করে বলা হয়েছিল, সেনাবাহিনীর ঐ কর্নেল তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন।
গোটা ঘটনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কিছুটা রাজনৈতিক টানাপড়েন চলছে রাজ্যে।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৩ ঘণ্টা, ১৭ অক্টোবর, ২০১২
সম্পাদনা: আহ্সান কবীর, আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]