কলকাতা : পশ্চিমবঙ্গে পুরনো জমি নীতি বহাল থাকছে। অর্থাৎ শিল্পমহল যতই দাবিই করুক না কেন , রাজ্যে জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন যে বাতিল করা হবে না, ফের তা স্পষ্ট ভাষায় তা জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
এদিকে শিল্পমহলের বক্তব্য, সরকার জমি অধিগ্রহণ না-করলে এবং জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন রদ না-করলে তাদের পক্ষে শিল্পগড়া প্রায় অসম্ভব। একাধিক বণিকসভা সে কথা রাজ্য মন্ত্রিসভার শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে শুরু করে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর কানেও তুলেছেন।
মহাকরণ সূত্রের খবর, বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনা করে শিল্পমহলের এই চাহিদা যে মেটানো দরকার, এমন দাবি মৃদু ভাবে হলেও সরকারের ভিতর থেকেই উঠতে শুরু করেছে।
নতুন সরকারের জমি নীতির জেরে রাজ্যে কার্যত কোনও নতুন শিল্পের দেখা নেই।
মুখ্যমন্ত্রী যে নিজের অবস্থানে অনড়, সেটা এ দিন নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের অনুষ্ঠানে জানিয়ে দিলেন । শিল্পপতিদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনাদের তো অনেক টাকা আছে। জমি কিনে নিন। কে বারণ করেছে। ” সরকার জমি অধিগ্রহণ না-করলেও শিল্প আসছে বলেও দাবি মমতার।
তাঁর জমিনীতির সমালোচনা করায় এ দিন সংবাদমাধ্যমকেও তুলোধোনা করেছেন মমতা। তিনি বলেন, “মিডিয়ার একটি অংশ ক্রমাগত মিথ্যা বলে যাচ্ছে। বলছে, ওয়াকফ সম্পত্তি দিতে হবে। জমির ঊর্ধ্বসীমা তুলে দিতে হবে।
আমি বলেছি, এ সব করব না। আমি বুদ্ধ নই, সিপিএম নই, বিজেপি নই, কংগ্রেস নই। তুমি দোষ করেছ বলে আমি করব?” সংবাদমাধ্যমকে হুমকি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “এখনও কিছু করিনি। যদি করতাম, সব ক’টা জেলে থাকত। কিচ্ছু করিনি। সৌজন্য মানে কিন্তু দুর্বলতা নয়। ”
এরআগে মহাকরণে তাঁর সঙ্গে শিল্পায়ন নিয়ে আলোচনা করতে এসেছিলেন শিল্পপতি সঞ্জীব গোয়েঙ্কা এবং হর্ষ নেওটিয়া। দিল্লির শিল্প বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে বিনিয়োগ টানার কাজে সহায়তা করতে সঞ্জীবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গড়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
হর্ষের তাঁকে সাহায্য করার কথা। মহাকরণ সূত্রের খবর, ফেব্রুয়ারি মাসে মুম্বইয়ে লগ্নিকারীদের সঙ্গে দিল্লির ধাঁচে বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী। তার প্রস্তুতি এবং রাজ্যে বিনিয়োগ টানার বিষয়ে এ দিন কথা হয়েছে। বৈঠকে ছিলেন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রও।
নির্মাণ শিল্পে বিনিয়োগ টানতে মমতা যে কমিটি গড়েছেন, তার মাথায় বসানো হয়েছে অমিতবাবুকেই। তবে দিল্লিতে মমতার শিল্প বৈঠক তেমন আশানুরূপ হয়নি বলেই মনে করছে শিল্পমহলের একাংশ।
তাদের মতে, বৈঠকে যে শিল্পপতিরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁরা কেউই সেই অর্থে প্রথম সারির নন। মুকেশ অম্বানী, রতন টাটাদের ডাকার প্রয়োজন বোধ করেনি রাজ্য, বৈঠকের পরে জানিয়েছিলেন শিল্পমন্ত্রী। বৈঠকে লগ্নিকারীদের কোনও নতুন আশার বাণীও শোনাতে পারেননি মুখ্যমন্ত্রী।
এই পরিস্থিতিতে মুম্বাইয়ের শিল্প বৈঠকে আসার জন্য শিল্পপতিদের বার্তা দিতে রাজ্য সরকার হলদিয়ার ‘বেঙ্গল লিডস’ সম্মেলনকে বেছে নিচ্ছে বলে মহাকরণ সূত্রে খবর। সঞ্জীব এবং হর্ষের সঙ্গে এ দিন এই সম্মেলন নিয়েই কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
প্রাথমিক ভাবে ঠিক ছিল ১৭ থেকে ১৯ জানুয়ারি এই সম্মেলন হবে। কিন্তু শিল্পমন্ত্রী এ দিন জানান, ‘বেঙ্গল লিডস’ হবে ১৫-১৭ জানুয়ারি। মুখ্যমন্ত্রীর এর উদ্বোধন করবেন।
গত বছর বিপুল টাকা খরচ করে ‘বেঙ্গল লিডস’-এর আসর বসেছিল মিলন মেলা প্রাঙ্গণে। তিন দিনের সেই অনুষ্ঠানে শিল্পের বিভিন্ন বিষয়ে সেমিনার হয়েছিল। কিন্তু শ্রোতার সংখ্যা ছিল নামমাত্র।
এ বার এবিজি-কাণ্ডের পর সে দিক থেকে নজর ঘোরাতেই হলদিয়ায় এই সম্মেলন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে প্রশাসনের একাংশ। পার্থবাবুর অবশ্য দাবি, হলদিয়াতে লগ্নি টানার জন্যই এই পরিকল্পনা।
বাংলাদেশ সময় : ১৫৪৪ ঘন্টা, ডিসেম্বর ২৫, ২০১২
বাপ্পী/সম্পাদনা: সুকুমার সরকার, কো-অর্ডিনেশন এডিটর