নয়াদিল্লি: ভারতের বিহারের রাজ্য বিজেপি সভাপতি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিতিশ কুমার ও নরেন্দ্র মোদির বিরোধ বেশ জমেছে। বিহার ও গুজরাটের দুই মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধ ও যার প্রভাব আগামী দিনে এনডিএ জোটে পড়তে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্তমানে বিহারের বিজেপি সভাপতি সি পি ঠাকুর। ভূমিহার ওই নেতা মোদি ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। তাঁর মেয়াদ শেষ হতে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে লোকসভা নির্বাচনের আগে বিহারে বিজেপির ভিত শক্ত করতে নরেন্দ্র মোদিকে দিয়ে একাধিক জনসভা করার পরিকল্পনা নিয়েছেন তিনি।
দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে তিনি জানিয়েছেন, বিহারের বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে মোদীর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। তিনি এসে জনসভা করলে লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যে বিজেপির শক্তিবৃদ্ধি হবে।
বিজেপি সভাপতির এই পরিকল্পনায় বেজায় চটেছেন নিতিশ। মোদি ঘনিষ্ঠতার কারণে ঠাকুরের সঙ্গে নীতীশের প্রথম থেকেই সুসম্পর্ক নেই।
নিতিশ অনেক বেশি ভরসা করেন উপমুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেপি নেতা সুশীল মোদীকে। নিজের সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক ধরে রাখতে মরিয়া নিতিশ প্রথম থেকেই তার রাজ্যে মোদির প্রচারে আপত্তি জানিয়ে এসেছেন।
গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব চাইলেও বিহারে ভোট প্রচারে আসতে পারেননি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী। সম্প্রতি জাতীয় উন্নয়ন পর্ষদের বৈঠকেও দুই নেতা একে অপরকে দেখে এড়িয়ে যান।
এই পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ নিতিশ ইতিমধ্যে ঠাকুরের নামে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে নালিশ জানিয়েছেন।
দল জানিয়েছে, শুধু অসন্তোষ জানানোই নয়, সি পি ঠাকুর যাতে সভাপতি পদে পুনর্নির্বাচিত না হন, সে জন্যও সক্রিয় হয়েছেন নিতিশ। সুশীল মোদির মাধ্যমে ওই পদে এখন মঙ্গল পাণ্ডেকে বসাতে চাইছেন তিনি। সম্প্রতি পাণ্ডেকে বিহার বিধান পরিষদের সদস্য করেছেন তিনি।
এ ছাড়াও তালিকায় নাম রয়েছে বিজেপি সাংসদ রাধামোহন সিংহেরও। বিজেপি সূত্রের খবর, নিতিশ ইতিমধ্যেই পাণ্ডের পক্ষে সমর্থনও চেয়েছেন অরুণ জেটলির কাছেও। নিতিশের ইচ্ছায় পাণ্ডের পক্ষে মুখ খুলেছেন সুশীল মোদীও। শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে তিনি যুক্তিও হাজির করেছেন-পাণ্ডে ব্রাহ্মণ নেতা। তিনি ওই পদে এলে ব্রাহ্মণ তথা উচ্চবর্ণের কাছে বার্তা যাবে।
সি পি ঠাকুরও নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর মাধ্যমে তিনি নিজের পুনর্নির্বাচন নিশ্চিত করতে চাইছেন। সি পি ঠাকুর নেতৃত্বকে জানিয়েছেন, তাকে সরালে ভূমিহার সমাজের কাছে নেতিবাচক বার্তা যাবে। তা ছাড়া দলের শক্তি বৃদ্ধি করার জন্য মোদিকে বিহারে আনতে চাইছেন তিনি। কারণ জেডিইউ নেতৃত্বের একাংশ আগামী লোকসভা নির্বাচনে একলা চলো নীতি নেওয়ার পক্ষে।
একলা চলো নীতিতে হাঁটতে হলে রাজ্যে নিতিশকে চাপে রাখতে নরেন্দ্র মোদি অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে বলে মনে করছেন ঠাকুররা।
এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বিজেপি সভাপতি নিতিন গড়কড়ি। তিনি সি পি ঠাকুরকে পুনর্নির্বাচিত করলে নিতিশের চটার প্রবল আশঙ্কা। যার প্রভাবে ফাটল ধরতে পারে এনডিএ জোটেও। অন্য দিকে সি পি ঠাকুরকে সরালে ক্ষুব্ধ হবেন নরেন্দ্র মোদি। দু’পক্ষের এই মন কষাকষির মধ্যে গড়কড়ি কী সিদ্ধান্ত নেন, সেটাই এখন দেখার।
বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৪, ২০১৩
সম্পাদনা: শরিফুল ইসলাম, নিউজরুম এডিটর, [email protected]